‘জামায়াতের জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক


আগস্ট ২১, ২০২৫
০৭:১৩ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ২১, ২০২৫
০৭:১৩ অপরাহ্ন



‘জামায়াতের জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে’
সিলেটে সংবাদ সম্মেলন


জামায়াতে ইসলামীর সিলেট মহানগর আমির ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম সাদা পাথর লুটপাটে জামায়াতের কোনো নেতাকর্মীর ন্যূনতম সম্পৃক্ততা নেই দাবি করে বলেছেন, ‘সিলেটে জামায়াতের প্রতি জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন, জনপ্রিয়তা ও ভালোবাসায় ভীত হয়ে নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত একটি কুচক্রী মহল।’ তিনি বলেন, ‘কেবল পাথর লুটপাট নয়, সিলেটের কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মকাণ্ড ও অপকর্মে জামায়াতের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’

আজ বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টায় মহানগর জামায়াতের কার্যালয়ে মহানগর ও জেলা জামায়াত আয়োজিত এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দানকালে এসব কথা বলেন মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার দেড় শতাধিক সংবাদকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে সিলেটে সাধারণ মানুষের পাশে থেকে, প্রশাসনকে সহযোগিতা করে, সিলেটের সর্বত্র জামায়াতের যে জনপ্রিয়তা বেড়েছে তাতে একটা মহলের গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। তারা অপপ্রচার শুরু করেছেন। কিন্তু জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত জামায়াতে ইসলামীকে কোনোভাবেই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না,’ বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘দুদকের বরাত দিয়ে সমকাল পত্রিকায় সাদাপাথর লুটের সাথে জড়িয়ে যে দুজন জামায়াত নেতার নাম ছেপেছে তা একেবারেই ভিত্তিহীন। আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি দুদকের তালিকায় জামায়াতের কারো কোনো নাম নেই।’

ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের সবুজ ভূখণ্ডে ইনসাফভিত্তিক একটি মানবিক সমাজ বিনির্মাণের প্রত্যয়দীপ্ত কাফেলা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আর্তমানবতার কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। মানবতার কল্যাণ সাধন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই জামায়াতের মূল লক্ষ্য। কোনো অন্যায় ও অপকর্মের সাথে জামায়াতের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং সব ধরনের লুটপাট, অন্যায় অপকর্মের বিরুদ্ধে জামায়াত সবসময় সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছে।’

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি সিলেটের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্পট সাদাপাথরসহ বিভিন্ন স্পট থেকে পাথর লুটপাটের বিরুদ্ধে জামায়াত জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সেই পাথর লুটের সাথে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে জড়িয়ে চরিত্র হরণের অপচেষ্টা চলছে।’

লিখিত বক্তব্যে ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে দুদকের বরাত দিয়ে সাদাপাথর লুটের সাথে সিলেট মহানগর আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ও জেলা সেক্রেটারি মো: জয়নাল আবেদীনের নাম উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জড়ানো হয়েছে। ওই দৈনিকের কাল্পনিক রিপোর্টটি বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় অনলাইন পত্রিকা কপি-পেস্ট করে প্রচারের ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছি ও নিন্দা জানাচ্ছি। পাথর লুটের সাথে জামায়াত নেতৃবৃন্দ দূরে থাক সাধারণ কোনো কর্মী-সমর্থকেরও ন্যূনতম কোনো সম্পর্ক নেই। সরকারি ব্যবস্থাপনায় ও বৈধ পন্থায় পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার দাবিতে সিলেটের পরিবহন মালিক শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের একটি কর্মসূচিতে রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সাথে জামায়াত নেতারাও বক্তব্য রাখেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ওই মানববন্ধনে বক্তব্য রাখা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বক্তব্য নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক রিপোর্ট প্রকাশ ও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। অথচ ওই বক্তব্যের সাথে পাথর লুটের দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই।’

