অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা কমেছে: সারজিস আলম

নিজস্ব প্রতিবেদক


সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৫
১১:৫৯ অপরাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫
০৮:৩২ অপরাহ্ন



অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা কমেছে: সারজিস আলম
# আওয়ামী লীগ ও তাঁর দোসরা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না


জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেছেন, ‘প্রত্যেকটি জায়গায় দুর্বলতা দেখিয়ে আসছে বলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি মানুষের আস্থার জায়গাটা কমে আসছে। তারা যে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার, ওইটুকু তারা কাজের মাধ্যমে দেখাতে পারতেছে না।’ এসময় নিউ ইয়র্কে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনের ওপর ডিম নিক্ষেপ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘একদম অনাকাঙ্ক্ষিত ও প্রত্যাশিত এবং বাংলাদেশ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য লজ্জাজনক ঘটনা ঘটেছে।’

আজ বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে সিলেট নগরের পূর্ব জিন্দাবাজার এলাকার একটি অভিজাত হোটেলে কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন।

সিলেট জেলা ও মহানগর এনসিপি যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। 

এনসিপি সদস্য সচিব আখতার হোসেনের ওপর ডিম নিউইয়র্কে নিক্ষেপের ঘটনা- বিষয়ক প্রশ্নের তিনি বলেন, ‘একদম অনাকাঙ্ক্ষিত ও প্রত্যাশিত এবং বাংলাদেশ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য লজ্জাজনক ঘটনা ঘটেছে। অন্তর্বর্তীকালী সরকার তিনটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদেরকে তাদের সাথে নিয়ে গেছেন। তাদের অবশ্যই এতোটুকু ক্লিয়ার ধারণা থাকা দরকার ছিল তাদেরকে তারা কোন প্রটোকলে কোন জায়গা থেকে কোথায় নিতে পারবেন। যদি না নিতে পারেন তাদের সাথে প্রতিটি জায়গায় ওই জায়গায় সিকিউরিটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তুু তারা বাংলাদেশের এই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছেন। যেটা শুধু আমাদের জন্য নয় এটা বাংলাদেশের জন্য... এবং সরকার প্রধানসহ তাদের সবার জন্য লজ্জাজনক।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এর আগেও দেখেছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম যিনি ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন সেখানে। তার সঙ্গেও এমন একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এই প্রথম জায়গাটিতে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে এবং ওই দেশে যারা আমাদের কাউন্সিলররা রয়েছে। তাদের কাউকেই স্টিকলি কোন একশন নিতে আমরা দেখিনি। এবং আমরা মনে করি এটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুর্বলতা। এই দুর্বলতা তারা প্রত্যেকটি জায়গায় দেখি আসছেন বলেই অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের প্রতি মানুষের যে আস্থার যায়গাটা সেটা কিন্তু কমে আসছে। এবং আমরা মনে করি যে তারা যে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার। ওইটুকু বরলেস তারা কাজের মাধ্যমে দেখাতে পারতেছে না। কারণ আওয়ামী লীগের যে কালপিটগুলো ওই জায়গায় গিয়ে জড়ো হয়েছে। এই তথ্যগুলো বা এরকম ঘটনা ঘটাতে পারে তাদের কাছে ছিল এবং তাদের কাউন্সিলর প্রশাসনের মাধ্যমে তারা এগুলোর ব্যবস্থা নিতে পারেনি।’

তিনি এ ঘটনার তদন্ত দাবি করে বলেন, ‘আমরা চাই তদন্ত সাপেক্ষে এমনকি যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা এটার সঙ্গে জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধে যেন  কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কারণ যারা অইখানে আছেন আওয়ামী লীগের যে কালপিট গুলো ফ্যাসিস্টের দোষরগুলো আছে তারা কেউই বাংলাদেশের ইউএস অ্যাম্বেসি তাদের নথিপত্র কিংবা তাদের পাসপোর্ট এর সাথে যে তথ্য সম্পর্কে এগুলোর বাহিরে না। আমাদের জায়গাতে তাদের দৃশ্যমান কঠোর ব্যবস্থা এবং বিচার প্রত্যাশা করি। এবং অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের একটি কথা বলতে চাই  বিবৃতির মধ্য দিয়ে নিজের দায় সারা যে মনোভাব সেখান থেকে বের হয়ে  আসতে হবে। আর অল্প কিছুদিন সময় আপনাদের ভাষ্য অনুযায়ী আছে। তার আগে যদি আপনাদের ন্যূনতম দায়বদ্ধতা পূরণ করতে না পারেন, তাহলে বাংলাদেশের মানুষের সামনে আর মূখ দেখানো সম্ভব হবে না।’

এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক এহতেশাম হকের পরিচালনায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সারজিস আলম আরো বলেন, ‘যতটা নিয়মকানুন ও আইন রয়েছে, আমরা প্রত্যেকটা আইনকানুন যাচাই-বাছাই করেছি। আমরা কোনো জাতীয় প্রতীক আমাদের মার্কা হিসেবে আবেদন করিনি। জাতীয় প্রতীকে সংবিধানের যে রেজুলেশন রয়েছে, সেটা অনুযায়ী শুধুমাত্র শাপলা জাতীয় প্রতীক না। সেইখান থেকে যদি একটা অংশ ধানের শীষ বা ধানের ছড়া, আমরা রাজনৈতিক দলের একটি মার্কা দেখি, আমরা তারা একটি মার্কা দেখি। কোনো আইনগত বাঁধা না থাকার কারণে আমরা আমাদের জায়গা থেকে শাপলা জাতীয় প্রতিকের একটি অংশ হিসেবে আমরা মার্কা হিসেবে চেয়েছি। গতকাল নির্বাচন কমিশনের সচিব বলেছেন, তার নির্বাচনী প্রতীকে শাপলা নেই। উনি কোনো আইনগত বাঁধার কথা বলেন নি। আমরা তো কয়েকমাস আগে আবেদন করেছি। এরমধ্যে তো অনেক সংশোধন হয়েছে। এবং তারা যদি চায়, তালিকা সংশোধন করতে পারে।’

মার্কা যোগ করবে না বিয়োগ করবে, এটাতো তাদের কাজ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘তারা যখন সেই কাজ করে না, আমরা মনে করি এখানে তাদের হয় সদিচ্ছার অভাব আছে, অথবা তারা কোনো ব্যক্তি, দল বা প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রভাবিত। একটা অভ্যুত্থান পরবর্তী স্বাধীন দেশে একটি প্রতিষ্ঠান কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। তারা যদি অন্যায়ভাবে আমাদের ওপর এটা চাপিয়ে দেয়, তাহলে আমরা রাজনৈতিক দল হিসেবে সেটা রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করবো রাজপথে সেই কথাটা বলেছি। এনসিপির মার্কা চাওয়া থেকে শুরু করে কারো যদি নার্ভ ঠান্ডা হয়ে যায়, তাদেরকে বলতে চাই এটাতো শুধুমাত্র মার্কা। বাংলাদেশের ঐক্যবদ্ধ তরুণসমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নামবে। এটার জন্য আপনাদের নার্ভ শক্ত করে নেন, সেই দিন আর বেশি দূরে নয়।’ 

সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা বারবার বলে আসছি এই নির্বাচনের আগে দৃশ্যমান বিচার দেখতে চাই। আমাদের বাংলাদেশের ইতিহাসে বারবার হয়ে আসছে। একটা জিনিস আদায় করতে না পারলে, পরবর্তীতে অনেকে ক্ষমতায় এসে সেগুলো ভুলে যায়। নিজেদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে। সেই লক্ষ্য আমাদের জায়গা থেকে আমাদের কমিটমেন্ট, শহীদ ও আহতদের জন্য আমাদের সবটুকু দিয়ে লড়াই করে যাবো।’

