বুলায়ে ডিয়া : সেনেগাল ফুটবলের নায়ক

খেলা ডেস্ক


নভেম্বর ৩০, ২০২২
০৩:০৬ অপরাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ৩০, ২০২২
০৩:০৬ অপরাহ্ন



বুলায়ে ডিয়া : সেনেগাল ফুটবলের নায়ক

বিশ্বকাপ শুরুর আগে চোটের কারণে যখন সেনেগালের দল থেকে ছিটকে পড়েন সাদিও মানে তখন সেনেগালের ভক্তরা ভেবেছিলো তাদের বিশ্বকাপ যুদ্ধ এখানেই শেষ। গ্রুপ পর্ব থেকে বেশি দূর এগিয়ে যাওয়ার আশা আর থাকল না সেনেগালের। এই সেনেগালের জন্য নায়ক হয়ে আবির্ভাব ঘটল বুলায়ে ডিয়ার।

গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচ নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে ২-০ গোলে হেরে যায় সেনেগাল। এর ফলে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার পথ অনেকা কঠিন হয়ে যায়। তাই স্বাগতিক কাতারের বিপক্ষে জয়টা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

গ্রুপ ‘এ’-তে কাতারের বিপক্ষে ম্যাচে সেনেগাল ৩-১ গোলে জয় পায়। যার মধ্যে একটি গোল আসে বুলায়ে ডিয়ার পা থেকে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা আমার প্রথম বিশ্বকাপ এবং আমি আসরে একটি গোল করতে পেরে গর্বিত।’

সেনেগালের এই স্ট্রাইকার বুলায়ে ডিয়ার এটি প্রথম বিশ্বকাপ। আফ্রিকান এই ফুটবলারের গল্পটা আর আট-দশটা তরুণ ফুটবলারের মত না। অনন্য গল্প।
বিশ্বকাপের আসরে সেনেগালের নায়ক বনে যাওয়া ডিয়ার জন্য এই গন্তব্যে পৌঁছানো সহজ ছিল না। ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন বাতিটা বারবারই নিভু নিভু হয়েছে, কিন্তু ডিয়ার অধ্যবসায়ী মন হাল না ছেড়ে সেই স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছিল।

বারো বছর বয়সে বাবার সাথে সেন্ট এটেইন যাচ্ছিলেন ক্লাবে ‘ভর্তি পরীক্ষা’ দিতে। পথের মধ্যে গাড়ি নষ্ট হয়ে আর যাওয়া হল না ডিয়ার। তিন বছর পর লিয়নে চেষ্টা করলেন, কিন্তু তারাও তাঁকে বাছাই করলো না। তারপরে, ওয়েলশ ক্লাব রেক্সহ্যামের সাথে একটি ট্রায়াল খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে ব্যর্থ হয়ে যায়।

নিজের অতীতের সেই অভিজ্ঞতা মনে করে বুলায়ে ডিয়া বলেন, ‘আমাকে কিছু সময়ের জন্য ফুটবলটা ছেড়েই দিতে হয়েছিল। তখন আমার পরিবারের ভরণ-পোষণে সাহায্য করতে জীবিকার্জন প্রয়োজন ছিল। তখন আমাকে কাজ শুরু করতে হয়েছিল।’

তারপর ফুটবল ছেড়ে ডিয়া ইলেকট্রিশিয়ান বনে যান, জীবিকার তাগিদে, পেটের দায়ে। তিনি স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘আমি একজন ইলেকট্রিশিয়ান ছিলাম। আমি সত্যিই বিল্ডিং সাইটে কাজ করতে পছন্দ করতাম, এমনকি শীতকালেও কাজকে উপভোগ করতাম।’

তাছাড়া খাবার ডেলিভারির কাজও করেছেন এই ফুটবলার। ঠিক যখনই বুলায়ে ডিয়া জীবনে ফুটবলের সাথে সম্পর্কের ইতি টেনে তার ফুটবল বুটকে তুলে রাখতে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই প্লাস্টিকস ভ্যালি এফসিতে সুযোগ জুটে যায় তাঁর। এরপর তিনি চতুর্থ বিভাগে খেলতে জুরা সুদে চলে যান।

যেখানে তিনি তাঁর এজেন্ট ফ্রেডেরিক গুয়েরার সাথে পরিচিত হন। তাঁরা একটি ম্যাকডোনাল্ডস-এ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। কিছুকাল পরেই বুলায়ে ডিয়ারিমস সাবসিডিয়ারিতে সুযোগ পেয়ে যান। ডিয়ার ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে তাঁর এজেন্ট গুয়েরা বলেন, ‘ডিয়া রাস্তা থেকে এসেছে, তাই সে বাকিদের চেয়ে বেশি ক্ষুধার্ত।’
ফ্রান্সে জন্মগ্রহণ করলেও বুলায়ে ডিয়া সেনেগালের হয়েই আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্যারিয়ার শুরুর সিদ্ধান্ত নেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘সেনেগাল আমার বাবা-মায়ের দেশ এবং আমার নিজেরও। আমি সেনেগালের জার্সিটি গায়ে জড়াতে পেরে গর্বিত।’

২০০২ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে এসে চমক দেখিয়েছিল সেনেগাল। হারিয়ে দিয়েছিল সেবারের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে। শুধু এটুকুই নয়, সেবার কোয়ার্টার ফাইনালেও পৌঁছে গিয়েছিল আফ্রিকার দেশটি। এরপর অবশ্য বিশ্বকাপে সেনেগাল–চমক আর দেখা যায়নি।

লম্বা সময় পর ২০১৮ সালে বিশ্বকাপে খেললেও পেরোনো হয়নি গ্রুপ পর্বের বাধা। তবে কাতারে এসে আবার চমক দেখাল সেনেগাল। বাঁচামরার ম্যাচে ইকুয়েডরকে ২–১ গোলে হারিয়ে ২০ বছর পর আবার শেষ ষোলোর টিকিট পেল তারা।

বুলায়ে ডিয়া বলেন, ‘এখানে, এই পর্যন্ত আসতে আমার অনেক সময় লেগেছে। এই তো তিন বা চার বছর আগেও আমি অপেশাদার ফুটবলার হিসেবে খেলছিলাম।’
ডিয়ার এই শেষ বাক্যটিই ইঙ্গিত দেয় হাল না ছাড়া ডিয়া কতটা বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়েছেন। ভাগ্যিস হাল ছাড়েননি, নইলে বিশ্বআসরে সেনেগালের নায়ক হতেন কিভাবে!

এনএম/০২