হারের হ্যাটট্রিক ঠেকানোর মিশন আজ

খেলা ডেস্ক


অক্টোবর ১৬, ২০২৩
১২:২৬ অপরাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ১৬, ২০২৩
১২:২৭ অপরাহ্ন



হারের হ্যাটট্রিক ঠেকানোর মিশন আজ


দিন তিনেক আগেই শঙ্কার কথা শুনিয়েছেন মাইকেল ক্লার্ক, বাজে ব্যাটিং-বোলিং আর হতশ্রী ফিল্ডিংয়ের দিকে আঙুল তুলে সমালোচনাও করেছেন। ভবিষ্যদ্বাণী করে বিশ্বকাপজয়ী বলেছেন, এভাবে চললে উপমহাদেশের দলগুলোর কাছেও হারবে অস্ট্রেলিয়া।

আজ সোমবার (১৬ অক্টোবর) সেই শঙ্কা মিলিয়ে দিতে পারে শ্রীলঙ্কা। আহত সিংহরা যদি গা ঝাড়া দিয়ে ওঠেন তাহলে অজিদের দেখতে হবে হারের হ্যাটট্রিক। উল্টো ফলে বিশ্বকাপ মিশনে বড় ধাক্কা আসবে লঙ্কানদেরও।

ভারতের লক্ষ্নৌয়ের একানা স্টেডিয়ামে আরেকটি গরম আবহাওয়ার দিনে কামিন্স-কুশলদের ম্যাচটি উত্তাপ ছড়াবে বটে! দুদলের যেমন হারের বৃত্ত ভাঙার মিশন, তেমনি বিশ্বকাপে টিকে থাকারও। দুপুর আড়াইটায় শুরু হওয়া ম্যাচটিকে তাই বাঁচা-মরার বললেও বেশি কিছু বলা হবে না।

যাচ্ছেতাই শুরুই বটে! বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে কথাটি যেমন যায়, তেমনি একইভাবে প্রযোজ্য শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রেও। লঙ্কানদের চোখরাঙানিটা বোধহয় একটু বেশি। একে তো বোলিংয়ের দুর্দশা, তার ওপর আবারও হারানোর সুর। চোটে ভোগা এশিয়ার দলটি পায়নি তাদের সেরা কিছু বোলারকে। তার ঘাটতি মাঠে বেশ টেরও পাচ্ছে। ব্যাটিংয়ে যুৎসই লড়াইটা চালালেও ছন্নছাড়া বোলিংয়ে সব খুইয়ে আসছে দল। বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার সামনে তাদের বোলিংটাই বড় চ্যালেঞ্জের হতে যাচ্ছে। কারণ মাথিশা পাথিরানা ফর্মে নেই। 

খাপছাড়া বোলিং এবং হতশ্রী লাইন-লেন্থ লঙ্কানদের হতাশ করছে। তাছাড়া বোলারদের মধ্যে স্পিনাররাও নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক করতে পারছেন না। মহেশ থিকসানা, দুনিথ ভেল্লালাগেরা ধুঁকছেন। রান দিচ্ছেন, ম্যাচ হারছে শ্রীলঙ্কা। হারের বৃত্ত ভাঙার মিশনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বোলিংটাই। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিশ্বকাপে হার দিয়ে শুরুর পর পাকিস্তানের বিপক্ষেও বাজেভাবে হেরেছে শ্রীলঙ্কা। লঙ্কান বোলারদের তুলাধুনা করে ৪২৮ রান তুলেছিল প্রোটিয়ারা। পাকিস্তানকে ৩৪৫ টার্গেট বেঁধে দিয়েও হারতে হয়েছিল পাথিরানাদের। তার ওপর এবার তারা হারিয়ে বসেছে নিয়মিত অধিনায়ক দাসুন শানাকাকে। চোটের কারণে এই ম্যাচ তো বটে, বিশ্বকাপ থেকেই ছিটকে গেছেন শানাকা।

