সেতু ধ্বংস হলে প্রশাসনের নামে মামলা—সমাবেশে বক্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুলাই ২৭, ২০২৫
১২:১৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুলাই ২৭, ২০২৫
০৪:৪৬ অপরাহ্ন



সেতু ধ্বংস হলে প্রশাসনের নামে মামলা—সমাবেশে বক্তারা


বালু লোভীদের ছোবলে ধ্বংসের মুখে পড়া সিলেটের ধলাই সেতু রক্ষায় আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, ‘অবিলম্বে বালুখেকোদের হাত থেকে ধলাই সেতু রক্ষার উদ্যোগ না নিলে এবং ধলাই সেতু ধ্বংস হলে এর দায় প্রশাসনের। প্রশাসনকে আসামি করে মামলা করা হবে।’

শনিবার (২৬ জুলাই) বিকেলে সিলেটের অন্যতম সীমান্ত নদী ধলাইয়ের ওপর নির্মিত ধলাই সেতুর নিচে আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। 

পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’ (ধরা) সিলেট শাখা এবং আন্তর্জাতিক পানি ও নদী অধিকার বিষয়ক সংগঠন ‘সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার’ এই কর্মসূচির আয়োজন করে।

স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন সেতু রক্ষার দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে ব্যানার-ফ্যাস্টুনসহ কর্মসূচিতে অংশ নেয়।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ এমদাদুল হকের সভাপতিত্বে ও স্থানীয় স্কুল শিক্ষক নিজাম উদ্দিন মাস্টারের সঞ্চালনায় সমাবেশ বক্তব্য দেন ধরা সিলেটের সংগঠক ও ধলাইতীরের বাসিন্দা ফয়জুর রহমান, ধরার সংগঠক ও আইনজীবী অরুপ শ্যাম বাপ্পী, সোহাগ তাজুল আমিন, নাট্যকর্মী আহমেদ হোসেন চৌধুরী প্রমুখ। 

মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে বলা হয়, ‘সিলেট অঞ্চলের দীর্ঘতম সেতুর একটি ধলাই। এই সেতুর আশপাশ থেকে বালু ও পাথর উত্তোলনের নামে গত এক বছর ধরে নজিরবিহীন অন্যায় ও অনাচার চলছে। এতে করে ধলাই সেতুটি হুমকির মুখে পড়েছে।’ 

তারা বলেন, ‘বালুখেকোরা প্রশাসনিক কোনো বাধা না পাওয়ায় এতই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, ধলাই সেতুর নিচ থেকে বালু উত্তোলন করা শুরু করেছে। বিগত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত অসংখ্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও প্রশাসনের টনক নড়েনি। স্থানীয় জনগণ মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি করেও প্রশাসনের ঘুম নড়াতে পারেনি।

তারা বলেন, ‘ধরা সিলেটের পক্ষ থেকে এই বালু লুটতরাজ বন্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। তবুও বন্ধ হয়নি বালুখেকোদের বালু উত্তোলন। এভাবে বালু উত্তোলন চলতে থাকলে ধলাই সেতু যে কোনো সময়ে ধসে যেতে পারে। ফলে রাষ্ট্রের সম্পদ বিনষ্টের পাশাপাশি ওই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রায় বিঘ্ন ঘটবে।’ 

সমাবেশে নানা পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে ধরার সংগঠক আব্দুল করিম চৌধুরী কিম বলেন, ‘পাথর ও বালুমহালে বিগত এক বছর ধরে নজিরবিহীন অন্যায়-অনাচার চলছে।

আইন-কানুনের কোনো তোয়াক্কা নেই। বালু-পাথর লুট করতে করতে পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, নিজের পায়ে কুড়াল মেরে ধলাই সেতু ধসের আয়োজন চলছে। অবিলম্বে বালুখেকোদের হাত থেকে ধলাই সেতু রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া না হলে—বালুসন্ত্রাসে ধলাই সেতু ধ্বংস হলে এর দায় স্থানীয় প্রশাসনের। রাষ্ট্রীয়সম্পদ রক্ষা করতে ব্যর্থতার জন্য প্রশাসনকে আসামি করে মামলা করা হবে।’

কোম্পানীগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ২০০৫ সালে ধলাই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৩৪ দশমিক ৩৫ মিটার দীর্ঘ ও ৯ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থের ধলাই সেতু নির্মাণ করা হয়। ২০০৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান সেতুটি উদ্বোধন করেন। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদরের সঙ্গে ভারত সীমান্তঘেঁষা তিনটি ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করেছে ধলাই সেতু। সিলেটের অন্যতম পর্যটন এলাকা উৎমাছড়ায় যাতায়াতের মাধ্যম এই সেতু। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে প্রশাসনের শিথিলতায় ধলাই নদীতে শুরু হয় নির্বিচারে বালু ও পাথর লুটপাট।


এএফ/০২