সারজিস বলেন, ‘জরিপ কোন কোন প্রতিষ্ঠান করেছে, সেটা আমার চোখে পড়ে নাই। তারপরও আমি বলি, এরকম জরিপে কিছুদিন পূর্বেও বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভোটের বিভিন্ন পার্সেন্ট দেখানো হয়েছিল। অনেকেই অনেকের জায়গা থেকে বলেছেন এইবার একটা আসন পাবেন, এইবার একটা আসন পাবেন। কিন্তু, আমরা ছাত্র সংসদ নির্বাচনে একেক ধরনের অবস্থা দেখেছি। আমরা যখন মাঠ পর্যায়ে যাচ্ছি, তখন মানুষের আশা দেখছি। মানুষ আমাদের বলে ভাই আপনারা প্রত্যেকটা গ্রামে গ্রামে যান, মানুষ এখনো আপনাদের অপেক্ষায় আছে। সো, আমরা আমাদের জায়গা থেকে এটা মনে করি বাংলাদেশের মানুষ এখন আওয়ামী লীগের কথা বলেন, যেই আওয়ামী লীগের নেত্রী খুনী হাসিনা, যেই আওয়ামী লীগ বিডিআর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, শাপলা ম্যাসাকার ঘটিয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হাজারেরও অধিক মানুষকে খুন করেছে, সেই আওয়ামী লীগের স্বপ্ন যদি বাংলাদেশে নিয়ে আসে, বাংলাদেশের মানুষ ওই খুনী হাসিনার ওপর থুথু ছুড়বে। বাংলাদেশের মানুষ এখনো তাদের জায়গা থেকে এতটা ক্ষিপ্ত, খুনী শেখ হাসিনা ভারতে আছে দেখে বাংলাদেশের মানুষ ভারত নামটা শুনলে এখনো মনের জায়গা থেকে ভারতীয় আধিপত্যবাদের কথা মাথায় ভেসে উঠে। এবং মানুষ এবং মানুষের ভেতরে একটা কট্টর ভারত বিরোধী সেন্টিমেন্ট দেখতে পারবেন। এই বাংলাদেশে আমরা স্পট করে বলি, খুনি হাসিনা বা তার পরিবারের কেউ, ওই কালপিটগুলো তাদের নামে আর বাংলাদেশে তারা কখনো আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। দ্বিতীয়ত তাদের যারা দোসর ছিল, যারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ বানিয়েছে, আওয়ামী লীগের সরকার বানিয়েছে, সরকারের বৈধতা দিয়েছে, তাদেরও আগামীতে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। গণতন্ত্র ধ্বংস করে তাদের জন্য যদি গণতন্ত্রের প্রয়োজন হয়, তাহলে এর চেয়ে হাস্যকর কথা আর হতে পারে না। সো, আমরা স্পষ্ট করে আমাদের জায়গা থেকে একটা কথা বলি, আগামীতে জনগণের ভোটে, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার গঠন হবে।’

এনসিপির উত্তরাঞ্চলের এই নেতা বলেন, ‘আমাদের জায়গা থেকে সংস্কারের জন্য বারবার চাচ্ছি এবং জুলাই সনদের যেন আইনী ভিত্তি থাকে, এটা আমরাই চাচ্ছি। আমরা বারবার বলছি আমরা নির্বাচন চাই। এই নির্বাচন যদি ডিসেম্বরেও হয়, তাহলে আমাদের সমস্যা নাই। কিন্তু, এই যে রক্তক্ষয়ী একটা অভ্যুত্থান হলো, এটা কিন্তু এই নির্বাচনের জন্য হয়নি। অন্তত কিছু মৌলিক সংস্কার করে নির্বাচন হোক। যারা এতগুলো মানুষ খুন করলো, তাদের বিচারিক প্রক্রিয়া আমরা দেখতে চাই। খুনী হাসিনা, কামালের মতো যারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিল, তাদের ১৫/২০ জনের বিচার দেখতে পারি, তাও আমরা আস্থা রাখতে পারি আগামীতে এই বিচারিক প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে। আমরা এটা চাই।’ 

সারজিস আলম জানান, ‘অক্টোবরের মধ্যে আমরা বাংলাদেশের প্রত্যকটি জেলা ও উপজেলায় আমাদের আহবায়ক কমিটি গঠন করবো। এবং নভেম্বর মাসের মধ্যে আমাদের প্রত্যেকটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে আহবায়ক কমিটি গঠন করবো। আমরা মনে করি আমাদের সাংগঠনিক কাঠামো যদি শক্তিশালী হয়, তাহলে সিলেট বিভাগের প্রত্যেকটি আসনে জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আমাদের যে প্রার্থী সেই প্রার্থীকে আমরা মনোনয়ন দিতে পারবো এবং আমরা প্রত্যেকটি আসনে সৎ এবং যোগ্য জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী যে প্রার্থীরা রয়েছেন, আমরা তাদেরকে জনগণের মার্কা হিসেবে আগামী সংসদ নির্বাচনে আমাদের জায়গা থেকে মনোনয়ন দিতে চাই।’

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব প্রীতম দাসসহ সিলেট জেলা ও মহানগর এনসিপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে সারজিস আলম সিলেট জেলা, মহানগর ও উপজেলা নেতৃবৃন্দের সমন্বয় সভায় যোগ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।


এএফ/০৩