নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে প্রথমবার প্রস্তাব পাস

সিলেট মিরর ডেস্ক


ডিসেম্বর ২২, ২০২২
০৯:২৮ অপরাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ২২, ২০২২
০৯:২৮ অপরাহ্ন



নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে প্রথমবার প্রস্তাব পাস

প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে। স্থানীয় সময় বুধবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভায় মিয়ানমারের বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, জরুরি অবস্থা, বন্দিমুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। সিদ্ধান্তটির ওপর ভোট আহ্বান করা হলে তা ১২-০ ভোটে অনুমোদিত হয়। ভোটাভুটি পর্বে এই প্রস্তাবনার বিপক্ষে কোনো সদস্য ভোট অথবা ভেটো প্রদান করেনি। তবে চীন, ভারত ও রাশিয়া ভোটদানে বিরত ছিল।

ভোটদান শেষে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফ্রান্স, মেপিকো, গ্যাবন এবং নরওয়ে তাদের বক্তব্যে সিদ্ধান্তটিতে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি অন্তর্ভুক্তিকরণের প্রশংসা করে এই সমস্যা সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদের জোরালো ভূমিকার দাবি জানায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বক্তব্যে সিদ্ধান্তটি উত্থাপন করার জন্য যুক্তরাজ্যকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে।

সংশ্নিষ্টরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তটি রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানের প্রতি জাতিসংঘের সবচেয়ে ক্ষমতাধর অঙ্গটির শক্তিশালী সমর্থনেরই বহিঃপ্রকাশ। রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটসহ অন্যান্য বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে গৃহীত সিদ্ধান্ত রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আরও সুসংহত করতে সহায়ক হবে।

মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালে ৮ লাখ রোহিঙ্গাসহ এ-পর্যন্ত ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। মানবিক কারণে অস্থায়ীভাবে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে শুরু থেকেই তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে বিশ্ব নেতাদের কাছে জোরালো দাবি উত্থাপন করে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই প্রস্তাবনা পাস হওয়ায় রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হয়ে গেল। একই সঙ্গে এটি রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত ও স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশের অব্যাহত প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী ও ত্বরান্বিত করবে।

এ সিদ্ধান্তটিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়, নিরাপত্তা ও মানবিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করা হয়। রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে তাদের নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবসনে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মিয়ানমারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদ। মিয়ানমারের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা যে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ বাসভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবসনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলবে, সে বিষয়টি দৃঢ়ভাবে তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া সমস্যা সমাধানে আসিয়ানের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ২০২১ সালে গৃহীত পাঁচ দফা ঐকমত্যের দ্রুত ও পূর্ণ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। পাশাপাশি এর বাস্তবায়নে জাতিসংঘের কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হবে কিনা সে বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব ও মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূতকে আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রতিবেদন পেশ করার জন্য বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে দেশের স্বার্থ সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন। বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত নিরাপত্তা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী ও অস্থায়ী বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রয়োজনীয় দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো যাতে রেজুলেশনে অন্তর্ভুক্ত হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

প্রস্তাবনাটির পেনহোল্ডার (মূল স্পন্সর) পরিষদের অন্যতম স্থায়ী সদস্য যুক্তরাজ্য। বিগত তিন মাস ধরে রেজুলেশনটির আলাপ-আলোচনা শেষে এটি বুধবার নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত হয়। নিরাপত্তা পরিষদের ডিসেম্বরের সভাপতি ভারত এবং তাদের সভাপতি থাকাকালীন সময়েই প্রস্তাবটি নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত হলো। ফলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বহুপক্ষীয় কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টায় সফল বাংলাদেশ।


এএফ/০২