গুলিস্তানে বিস্ফোরণ : আরও দুইজনের মরদেহ উদ্ধার, নিহত বেড়ে ১৯

সিলেট মিরর ডেস্ক


মার্চ ০৮, ২০২৩
১০:৩০ অপরাহ্ন


আপডেট : মার্চ ০৯, ২০২৩
০৮:৪৯ অপরাহ্ন



গুলিস্তানে বিস্ফোরণ : আরও দুইজনের মরদেহ উদ্ধার, নিহত বেড়ে ১৯

রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ জনে।


বুধবার (৮ মার্চ) বিকেল ৪টার দিকে দ্বিতীয় দিনের অভিযান শুরুর পর প্রথমে ভবনটির নিচতলা থেকে সুমন নামে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেন উদ্ধারকারীরা। পরে আরও একজনের মরদেহ পাওয়া যায়।


ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ডগ স্কোয়াড টিম ভেতরে দুটি লাশ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে তারপর অভিযান শুরু হয়েছে। ভেতরে ভারী জিনিসপত্র যা ছিল সেগুলো সরিয়ে লাশদুটো পাওয়া যায়। নিহত দুজনই পুরুষ।


বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত ভবনটি এখনও ঝুঁকিপূর্ণ। উদ্ধার অভিযান চালাতে গেলে ভবনটি যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে, সেই আশঙ্কায় দিনভর প্রস্তুতি নিয়ে অবশেষে বিকেল ৪টার দিকে উদ্ধার অভিযানে নামে ফায়ার সার্ভিস। সংস্থাটি এ ক্ষেত্রে রাজউক ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিচ্ছে। পাশাপাশি এ ব্যাপারে একটি বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করা হয়। অবশেষে তাদের পরামর্শের ভিত্তিতে এখন চলছে উদ্ধার অভিযান।


এদিকে র‌্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের প্রধান মেজর মশিউর রহমান জানান ‘আমরা প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে পেয়েছি, ভবনের বিস্ফোরণ হয়েছে বেসমেন্ট থেকে। এটা স্বাভাবিক কোনও বিস্ফোরণ নয়, এটি একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ। এটি গ্যাস লিকেজের কারণে হয়ে থাকতে পারে, কিংবা অন্য কোনোভাবে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। তবে এ ঘটনা এসি থেকে ঘটার আশঙ্কা খুবই কম।’


বুধবার (৮ মার্চ) ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে উদ্ধার কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এসব কথা বলেন তিনি।


তিনি বলেন, ‘আমাদের র‌্যাবের ডগ স্কোয়াড ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এখানে উপস্থিত আছে। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ও রাজউকের বিশেষজ্ঞরা আছেন। আমরা সবাই সমন্বয় করে কাজ করছি।’


মেজর মশিউর বলেন, ‘আমরা এখান থেকে স্যাম্পল কালেকশন করেছি। তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠিয়েছি। ঘটনাটা নিয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করছি এখানে কী ধরনের বিস্ফোরণ হয়েছে। আদৌ গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে নাকি অন্য কোনও কিছু জড়িত, তা-ও জানার চেষ্টা করছি।’


মশিউর রহমান বলেন, ‘ভবনের ভেতরে কেউ আটকা পড়েছে কিনা, তা জানার জন্য আমাদের র‌্যাবের ডগ স্কোয়াড টিম ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। যদি কেউ থেকে থাকে, জীবিত অথবা মৃত, তাহলে তাদের বের করে আনার জন্য আমাদের ডগ স্কোয়াড টিম এবং ফায়ার সার্ভিসের বাহিনী সহায়তা করবে।’


অপরদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বিস্ফোরণের পর সিদ্দিকবাজারের ওই ভবনের বেজমেন্ট ও নিচতলায় যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। ভবনটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ ইমারতে পরিণত হয়েছে। ‌ভবনের ওপরে চাপ পড়লে সেটি ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ‌এজন্য স্টেবল (স্থিতিশীল) অবস্থা তৈরি করে এরপর অভিযান শুরু করা হবে। ‌


বুধবার (৮ মার্চ) দুপুরে ঢাকার সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।


সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণগুলোর কারণ খুঁজতে আপাতত বিদেশি কোনও বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন নেই বলেও জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, ফায়ার সার্ভিস এবং বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটসহ স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি ঢাকা ও চট্টগ্রামে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিস্ফোরণের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত তৈরি করতে সক্ষম। এর জন্য বিদেশি কারও সহযোগিতার প্রয়োজন নেই।


তিনি বলেন, ঘটনাগুলো নিয়ে যথেষ্ট মতামত দেওয়ার জন্য আমাদের বিশেষজ্ঞরা আছেন। তারা ব্যর্থ হলে আমরা বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ দিতে পারি। তবে এ মুহূর্তে সেটার প্রয়োজন হবে না।


মন্ত্রী বলেন, কী কারণে ঘটনা ঘটেছে তা তদন্তের পর জানা যাবে। কেউ যেন ইমারতের অনুমোদন ছাড়া ভবন নির্মাণ না করে। যারা অনুমতি না নিয়ে ভবন নির্মাণ করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ‌‌


তদন্তের ফলাফলে পক্ষপাতিত্বের কোনও সুযোগ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, তদন্ত ফলাফল পক্ষপাতিত্ব হবে এমনটা আমরা ভাবতেও পারি না। তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে কিনা জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান আশ্বস্ত করেন যে তদন্ত শেষ হলে ফলাফল প্রকাশের সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।


এসময় সঙ্গে থাকা ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন উদ্ধার অভিযান নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, সঠিক নিয়ম মেনে ভবন নির্মাণ নিশ্চিত করা রাজউক এবং সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব। এখন তারা বিষয়টি কতটা অনুসরণ করেছে তা নিয়ে প্রশ্ন করা যেতে পারে। তবে এটি দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা তা তদন্ত শেষ হলেই বলা যাবে।


এসই/ ০২