জার্মানিতে ৩ বছর বসবাসেই নাগরিকত্বের সুযোগ, নতুন আইন অনুমোদন

সিলেট মিরর ডেস্ক


আগস্ট ২৬, ২০২৩
০৪:১৯ পূর্বাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ২৬, ২০২৩
০৪:১৯ পূর্বাহ্ন



জার্মানিতে ৩ বছর বসবাসেই নাগরিকত্বের সুযোগ, নতুন আইন অনুমোদন

জার্মানিতে নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে দেশটির মন্ত্রিসভা৷ পার্লামেন্টে পাস হলে কার্যকর হবে এই আইন৷ এতে অভিবাসীদের নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ আগের চেয়ে সুগম হবে৷
অভিবাসীদের জন্য জার্মানিকে আকর্ষণীয় করে তুলতে চায় দেশটির জোট সরকার৷ এ জন্য আইন পরিবর্তন করে নাগরিক হওয়ার পথ সহজ করার উদ্যোগ নিয়েছে জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ গত ২৩ আগস্ট মন্ত্রিসভা এই আইনের খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে৷
যে কারণে পরিবর্তন
দক্ষ কর্মী সংকটে থাকা জার্মানির আইন যথেষ্ট আধুনিক ও অভিবাসীদের জন্য আকর্ষণীয় নয় বলে অভিযোগ করে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা৷ খসড়া আইন অনুমোদনদের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেজা বলেন, ‘আমরা একটি আধুনিক অভিবাসন আইন প্রণয়ন করছি যা আমাদের বৈচিত্র্যপূর্ণ সমাজ এবং আধুনিক রাষ্ট্রের জন্য ন্যায়সঙ্গত৷ জোট সরকাররে জন্য নতুন নাগরিকত্ব আইনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার৷’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে জার্মানিতে বসবাসকারী অভিবাসীদের ১৪ শতাংশের জার্মান পাসপোর্ট নেই৷ এর মধ্যে ১০ বছর বা তার বেশি সময় বসবাস করছেন এমন অভিবাসী ৫৩ লাখ৷
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জার্মানির জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বছরের পর বছর বসবাসের পরও সমাজের মূল স্রোতে যুক্ত হতে পারছেন না৷ এ কারণে সমাজে তাঁরা জার্মান নাগরিকদের মতো অংশগ্রহণ এবং অবদান রাখার সুযোগ পাচ্ছেন না৷ 
খসড়া আইনে জার্মানির নাগরিকত্বের নিয়মে বড় ধরনের কয়েকটি পরিবর্তন আনা হয়েছে৷ সুযোগ থাকছে দ্বৈত নাগরিকত্বের, কমছে জার্মানিতে বসবাসের সময়ের শর্ত৷ আইনের উল্লেখযোগ্য দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে:
দ্বৈত নাগরিকত্ব
বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, ইইউ ও সুইজারল্যান্ডের নাগরিক ছাড়া দ্বৈত পাসপোর্টের অনুমোদন দেয় না জার্মানি৷ খসড়া আইন পাস হলে এই শর্তের পরিবর্তন হবে৷ সে ক্ষেত্রে বিদেশিরা নিজ দেশের নাগরিকত্ব বজায় রেখেও জার্মানির পাসপোর্ট গ্রহণ করতে পারবেন৷ এ জন্য তাঁকে অবশ্য অন্য শর্তগুলো পূরণ করতে হবে৷
