শাবিতে প্রশাসনিক মদদে চলছে 'গুপ্ত রাজনীতি'

শাবিপ্রবি প্রতিনিধি


আগস্ট ০৯, ২০২৫
০৬:৫৩ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ০৯, ২০২৫
০৬:৫৩ অপরাহ্ন



শাবিতে প্রশাসনিক মদদে চলছে 'গুপ্ত রাজনীতি'
-সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ


শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক মদদে 'গুপ্ত রাজনীতি' চলার অভিযোগ করেন একদল শিক্ষার্থী। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে 'অধিকার সচেতন' শিক্ষার্থীর ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তারা।

আজ শনিবার (৯ আগস্ট) বিকালে ইউনিভার্সিটি সেন্টার ভবনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় শিক্ষার্থীরা ৬টি অসঙ্গতির কথা তুলে ধরেন।


১) বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দে অসঙ্গতি:

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ তহবিল থেকে মোটা অংকের অর্থ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বরাদ্দ দিচ্ছে যেখানে এককভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদেরকে সুবিধাভোগী এবং কর্তৃত্ব স্থাপনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানের গণচরিত্রকে হরণ করে দলীয় ব্যানারে ফুটবল টুর্নামেন্ট, রচনা প্রতিযোগিতা আয়োজনের পিছনে জোরালো, প্রাসঙ্গিক এবং যৌক্তিক সন্দেহ শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তরফ থেকে একটি দায়সারা বিবৃতি দেওয়া হলেও তা প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার্থীদের সন্দেহকে আরো জোরালো করে। একই সঙ্গে প্রশাসনিক আয়োজনের নাম ব্যবহার করে একটি দল তাদের প্রচারণা চালাচ্ছে এবং সেই অনুষ্ঠান সমন্বয় সাধনের জন্য বিনা আলোচনায় মনোনীত হচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

২) আহতদের জন্য বরাদ্দকৃত সুযোগের অপব্যবহার:

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তরফ থেকে গণঅভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থীদেরকে ক্রেডিট ফি এবং সেমিস্টার ফি মওকুফের কথা থাকলেও প্রকৃতঅর্থে আহত শিক্ষার্থীদের বদলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদেরকেই কেবলমাত্র সেখানে স্থান নিতে দেখা গিয়েছে।

৩) প্রশাসনিক মদতে গুপ্ত রাজনৈতিক মডেল বিরাজমান যা গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য ক্ষতিকর এবং শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা:

আমরা দেখতে পাই, বিশ্ববিদ্যালয় এ রাজনৈতিক দলগুলোর কমিটি বিদ্যমান, প্রশাসনিকভাবে তাদেরকে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তরে ইতিবাচক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনাতেও নিষেধাজ্ঞা বিদ্যমান। অথচ ভিন্ন নামে, ব্যানারবিহীন, নতুবা বিশ্ববিদ্যালয় এর বাইরে মূল ফটকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। যা শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণার সামিল। একিসাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ব্যানারে ক্রমাগত রাজনৈতিক তৎপরতা ও পরিলক্ষিত হয়েছে। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীদেরকে গণতান্ত্রিক চর্চার পথ সুগম করতে ইতিবাচক রাজনৈতিক চর্চার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক বাঁধানিষেধ আমাদের কাছে গুপ্ত মডেল কে প্রশ্রয় দেওয়া এবং দ্বিচারিতার সামিল।

৪) নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি হওয়া হয়রানি নিরসনে প্রশাসনিক উদাসীনতা:

সম্প্রতি ন্যাক্কারজনক ধর্ষণকাণ্ডের পর যেসব শিক্ষার্থী বিশেষত নারী শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে সরব হয় আমরা দেখতে পাই বিশ্ববিদ্যালয় এর ই কিছু শিক্ষার্থী সহ তাদের মদতে কিছু অনলাইন সাইট থেকে তাদেরকে ভয়ানক রকম লাঞ্চনা করা হয়। এই সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করলেও অভিযুক্তদেরকে অদৃশ্য ক্ষমতাবলে ছাঁড় দেওয়া হচ্ছে যা ভুক্তভোগীকে কোনঠাসা করে সকল নারী শিক্ষার্থীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। এমতাবস্থায়, অতিদ্রুত হ্যারাসমেন্ট সেলের পুনর্গঠন না করা নারীর সুরক্ষার প্রতি প্রশাসনের উদাসীনতাই প্রমাণ করে।

৫) শিক্ষার্থীদের সাথে প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারিতা:

বিগত কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে কোনো শিক্ষার্থী কর্তৃক প্রশাসনের যেকোনো সিদ্ধান্তের সমালোচনা করলে প্রশাসন সেসকল শিক্ষার্থীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ থেকে শুরু করে ফেস মার্কিং-এর থ্রেট, শোকজ ইত্যাদি প্রদান করেন যা শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধান পরিপন্থি। বিশ্যবিদ্যালয়ে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চার জায়গায় ক্ষমতা প্রয়োগ করার চেষ্টা প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারিতার মুখোশ উন্মোচন করে।

৬) গণহত্যায় জড়িত এবং সমর্থক শিক্ষক কর্মকর্তাদের দায়মুক্তি:

গণঅভ্যুত্থান এবং পূর্ববর্তী শিক্ষার্থী আন্দোলন বিশেষত ২০২২ এর ভিসিবিরোধী আন্দোলনে সরাসরি জড়িত এবং মদতদাতা শিক্ষক এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাদেরকে বহাল তবিয়তে রাখা হয়েছে এবং তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেতনভাতা সহ সকল সুবিধা ভোগ করছে যা গণঅভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী।

এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা সম্মিলিত ভাবে এই সকল ঘটনার নিন্দা এবং অতি দ্রুত জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে উপর্যুক্ত ন্যাক্কারজনক ঘটনাগুলির সুষ্ঠু সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি ।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, শাবিপ্রবি ছাত্রদলের সভাপতি রাহাত জামান, সাধারণ সম্পাদক নাঈম সরকার,যুগ্ম সম্পাদক নাজমুস সাকিব, সুলতানা আক্তার লুবনা ও মেহরাব সাদাতসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা।


এএফ/০১