আগ্রাসী বেয়ারস্টো উড়ন্ত ডি কক

খেলা ডেস্ক


অক্টোবর ২১, ২০২৩
০১:১৩ অপরাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ২১, ২০২৩
০১:১৩ অপরাহ্ন



আগ্রাসী বেয়ারস্টো উড়ন্ত ডি কক

জানুয়ারির ৫, ১৯৯৮। ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারের একটি গ্রাম মার্টন কাম গ্রাফটন। সেখানেই নির্জন একটি বাড়িতে থাকতেন সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার ডেভিড বেয়ারস্টো। সেখানেই একদিন গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। বাবার ঝুলতে থাকা লাশ দেখতে পেয়েছিল আট বছরের ছেলে। পরদিন আবার স্ত্রী জেনেত বেয়ারস্টোর জন্মদিন ছিল। তবে ক্যানসার আক্রান্ত জেনেত সেদিন সন্তানদের পাঠিয়েছিলেন স্কুলে। বলেছিলেন লড়াইটা নিজেদেরই করতে হবে। বড় ছেলেটা মায়ের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। আজ তিনি ইংলিশ ক্রিকেটের বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান। দলের অন্যতম ব্যাটিং ভরসা এই ক্রিকেটারের নাম জনি বেয়ারস্টো।

স্বর্ণকেশ আর নীল চোখের জন্য ডেভিড বেয়ারস্টোকে সহজেই অন্যদের চেয়ে আলাদা করা যেত। প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের জন্যও ব্যতিক্রম ছিলেন। বাবার সবকিছুই পেয়েছেন জনি বেয়ারস্টোও। জনির ব্যাটিং ধরনও তাকে আলাদা করে তুলেছে। যার ক্যারিয়ারের দিকে তাকালে প্রথমেই ভেসে আসবে টেস্ট ম্যাচের একটি ইনিংসের কথা। সেটা গত বছরের জুলাইয়ের ঘটনা। বাজবল ক্রিকেট তখন সবে আলোড়ন তুলেছে। এমন সময় বার্মিংহামে ভারত গেছে টেস্ট ম্যাচ খেলতে। চতুর্থ ইনিংসে স্বাগতিকদের জাসপ্রিত বুমরারা ৩৭৮ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছিলেন। চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে আগ্রাসী মেজাজের ক্রিকেটে ১৪৫ বলে খেলেন ১১৪ রানের অপরাজিত এক ইনিংস। সেটাই দলকে এনে দিয়েছিল ৭ উইকেটের জয়। আগের ইনিংসে ১০৬ করে জিতে নিয়েছিলেন ম্যাচসেরার পুরস্কার।

সাদাপোশাকের ক্রিকেটেই যিনি এমন আগ্রাসী ব্যাট চালান, তাকে ছাড়া তো ইংল্যান্ডের ওয়ানডে বিশ্বকাপের দল কল্পনাই করা যায় না। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৪ ম্যাচ খেলে যার রান ৬১৪, তিনটি ফিফটি ও দুটি সেঞ্চুরিতে যার গড় ৪৪.২১। তার কাছে দলের বাড়তি প্রত্যাশা তো থাকবেই। ২০১১ সালে এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হলেও দলে নিয়মিত হয়েছেন ২০১৬ সাল থেকে। খেলতে পারেননি ২০১৫ বিশ্বকাপেও। তবে ঘরের মাঠে ২০১৯ বিশ্বকাপে খেলে ১১ ম্যাচে ৪৮ গড়ে করেন ৫৩২ রান। তার ব্যাট থেকে আসে দুটি সেঞ্চুরি ও দুটি ফিফটি।

তবে তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারটাও বেশ সমৃদ্ধ। ১০১ ম্যাচ খেলে ৯২ ইনিংসে ব্যাট হাতে নেমে করেছেন ৩ হাজার ৭৪০ রান। ৪৪.৫২ গড়ের সঙ্গে আছে ১০৩.৫১ স্ট্রাইক রেট; যা চোখধাঁধানো। ১১টি সেঞ্চুরি আর ১৬টি ফিফটি আছে নামের পাশে। এই বিশ্বকাপেও এসেছে একটি ফিফটি। সেটা বাংলাদেশের সঙ্গে। এ ছাড়া বাকি দুই ম্যাচের কোনোটিতেই সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি তিনি। আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের খেলা। সেই ম্যাচে তার কাছে প্রত্যাশিত আগ্রাসী ব্যাটিংটাই দেখার অপেক্ষায় থাকবে দল। নিজের দিনে বেয়ারস্টো বোলারদের ধুন্ধুমার ব্যাট চালিয়ে তুলোধুনো করতে ভুল করেন না।