বিশ্বকাপে একই অবস্থায় আছেন অজিরাও। হারের বৃত্ত যেন কাটছেই না। টানা দুই হারে দুঃস্বপ্নের শুরু পাওয়া অস্ট্রেলিয়া পয়েন্ট টেবিলেরও তলানির দিকে। বাজে ব্যাটিং-বোলিং আর হতশ্রী ফিল্ডিংয়ে এখনও জয়হীন থাকা অস্ট্রেলিয়া যদিও আশাবাদী ফেরার মন্ত্রে। সাবেক বিশ্বকাপজয়ী ক্লার্ক হতাশার কথা শোনালেও আশার বাণী শুনিয়েছেন মিচেল মার্শ।

অস্ট্রেলিয়ার তারকা ব্যাটারের মতে, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে ভালো খেলে অজি দল। সেই ভালো খেলার মঞ্চ হিসেবে একানা মাঠকে বেছে নিতে চায় অস্ট্রেলিয়া, ‘দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে অস্ট্রেলিয়া নিজেদের সেরা ক্রিকেটটাই খেলে। আসরে এখন আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। অনেক বেশি দেরি হওয়ার আগেই ঘুরে দাঁড়াতে হবে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সত্যিই ভালো পারফরম্যান্স করতে হবে।’

বিশ্বকাপের ইতিহাসও অবশ্য লঙ্কানদের বিপক্ষে কথা বলছে, ১৯৯৬ বিশ্বকাপের পর অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সাতবারের দেখায় কোনোবারই জয় পায়নি শ্রীলঙ্কা। আরেকটু বিস্তারিত পরিসংখ্যানে গেলেও লঙ্কানদের হতাশা বাড়বে বরং কমবে না। বৈশ্বিক আসরে এখন পর্যন্ত ১১ বার মুখোমুখি হয়ে মোটে দুবার জিতেছে এশিয়ার দলটি। বিপরীতে আটবার বাজিমাত করেছে অস্ট্রেলিয়া। এর মধ্যে ২০০৭ বিশ্বকাপ ফাইনালেও লঙ্কানদের হারিয়েছিল অজিরা। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ওভারঅল হিসেবেও অনেক পিছিয়ে শ্রীলঙ্কা। ১০৩ ম্যাচে জিতেছে ৩৬ বার, যার বেশিরভাগ নিজেদের মাটিতে। অন্যদিকে অজিদের ঝুলিতে আছে ৬৩ জয়। পরিত্যক্ত হয় চারটি ম্যাচ। তবে পরিসংখ্যানে বিশ্বাসী নন আহত সিংহরা। জয়ের ধারায় তথা বিশ্বকাপে টিকে থাকার ম্যাচে অজি-বধ করেই ফিরতে চান কুশল মেন্ডিসরা।

পাকিস্তানের বিপক্ষে নামার আগে লঙ্কান ব্যাটার সাদিরা সামারাবিক্রমা অবশ্য প্রত্যয়ের কথা শুনিয়েছিলেন, ‘জয়ের জন্যই মাঠে নামি। কখনও কখনও খারাপ দিন আসে। টানা ১৪ থেকে ১৫ ম্যাচ জিতেছি। অন্যদিকে টানা তিনটি ম্যাচ হেরেছি। সুতরাং জয়ের রাস্তায় ফিরে আসবই।’ পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের রাস্তায় ফেরা না হলেও অজিদের বিপক্ষে এশিয়ার গরম কন্ডিশনে আশা বাঁধছেন সাদিরারা। সবশেষ পাঁচ ম্যাচের চারটিতে হারা লঙ্কানদের আশা দেখাতে পারে অজিদের বিপক্ষে সবশেষ সিরিজ জয়। ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ৩-২ ব্যবধানে জিতেছিল শ্রীলঙ্কা। এবার হারের হ্যাটট্রিক রোখার চ্যালেঞ্জ।

পাকিস্তানের বিপক্ষে চোট পাওয়া শানাকা ছিটকে যাওয়ায় অধিনায়কের আর্মব্যান্ড উঠেছে কুশল মেন্ডিসের হাতে। শানাকার জায়গায় আজ দলে আসতে পারেন চামিকা করুনারত্নে। অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে নামতে পারে অস্ট্রেলিয়া। নতুন অধিনায়ক মেন্ডিসের নেতৃত্বে লঙ্কানরা ঘুরে দাঁড়াতে পারে কি না, এখন সেটাই দেখার। অন্যদিকে বড় আসরে অজিরা দ্রুত পাততাড়ি গুটাবে কি না, সেই উত্তরেরও অপেক্ষা।



এএফ/০৬