জুলাইয়ের ঐক্য ধরে আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে: মুশফিকুল ফজল

সিলেট মিরর ডেস্ক


এপ্রিল ৩০, ২০২৫
০৪:২৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ৩০, ২০২৫
০৪:২৩ পূর্বাহ্ন



জুলাইয়ের ঐক্য ধরে আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে: মুশফিকুল ফজল


সিনিয়র সচিব ও মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেছেন, সমতা ও সাম্যের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ রক্ত দিয়েছে। তাই আগামীর বাংলাদেশ হবে সমতার বাংলাদেশ, ঐক্যের বাংলাদেশ। জুলাই অভ্যুত্থানে পলাতক শক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশে যে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে ওঠেছে তা বজায় রেখে আমরা আগামীর একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবো।

তিনি সোমবার রাতে সিলেট নগরের কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের (কেমুসাস) শহীদ সুলেমান হলে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। শিক্ষা ও সামাজিক সংগঠন সাইক্লোনের সাবেক শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মুশফিকুল ফজল আনসারী নিয়ে এই আলাপন আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়।

সাইক্লোন সভাপতি মুয়াজ আফসারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, গত ১৬ বছরে বাংলাদেশে সুশীল সমাজ বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছায় তারা তাদের মগজ বন্ধক দিয়েছিলেন। আবার অনেকে কথা বলতে না পারলে চুপ থেকেছেন। অনেকে জীবন বাজি রেখে বাংলাদেশে বসে সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলার চেষ্টা করেছেন। দেশের ভেতরে থেকে সরকারের চোখে আঙ্গুল দিয়ে কথা বলতে যে হিম্মতের দরকার ছিল তা তাদের মধ্যে ছিল।

মেক্সিকোতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মুশফিক আরও বলেন, আমরা বাইরে থেকে বিশ্ববাসীকে জানানোর চেষ্টা করেছিÑ বাংলাদেশে কথা বলার অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ তখন জানতো শেখ হাসিনা স্বৈরাচার। আমার উদ্দেশ্য ছিল, এই অধিকার হরণের কথা ওই মানুষটিকে জানানো যার কথার গুরুত্ব আছে, আন্তর্জাতিকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা ও জানান দেওয়ার চেষ্টা করেছি।

শুধু বাংলাদেশে মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের বিষয়ে নয় যেখানে নিগৃহ, নির্যাতন এবং মুক্তমতের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে সেই বিষয়গুলো এড্রেস করার ওপর জোর দেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্র-জনতা, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। একটি বড় সুযোগ আমাদের সামনে এসেছে। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ও ফ্যাসিস্ট হাসিনার পলায়নের পর সরকার গঠনের প্রক্রিয়ার প্রসঙ্গ টেনে সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনুস চেয়ে এই দেশে সরকারের দায়িত্বে আসেননি। বাংলাদেশের সকল মানুষের আকাক্সক্ষা ছিল যেন তিনি দেশের অভিভাকত্বের দায়িত্ব নেন। ছাত্র-সমন্বয়করাও তাকে চেয়েছে।

তিনি বলেন, প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অনেক ভালো কাজ হচ্ছে। অনেক ঘাটতি থাকতে পারে, এখানে ফ্যাসিস্ট সরকারের অনেক দোসর ঘাপটিমেরে বসে আছে। অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। এর মধ্যেও কাজ করতে হবে। দেশকে গণতন্ত্রের পথে নিয়ে যেতে হবে।

রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী দেশকে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে নেওয়ার ওপর জোর দিয়ে বলেন, এই সরকারের প্রতিটি প্রথা এবং প্রতিষ্ঠানকে ঠিক করবার জন্যে, সংশোধন করার জন্যে, দেশকে ট্র্যাকে আনার জন্যে যেমন চেষ্টা আছে তেমনি চেষ্টা আছে জনগণের আমানতদারী ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যে। এতদিন গণতন্ত্রহীনতা, ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। তিনটি নির্বাচন লুট হয়ে গেছে। এই ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে এবং মানুষ যাতে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে সে জন্য সরকার প্রধান তার অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। আমারও ব্যক্তিগতভাবে একই অবস্থান। এই বাংলাদেশের মানুষের মেন্ডেট নিয়ে জনগণের সরকার যেন প্রতিষ্ঠিত হয়।

তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের সেই পেছনে ফিরে যেতে চাই না। এখন সামনে অগ্রসর হতে চাই। আধিপত্যবিস্তার করার চেষ্টা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যুব সমাজ এখন অনেক সচেতন। রাজনৈতিক কালচার তৈরি হয়েছে সবাই আধিপত্য বিস্তার করতে চাই। আমি সালাম নিতে অভ্যস্ত, সালাম দিতে অভ্যস্ত নই। এখন পরিবর্তন এসেছে, যিনি সালাম নিবেন তাকেও সালাম দিতে হবে।

বৈষম্যের বিরুদ্ধে ও মেধার মূল্যায়নে গুরুত্বরূপ করেন তিনি। বলেন, এই জন্য ছাত্ররা জীবন দিয়ে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে। তাই কেউ যেন বৈষম্যের শিকার না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। একইভাবে মামলার নামে কেউ যেন বাণিজ্য করতে না পারে। কাউকে হেয় করার উদ্দেশে মামলা করে হয়রানি না করে। এমনটা কেউ করে থাকলে আমাকে জানাবেন তাকে পাবলিকলি এক্সপোজ করে দেব।

সিলেটের উন্নয়নে নিজের আন্তরিকতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের সেবা করতে মন্ত্রী-এমপি হতে হয় না। ক্ষমতার বাইরে থেকেও দেশের জন্য কাজ করা যায়, প্রভাব তৈরি করা যায়। সিলেটের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে আমি দ্বিধাবোধ করব না।

মুশফিক বলেন, দেশের উন্নয়নে সিলেটের প্রবাসীদের অনেক অবদান আছে। সিলেটের মানুষ যে হারে রেমিট্যান্স পাঠায় এই টাকা সব ব্যবহার হয় না। এটার জন্য দায়িত্ব নেওয়ার দরকার না, ওয়াচডগ হিসেবে কাজ করা যায়, কথা বলা যায়।

বাচিকশিল্পী সালেহ আহমদ খসরুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ বেতার সিলেটের আঞ্চলিক পরিচালক আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তারিক, কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের (কেমুসাস) সাধারণ সম্পাদক, সাইক্লোনের সাবেক সভাপতি সেলিম আউয়াল। স্বাগত বক্তব্য দেন, সাইক্লোন সাধারণ সম্পাদক ইশরাক জাহান জেলি।

শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, কেমুসাসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী, দৈনিক নয়া দিগন্তের ব্যুরো চিফ আব্দুল কাদের তাপাদার, বেলাল আহমদ চৌধুরী, সিলেট জজ কোর্টের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল মুকিত অপি, কবি ও সাংবাদিক মুহিত চৌধুরী, ছয়ফুল আলম পারুল, তাসলিমা খানম বীথি ও আব্দুস সামাদ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে মেক্সিকোতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান সাইক্লোনের সদস্যরা। এছাড়াও আব্দুল ওয়াহিদ স্মৃতি পাঠাগার, আমাদের ডাক পরিবারের পক্ষে কবি আলিম উদ্দিন আলম, জনপ্রতিনিধি ইলিয়াস মেম্বার, সিলেট মেট্রোপলিটন জেলা স্কাউটের পক্ষে সম্পাদক মো. জিয়াউল ইসলাম, আয়েশা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ব্যাংক কর্মকর্তা সৈয়দ ফয়সল আহমদ, ব্যাংক কর্মকর্তা মতিউল বারী খুরশেদ, সিলেট যুব সংগঠন, চব্বিশে গণঅভুত্থানে আহত রক্তাক্ত জুলাই-এর আহ্বায়ক আলাল আহমদসহ অন্যরা ফুল ও ক্রেট দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

নিজেদের লেখা বই উপহার দেন সাহিত্য সমালোচক কবি বাছিত ইবনে হাবীব, ব্যাংক কর্মকর্তা ও লেখক মুশতাক আহমদ।

উপস্থিত ছিলেন, সাইক্লোন কোষাধ্যক্ষ, বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক আলী আখতার, বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এটিএম মোশাহিদ উদ্দিন, দয়ামীর ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাব্বির আহমদ, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট হাসপাতালের পরিচালক নজমুর ইসলাম, সমাজসেবী ও সংগঠক মাহবুবুল হক চৌধুরী প্রমুখ।



এএফ/০২