সাদা পাথর লুট: দুদকের প্রতিবেদনে বিভাগীয় কমিশনার-পুলিশ সুপারেরও নাম

নিজস্ব প্রতিবেদক


আগস্ট ২১, ২০২৫
০৭:০২ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ২১, ২০২৫
০৭:০২ অপরাহ্ন



সাদা পাথর লুট: দুদকের প্রতিবেদনে বিভাগীয় কমিশনার-পুলিশ সুপারেরও নাম


সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথর লুট কান্ডে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী এবং পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানেরও দায় দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

তদন্ত প্রতিবেদনে সাদা পাথর লুটের ‘প্রত্যক্ষও পরোক্ষভাবে জড়িত’ এবং ‘সুবিধাভোগী ব্যক্তি ও সংস্থার’ একটি তালিকা দিয়েছে দুদক। এই তালিকায় বিভাগীয় কমিশনার ও সুপারের কথাও উল্লেখ রয়েছে।

সাদাপাথরে নজিরবিহীন লুট নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার মধ্যে গত ১৩ আগস্ট দদকের সিলেট কার্যালয়ের উপ পরিচালক রাফি মো. নাজমুস সাদাতের নেতৃত্বে একটি টিম সাদাপাথর পরিদর্শন করে। এরপর তারা ১৬ আগস্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

প্রতিবেদনে সাদাপাথর লুটে বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা মিলিয়ে ৫৩ জনের সম্পৃক্তা পেয়েছে বলে জানিয়েছে দুদক।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পাথর আত্মসাতের ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থাগুলোর নিষ্ক্রিয়তা ও যোগসাজশ ছিল।

প্রতিবেদনে বিভাগীয় কমিশনারকে দায়ী করে বলা হয়, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী ৮ জুলাই তার কার্যালয়ে পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, পরিবহণ শ্রমিক ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘সারা দেশে পাথর উত্তোলন করা গেলে সিলেটে যাবে না কেন? এর সঙ্গে মানুষের জীবন ও জীবিকা জড়িত।’ তার এ বক্তব্যটি বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত হলে সাদা পাথর লুটপাটে ব্যাপক উৎসাহ জুগিয়েছে।

সরকারিভাবে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ থাকলেও তার এ ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে পাথর লুটপাটকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে তিনি রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, পরিবহণ শ্রমিক ও রাজনৈতিক নেতাদের অবৈধ স্বার্থরক্ষায় ভূমিকা রেখেছেন।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ২৭ এপ্রিল অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও পরিবহণ বন্ধের জন্য পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিলেও সিলেট জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান আলোচ্য সাদা পাথর লুটপাটের বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।

কোম্পানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ উজায়ের আল মাহমুদ আদনান সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনিসহ সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ সদস্যরা অবৈধ পাথর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের কমিশন গ্রহণ করে সাদা পাথর লুটপাটে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেছেন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অবৈধভাবে উত্তোলিত পাথর প্রতি ট্রাকে প্রায় ৫০০ ঘনফুট করে লোড করা হয়। পরিবহণ ভাড়া ছাড়া প্রতি ট্রাকের পাথরের দাম ধরা হয় ৯১ হাজার টাকা। এর মধ্যে প্রতি ট্রাক থেকে দশ হাজার টাকা পুলিশ ও প্রশাসনের জন্য আলাদা করা হয়। বাকি ৮১ হাজার টাকা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকারীরা নিজেদের মাঝে বণ্টন করে নেয়। এছাড়া প্রতি ট্রাক থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে পুলিশের জন্য ৫ হাজার টাকা এবং উপজেলা প্রশাসনের জন্য ৫ হাজার টাকা বণ্টন হতো। এছাড়াও অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত প্রতিটি বারকি নৌকা হতে এক হাজার টাকা করে নেওয়া হয়।

সাদাপাথর লুটের ঘটনায় ইতোমধ্যে সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদকে ওএসডি ও কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও আজিজুন্নাহারকে বদলি করা হয়েছে। তবে স্বপদেই আছেন বিভাগীয় কমিশনার ও পুলিশ সুপার।

বুধবার কোম্পানীঞ্জে গিয়ে এ প্রসঙ্গে বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী বলেন, পাথর লুটে প্রশাসনের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটের এসপি মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।


এএফ/০৬