সড়ক দুর্ঘটনায় ছেলে, মেয়ে, জামাতা, নাতিকে হারালেন, স্বামী–সন্তান হাসপাতালে

সিলেট মিরর ডেস্ক


জানুয়ারি ০৭, ২০২৩
০৮:১৬ অপরাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ০৭, ২০২৩
১১:০০ অপরাহ্ন



সড়ক দুর্ঘটনায় ছেলে, মেয়ে, জামাতা, নাতিকে হারালেন, স্বামী–সন্তান হাসপাতালে


‘পুত গেল, ঝি গেল, ঝির সব গেল। আমার কপালো সুখ সইল না। আল্লাহ, এই শোক সইতাম কিলা।’ সড়ক দুর্ঘটনায় ছেলে, মেয়ে, জামাতা আর নাতনিকে হারিয়ে বিলাপ করে এ কথা বলছিলেন সালাতুন বেগম (৫০)। আজ শনিবার সকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের হবিগঞ্জের নোয়াপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনায় ওই চারজনসহ পাঁচজনের প্রাণহানি ঘটে।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের মাদনগর গ্রামে সালাতুন বেগমদের বাড়ি। আজ বিকেল চারটার দিকে গিয়ে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, লোকে লোকারণ্য। স্বজন হারানোর মাতম চলছে। প্রতিবেশীসহ আত্মীয়স্বজন সালাতুন বেগমকে সান্ত্বনা দেওয়ার করছেন। বাড়ির উঠানে দুর্ঘটনায় নিহত তিনজনের লাশ রাখা।

সালাতুন বেগমের আত্মীয় এক নারী চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘আইজ বাড়ির মানুষ খুশিতে থাকার কথা আছিল। নতুন ধানর চাউল কুটাইয়া গুঁড়ি বানাইয়া রাখা হইছিল। পিঠা-হান্দেশ অইব। খুশি আর রইল না। কেমনে কোনো মা-বাবা এইটা সহ্য করবে।’

দুর্ঘটনায় বেঁচে যান প্রবাসী রাজু আহমেদের চাচাতো ভাই নিশাত আহমদ (১৮)। শরীরের কিছু স্থানে তাঁর আঘাত লেগেছে। নিশাত বলেন, ‘খুব কুয়াশা পড়ছিল। রাস্তায় সামনের কোনো গাড়ি দেখা যাচ্ছিল না। হঠাৎ ধাক্কার আওয়াজ পাই। এরপর আর কিছু মনে নাই। পরে শুনেছি বালুবোঝাই ট্রাকের ভেতর থেকে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। বালুর ফাঁক পড়ে যাওয়ায় বেঁচে যাই।’

স্বজনেরা জানান, সালাতুন বেগমের বড় ছেলে রাজু আহমদ (২৮) মালয়েশিয়া থেকে আজ শনিবার ভোরে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। স্বজনেরা সেখান থেকে তাঁকে মাইক্রোবাসে করে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। সকাল ছয়টার দিকে হবিগঞ্জের নোয়াপাড়া এলাকায় পৌঁছালে বিপরীতমুখী বালুবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে তাঁদের মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। একই সময় পেছন দিক থেকে আসা পিকআপ ভ্যান মাইক্রোবাসটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে সালাতুনের ছেলে শিহাব আহমদ (১৩), মেয়ে সাবিহা আক্তার (২১), সাবিহার স্বামী পার্শ্ববর্তী কমলগঞ্জ উপজেলার ভেড়াছড়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুস সালাম (৩২), সাবিহাদের দুই বছর বয়সী মেয়ে হাবিবা ও মাইক্রোবাসের চালক হাজীপুর ইউনিয়নের আলীনগর গ্রামের বাসিন্দা সাদির মিয়া (২৮) মারা যান। গুরুতর আহত অবস্থায় সালাতুনের স্বামী নুরুল ইসলাম ও ছেলে রাজু আহমদকে সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

স্বজনেরা আরও জানান, নুরুল হক ও সালাতুন বেগম দম্পতির তিন ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে রাজু আহমদ মালয়েশিয়া ও মেজ ছেলে সাজু ফ্রান্সে থাকেন। ছোট ছেলে শিহাব স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত।  

হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মনিরুজ্জামান হেলাল বলেন, এর আগে কোনো দুর্ঘটনায় এলাকার এক পরিবারের এত প্রাণহানি হয়নি। এ জন্য পুরো এলাকার মানুষ শোকাহত। তিনি বলেন, মাদানগরে শুধু শিহাবের লাশ দাফন করা হয়েছে। সাবিহা, সালাম ও হাবিবার লাশ জানাজার পর তাঁদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর গাড়িচালক সাদিরের লাশও বাড়িতে দাফন করা হয়ে গেছে।


এএফ/০১