নতুন প্রত্যাশার নতুন বছর শুরু

সিলেট মিরর ডেস্ক


জানুয়ারি ০১, ২০২৩
০৮:৩১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ০১, ২০২৩
০৮:৩৩ পূর্বাহ্ন



নতুন প্রত্যাশার নতুন বছর শুরু


আজ পয়লা জানুয়ারি, খ্রিস্টীয় ২০২৩ সালের প্রথম দিন। আরও একটি বছর মহাকালের গর্ভে আশ্রয় নিল। ২০২২ সাল পেছনে ফেলে আমরা পা রাখলাম ২০২৩ সালে। নতুন বছরের প্রথম দিনে আমরা বিগত বছরের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাব মেলাতে চেষ্টা করি— অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে অগ্রগতির পথে ধাবিত হওয়ার জন্য এটা অপরিহার্য।

২০২২ সালের হিসাব-নিকাশ ও মূল্যায়নে আমরা বলতে পারি, শতাব্দীর ইতিহাসে এই বছরটি একটি মাইলফলক বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই পরাশক্তি রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের ‘অসম যুদ্ধ’ এবং এ যুদ্ধের ফলে যে বৈশ্বিক মন্দা, তাতে বিদায়ী বছরটাতে গোটা বিশ্ব শুনতে পেয়েছে দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি। কোনো কোনো দেশের অর্থনীতি চলে গেছে খাদের কিনারে, কোনো কোনো দেশ হয়েছে দেউলিয়া। বিশ্বব্যাপী সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে গেছে। আমেরিকা, বৃটেন, রাশিয়া, কানাডার মতো উন্নত দেশগুলোও অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে। অপেক্ষাকৃত দুর্বল অর্থনীতির দেশগুলো বিদায়ী বছরটি পার করেছে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থার মধ্যে। নজিরবিহীন মুদ্রাস্ফীতির কারণে দুর্ভিক্ষের অগ্রিম পদধ্বনি শুনেছে বিশ্ববাসী। বেজে উঠেছে সতর্ক সাইরেন।

তবে সংকট ও সমস্যা যত আকস্মিক ও কঠিন হোক না কেন, ব্যর্থতাকে সাফল্যের আলোয় উদ্ভাসিত করার জন্য নতুন বছরে মানব জাতির শক্তি ও সামর্থকে পূর্ণমাত্রায় নিয়োজিত করতে হবে— এটাই মানব জাতির অঙ্গীকার ও শপথ হওয়া উচিৎ। কেননা মানব জাতি হেরে গেলে, ইতিহাস হেরে যাবে, হেরে যাবে সভ্যতা এবং সময়।

বলতে দ্বিধা নেই, আমাদের জাতীয় জীবনে অনেক স্বপ্ন-প্রত্যাশাই অর্জিত হয়েছে বিদায়ী বছরটাতে। কিন্তু এ নিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলার সুযোগ নেই। অনেক অর্জনের উল্টা পিঠে অনেক সংকটও তৈরি হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের কষ্ট-দুর্ভোগ বেড়েছে। নতুন বছরটিতে এসব দুর্ভোগ দূর হবে— এই প্রত্যাশা সকলের।

ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে স্বাভাবিক নিয়মেই আসে নতুন বছর। আধুনিক গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ও জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে জানুয়ারির ১ থেকে শুরু হয় নতুন বছর। ইংরেজি নতুন বছর উদযাপনের ধারণাটি আসে খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দে। তখন মেসোপটেমিয় সভ্যতার (বর্তমান ইরাক) লোকেরা নতুন বছর উদযাপন শুরু করে। তারা তাদের নিজস্ব গণনা বছরের প্রথম দিন নববর্ষ উদযাপন করত।

আর রোমে নতুন বছর পালনের প্রচলন শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব ১৫৩ সালে। পরে খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ অব্দে সম্রাট জুলিয়াস সিজার একটি নতুন বর্ষপঞ্জিকার প্রচলন করেন, যা জুলিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত।

রোমে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের অন্তর্গত বছরের প্রথম দিনটি জানুস দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়। জানুস হলেন প্রবেশপথ বা সূচনার দেবতা। তার নাম অনুসারেই বছরের প্রথম মাসের নাম জানুয়ারি করা হয়।

এসব অবশ্য যিশুখ্রিস্টের জন্মের আগের কথা। যিশুখ্রিস্টের জন্মের পর তার জন্মের বছর গণনা করে ১৫৮২ সালে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি এই ক্যালেন্ডারের নতুন সংস্কার করেন। যা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত। বর্তমানে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই কার্যত দিনপঞ্জি হিসেবে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হয়।

আনুষ্ঠানিকভাবে নিউ ইয়ার পালন শুরু হয় ১৯ শতক থেকে। নতুন বছরের আগের দিন অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর হচ্ছে নিউ ইয়ার ইভ। এদিন নতুন বছরের আগমনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ। বিভিন্ন দেশে নতুন বছরের প্রথম দিনটি পাবলিক হলিডে। প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা এক মিনিট থেকেই শুরু হয় নতুন বছর উদযাপনের উন্মাদনা।

যেহেতু প্রাচীন রোমানদের হাতেই এই ক্যালেন্ডারের সৃষ্টি আর তাই ইংরেজী বছরের বারটি মাসের বেশির ভাগই নামকরণ করা হয়েছে রোমান দেবতা বা সম্রাটের নামানুসারে।

যেমন জানুয়ারি মাসটির নাম রোমান দেবতা জানুসের নামানুসারে, ফেব্রুয়ারি নামটি ল্যাটিন শব্দ ‘ফেব্রুয়া’ থেকে নেওয়া হয়েছে, যার অর্থ পবিত্র, মার্চ নামটি রোমানদের যুদ্ধ দেবতা মার্সের নামানুসারে, এপ্রিল নামটি ল্যাটিন শব্দ এপ্রিলিসের নামানুসারে, যার অর্থ খোলা, মে নামটি বসন্তের দেবী মায়াসের নামানুসারে, জুন মাসটি বিবাহ এবং নারী কল্যাণের দেবী জুনোর নামানুসারে, জুলাই নামটি রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের নামানুসারে, আগস্ট নামটি জুলিয়াস সিজারের পুত্র অগাস্টাস সিজারের নামানুসারে, সেপ্টেম্বর নামটি ল্যাটিন সপ্তম সংখ্যা সেপ্টেমের নামানুসারে, অক্টোবর নামটি ল্যাটিন অষ্টম সংখ্যা অক্টোর নামানুসারে, নভেম্বর নামটি ল্যাটিন নবম সংখ্যা নভেমের নামানুসারে এবং ডিসেম্বর নামটি ল্যাটিন দশম সংখ্যা ডিসেমের নামানুসারে।

তবে যেভাবে আসুক, যেখান থেকেই আসুক শিবরাম চক্রবর্তীই বোধ হয় সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য এবং প্রণিধানযোগ্য কথাটি বলে গেছেন নতুন বছর স্পর্কে। তার ভাষ্যমতে— ‘বহু বছরের কঠিন পরীক্ষার পর আমি এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে “নতুন বছর”, “নতুন বছর” বলে খুব হইচই করার কিস্যু নেই। যখনই “নতুন বছর” এসেছে, এক বছরের বেশি টেকেনি।’


এএফ/০১