‘ইতোমধ্যে ওই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে অপপ্রচারের প্রতিবাদে সিলেট জামায়াতের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। যা বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। ওই বিবৃতিতে লুটপাটে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। এ ধরনের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সিলেট তথা দেশবাসীর প্রতি আমরা বিনীত আহ্বান জানাচ্ছি। ইতোমধ্যে ওই রিপোর্টের প্রতিবাদ জানিয়ে সিলেট জেলা ও মহানগর জামায়াতের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেয়া হয়েছে।’

জামায়াতের সিলেট মহানগর আমির বলেন, ‘দুদকের বরাতে প্রকাশিত একটি দৈনিকের সংবাদে দুই জামায়াত নেতাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জড়ানো হয়েছে। দুদকের রিপোর্টে জামায়াত নেতাদের নাম আছে এর কোনো সত্যতা কোনো গণমাধ্যম পায়নি, কেবল ওই পত্রিকাটিই পেয়েছে। এর আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে গোয়েন্দা রিপোর্টের বরাত দিয়ে এবং অনুসন্ধানী রিপোর্টে পাথর লুটকারীদের নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এসব সংবাদে কোথাও জামায়াতের কোনো নেতাকর্মীর নাম পাওয়া যায়নি। শুধু একটি দৈনিকের ওই ফরমায়েসী রিপোর্টে জামায়াত নেতাদের নাম জড়ানোর ঘটনায় আমরা বিস্মিত। যা পাথর চুরিতে জড়িত প্রকৃত আসামীদের আড়ালের অপচেষ্টা ও একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে আমরা মনে করি।’

‘এ ধরনের কাল্পনিক ভুয়া সংবাদের আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই ধরনের অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে পাথর লুটে জড়িত প্রকৃত আসামিদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। একইসাথে কোনো নিরীহ ও নিরপরাধ ব্যক্তি যাতে অযথা হয়রানীর শিকার না হয় সেদিকে সক্রিয় সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি বিনীত অনুরোধ করছি।’

তিনি বলেন, ‘দুদক আদৌ এ ধরনের কোনো রিপোর্ট দিয়েছে কিনা, এ ব্যাপারে আমরা এখনো নিশ্চিত নই। তবে যে তালিকার বরাত দিয়ে সমকাল রিপোর্ট করেছে তার কোনো অস্তিত্ব আমরা দুদকে খুঁজে পাইনি। এটা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিমুলক বলে আমরা মনে করি। এছাড়া দুদক যদি তাদের রিপোর্টে জামায়াত নেতাদের নাম উল্লেখ করে থাকে তাহলে অবশ্যই দুদককে এর প্রমাণ দিতে হবে। অন্যথায় অপপ্রচারের জন্য দুদক ও কাল্পনিক ভুয়া রিপোর্ট প্রকাশকারী গণমাধ্যমগুলোকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। এ ব্যাপারে জামায়াত একবিন্দু ছাড় দেবে না।’

তিনি বলেন, ‘আদর্শিক মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে জামায়াতের বিরুদ্ধে অতীতেও অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে এবং অপপ্রচার চালানো হয়েছে। ইতিহাস সাক্ষী সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়েছে। এবারো পাথর লুটে জামায়াতকে নিয়ে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, এটাও ব্যর্থ হবে ইনশাআল্লাহ।’

‘গণমাধ্যম বরাবরই প্রকৃত সত্য উদঘাটনে জাতির দর্পন হিসেবে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে’ উল্লেখ করে ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এবারো এই পাথরকাণ্ডে প্রকৃত সত্য উদঘাটনে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা আশাবাদী।’

সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর সিলেট জেলা আমির ও সিলেট-১ আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান।

এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা লোকমান আহমদ, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, জামায়াতের সিলেট আঞ্চলিক টিমের সদস্য প্রবীণ জামায়াত নেতা হাফিজ মাওলানা আবদুল হাই হারুন, মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির ড. নুরুল ইসলাম বাবুল, মহানগরের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জাহেদুর রহমান চৌধুরী, জামায়াত নেতা মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম প্রমুখ।


এএফ/০৭