সিলেটের পাথর কোয়ারি ইজারা স্থগিতে ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ

সিলেট মিরর ডেস্ক


এপ্রিল ৩০, ২০২৫
১২:৪৯ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ৩০, ২০২৫
১২:৪৯ পূর্বাহ্ন



সিলেটের পাথর কোয়ারি ইজারা স্থগিতে ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ


পরিবেশের ক্ষতি কথা উল্লেখ্য করে সিলেটের ৬টিসহ দেশের ১৭টি পাথর কোয়ারির ইজারা স্থগিত রাখায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন সিলেটের ব্যবসায়ীরা। 

সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের টুকের বাজারের অভিজাত হোটেলে এ প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

দেশের ৫১টি পাথর কোয়ারির মধ্যে ১৭টি পাথর কোয়ারি বন্ধ করে সিলেট অঞ্চলের মানুষের সাথে বৈষম্য করা হয়েছে। এমন অভিযোগ করে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পাথর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, কোম্পানীগঞ্জ মিল মালিক সমিতি ও ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যনারে ব্যবসায়ীরা এই প্রতিবাদ সভা করেন। 

সভায় বক্তারা বলেন, প্রায় ১২ বছরের ফ্যাসিস্ট আমলে সিলেটের লাখো মানুষের একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম পাথর কোয়ারি সমুহ বন্ধ রাখা হয়েছে। ভারতীয় আগ্রাসন তথা ভারতের পাথর বিপননের স্বার্থে পরিবেশের কথিত দোহাই দিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পাথর আহরন বন্ধ করে দেয়ার ফলে সিলেটের মানুষের জীবন জীবিকায় ভয়াবহ অনিশ্চয়তা নেমে আসে। কোয়ারি বন্ধ করার ফলে নিমিষেই লাখ লাখ মানুষ অবর্ননীয় দুঃখ কষ্টে নিপতিত হয়। এলাকায় অভাব অনটন এবং সংকট হয়ে পড়ে মানুষের নিত্য সঙ্গী। সিলেটের প্রান্তিক জনপদে বিরাজ করে দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি। বিগত সরকারের মদদপুষ্ট একটি দুষ্টচক্র ও চিহ্নিত সিন্ডিকেটের প্রত্যক্ষ ইশারায় সিলেটের লাখ লাখ মানুষের রোজগারস্থল পাথর কোয়ারি বন্ধ করে দেয়া হয়। কোয়ারি বন্ধ করে দিয়ে এই চক্র রিজার্ভের ডলার দিয়ে ব্যাপক ভাবে পাথর আমদানি করে দেশের অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। 


পাথর কোয়ারি খুলার জন্য সিলেটের শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিন আন্দোলন ও মামলা শেষে হাইকোর্টের দায়ে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় পাথর কোয়ারি ইজারাদার দিতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে স্থানীয় শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা ব্যবসার জন্য প্রস্তুতি নেয়। এরইমধ্যে আবারো ভারতীয় সিন্ডিকেট ও সিলেট বিদ্বেষী একটি চক্র ব্যারিস্টার রেজওয়ান হাসানের মাধ্যমে সিলেটের পাথর কোয়ারি ইজারাদা প্রক্রিয়া স্থগিত করে লাখ লাখ শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের পেটে লাথি মেরেছে। সারাদেশে পাথর কোয়ারি ইজারা হলে আমাদের কেয়ারিও ইজারা হতে হবে। অন্যথায় সিলেটবাসী হরতাল, অবরোধ সহ কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে বলে হুশিয়ারি দেন। 

এসময় বক্তৃতারা বলেন সিলেটের কোয়ারি থেকে পাথর আহরন বন্ধ করে দেয়ায় নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ার কারনে পানি নিষ্কাশনে মারাত্মক বাঁধার কারনে প্রতি বছর এ অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। ধলাই ও পিয়াইন নদীর উৎসমুখে রাশি রাশি পাথর জমা হওয়ার ফলে ইতিমধ্যে এ অঞ্চলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। ফলে এ অঞ্চলের তীরবর্তী বেশ কয়েকটি জনপদ যেকোন সময় ঢলে নিশ্চিহ্ন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। অথচ নদীর উৎসে স্তুপকৃত পাথর অপসারন করা হলে এ অঞ্চলের মানুষ বন্যা ও ঢলের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতো। সিলেটের পাথর কোয়ারি যখন চালু ছিল তখন এ অঞ্চলের মানুষের রোজগার ও সমৃদ্ধি ছিল ব্যাপক। এ অঞ্চলে শত শত কোটি টাকা পাথর ব্যবসায় বিনিয়োগ করে লাখ লাখ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতেন। এছাড়া লাখ লাখ বারকি শ্রমিক পাথর আহরন করে তাদের পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন অতিবাহিত করতেন। কিন্তু কোয়ারি বন্ধ করে দেয়ায় এসব মানুষগুলো এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কোটি কোটি টাকা ব্যাংক ঋন নিয়ে ব্যবসায়ীরা কর্মক্ষেত্র হারিয়ে দেউলিয়া হয়ে ঋনখেলাপের দায়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কর্মহীন এ জনপদে তাই বিরাজ করছে মারাত্মক সংকটাপন্ন অবস্থা। 

অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে ঘাপটি মেরে বসে থাকা মাফিয়া সিন্ডিকেট এবং ভারতীয় এজেন্টদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদ পরিবেশের দোহাই দিয়ে পাথর কোয়ারির ইজারা কার্যক্রম স্থগিত করেছে। উপদেষ্টা পরিষদের এই হটকারি সিদ্ধান্ত কেবল হতবাকই করে নাই, এই সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছেন। 

প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পাথর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি আবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক জসিমুল ইসলাম আঙ্গুর, ভোলাগঞ্জ চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি সাহাব উদ্দিন, সহ-সভাপতি বশির আহমদ, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ষ্টোন ক্রাশার মিল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল জলিল, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হেকিম, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পাথর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিঃ এর সদস্য শওকত আলী বাবুল, ব্যবসায়ী আব্দুল আজিদ, মতিউর রহমান, ইলিয়াছুর রহমান, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কবির আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মাহফুজ সহ পাথর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।


এএফ/০১