নাগরিকত্ব পাওয়ার সময় হ্রাস নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের সময়সীমা আট বছর থেকে কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে৷ অর্থাৎ, অভিবাসীরা বৈধভাবে পাঁচ বছর বসবাস করলে জার্মানির পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন৷ কেউ যথাযথভাবে ইন্টিগ্রেটেড বা জার্মানির সমাজে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করলে তিন বছর বসবাসের পরই আবেদন করতে পারবেন৷
কাজে অসাধারণ দক্ষতা দেখালে কিংবা স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করলে, জার্মান ভাষার ওপর ভালো দখল থাকলে এবং স্বাধীনভাবে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য আয় রোজগার করলে সেগুলো বিশেষ যোগ্যতা বলে বিবেচনা করা হবে৷
অভিবাসী শিশু
অভিবাসী বাবা-মায়ের জার্মানিতে জন্ম নেওয়া শিশুরা শর্তহীনভাবে নাগরিকত্ব পাবে৷ চাইলে বাবা–মায়ের দেশের নাগরিকত্বও তারা রাখতে পারবে৷ তবে বাবা-মায়ের যেকোনো একজন বৈধভাবে জার্মানিতে পাঁচ বছর বসবাস করলে নাগরিকত্বের এই যোগ্যতা অর্জন করবে তারা৷
বহুবিবাহ
জার্মানির আইন অনুযায়ী, বহুবিবাহ এবং একাধিক স্ত্রী রাখা নিষিদ্ধ৷ এই ক্ষেত্রে নাগরিকত্বের জন্য তিনি বিবেচিত হবেন না৷ এ ছাড়া নারী ও পুরুষের সমানাধিকারের প্রতি অশ্রদ্ধা দেখালে সেই ব্যক্তিও নাগরিকত্ব পাবেন না৷
যারা নাগরিকত্ব পাবেন না
জার্মানিতে কেউ নাগরিক হতে হলে তাঁকে দেশটির মুক্ত সমাজের মূল্যবোধের প্রতি দায়বদ্ধ হতে হবে৷ সব মানুষের প্রতি সাম্য ও সম্মান বজায় রাখতে হবে৷ কেউ এই মূল্যবোধের অধিকারী না হলে বা এর বিরুদ্ধাচরণ করলে তিনি নাগরিকত্বের যোগ্য হবেন না৷
বিশেষ করে ইহুদি বিদ্বেষ, বর্ণবাদ ও মানবতাবিরোধী আচরণ জার্মানির মৌলিক আইনের পরিপন্থী৷ অতীতে কেউ এমন আচরণ করলে তিনি নাগরিকত্বের জন্য বিবেচিত হবেন না৷ এ ছাড়া রাষ্ট্রের সামাজিক সুরক্ষা ভাতাপ্রাপ্তরাও নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন না৷
রাজনীতির অধিকার
নাগরিকত্বপ্রাপ্তরা সমভাবে দেশটির রাজনীতিতে অংশ নিতে পারবেন৷ তাঁরা সমঅধিকার পাচ্ছেন কিনা রাষ্ট্র তার দেখভাল করবে৷ নতুন নাগরিকত্বপ্রাপ্তদের যাতে একটি উৎসবের মাধ্যমে এই সংক্রান্ত সনদ হস্তান্তর করা হয়, তার প্রস্তাব রাখা হয়েছে খসড়া আইনে৷
নাগরিকত্ব পাওয়ার হার
বর্তমান আইনে জার্মানিতে দীর্ঘদিন বসবাস করা অভিবাসীদের জন্যও নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল৷ ২০২২ সালে জার্মান পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন ১ লাখ ৬৮ হাজার ৫৪৫ জন৷ এই সংখ্যা অন্তত ১০ বছর ধরে বসবাস করেন এমন অভিবাসীর মাত্র ৩ দশমিক ১ শতাংশ৷
এ ছাড়া ইউরোপের গড় হারের তুলনায় জার্মানিতে নাগরিকত্ব পাওয়ার হার বেশ কম৷ অন্য দেশের নাগরিকত্ব বা বিদ্যমান পাসপোর্ট ত্যাগ করার বিধান এর অন্যতম কারণ বলে মনে করছে জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ নতুন আইনে তাই দ্বৈত নাগরিকত্ব রাখার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়েছে৷

সূত্র: ডয়েচে ভেলে
আরসি-০১