বেয়ারস্টোর মতো দক্ষিণ আফ্রিকা দলেরও উইকেটকিপার একজন বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান। তিনি কুইন্টন ডি কক। গত মাসে যিনি প্রোটিয়া ক্রিকেট দলের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো একটা খবর দিয়েছেন। বিশ্বকাপের পর আর তাকে দেশের জার্সিতে ওয়ানডেতে দেখা যাবে না বলে জানিয়েছেন। মাত্র ৩১ ছুঁইছুঁই বয়সেই তিনি এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিচ্ছেন। তবে বিদায়ের আগে শেষবারের মতো ক্রিকেটের এই মহাযজ্ঞের মঞ্চটা রাঙিয়ে তুলেছেন তিনি।

এবারের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা খেলেছে তিনটি ম্যাচে। নিজেদের প্রথম খেলায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪২৮ রান করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেদিন প্রোটিয়াদের উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান ডি কক ৮৪ বলে ১২ চার ও ৩ ছক্কায় করেছেন ১০০ রান। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০৬ বলে ৮ চার ও ৫ ছক্কায় করেন ১০৯ রান। তবে তৃতীয় ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জ্বলে ওঠেনি তার ব্যাট। দলও আর জিততে পারেনি।

তবে এক ম্যাচে না জ্বললেও পরের ম্যাচেই যে জ¦লের ওঠার সামর্থ্য আছে তার। কারণ, আইপিএলের নিয়মিত মুখ তিনি। এই টুর্নামেন্টই তাকে সহায়তা করছে আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট চালাতে। বিশ্বকাপের কোন মাঠের উইকেট কেমন, সেটা তো তার জানারই কথা। তা ছাড়া ভারতের মাটিতে তার ওয়ানডে পরিসংখ্যানও বেশ উজ্জ্বল। এখন পর্যন্ত এখানে ১১ ইনিংসে ব্যাট করে ৬০৬ রান করেছেন। যেখানে তার সেঞ্চুরি চারটি, ফিফটি মাত্র একটি। ৫৫ গড়ের পাশাপাশি স্ট্রাইক রেট ১০২.১৯। আজ মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ইংলিশদের মুখোমুখি হবে প্রোটিয়ারা। সেই মাঠে তিনি একটাই এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। সেখানে ১০৯ রান করেছিলেন।

২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করা ডি কক ১৪৮ ম্যাচে খেলতে নেমে সবগুলোতেই পেয়েছেন ব্যাটিং। ৪৫.৪২ গড়ে তার রান ৬ হাজার ৪০৫। সর্বোচ্চ ১৭৮ রানের ইনিংস। নামের পাশে যোগ হয়েছে ১৯টি সেঞ্চুরি ও ৩০টি ফিফটি। তার ৯৬.১৬ স্ট্রাইক রেটটাও মন্দ নয়। আধুনিক ওয়ানডে ক্রিকেটের সঙ্গে বেশ মানানসই। বিশ^কাপে তার প্রথম দেখা মেলে ২০১৫ সালে। এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের ২০ ম্যাচে খেলে তিনি করেছেন ৬৭৯ রান। ৩৭.৭২ গড়ের সঙ্গে আছে ৯২ স্ট্রাইক রেট। ওপেনার হিসেবে নেমেও আছে তার দুটি অপরাজিত ইনিংস। উইকেটকিপার হিসেবে ওয়ানডেতে ২১১ ডিসমিসাল করেছেন ডি কক; যার মধ্যে ক্যাচ ১৯৪টি, স্টাম্পিং ১৭টি।

এমন ঝলমলে ক্যারিয়ারটা আরও সমৃদ্ধ করার সুযোগ ছিল তার সামনে। যেভাবে তিনি উড়ছেন, তাতে অনায়াসেই আরও চার-পাঁচ বছর খেলা চালিয়ে যেতে পারতেন। কিš‘ সেই পথ নিজেই বন্ধ করে দিচ্ছেন। বিশ্বকাপের পরই তিনি ওয়ানডে থেকে নিচ্ছেন অবসর। এর আগে গত বছর ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ চলার মাঝপথেই সাদাপোশাকের ক্রিকেট থেকে অবসর নেন এই ব্যাটসম্যান।

তবে থেমে যাওয়ার আগে তার আগ্রাসী ব্যাটিং দেখার প্রতীক্ষায় ভক্তরা। ভারতের সাগরপাড়ের স্টেডিয়াম ওয়াংখেড়েতে আসা দর্শকরা জনি বেয়ারস্টো আর ডি ককের চার-ছক্কার ফুলঝুরি দেখার প্রতীক্ষায় থাকবেন।

আরসি-০১