করোনা সতর্কতা : ছুটি পাননি চা শ্রমিকরা

সজীব দেবরায়, কমলগঞ্জ


মার্চ ২৮, ২০২০
০৮:২৯ অপরাহ্ন


আপডেট : মার্চ ২৯, ২০২০
০৬:৫১ অপরাহ্ন



করোনা সতর্কতা : ছুটি পাননি চা শ্রমিকরা

বাংলাদেশ চা বোর্ড কর্তৃক নিবন্ধনকৃত ১৬৭টি চা-বাগান রয়েছে দেশে। আর এই বাগানগুলোতে কর্মরত আছেন প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার চা শ্রমিক। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ এ সময়ে অন্য সব প্রতিষ্ঠানে ছুটি দেওয়া হলেও এখনও ছুটি পাননি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকা চা শ্রমিকরা।

 

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের একাধিক চা-বাগানের শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, উপজেলার অধিকাংশ চা-বাগান এলাকাগুলোতে করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব নিয়ে তেমন মাতামাতি নেই। কিছু কিছু বাগানে সচেতনামূলক প্রচার চালানো হয়েছে। বিতরণ করা হয়েছে মাস্ক ও হ্যান্ড সেনিটাইজার। এমন অবস্থায় তাদের কাজ-কর্মেও কোনো বিরতি দেয়নি কোম্পানিগুলো। দেশের দুর্যোগপূর্ণ এ সময়ে চা-বাগানগুলো বন্ধ রাখলে তা সবার জন্যই উপকারী হতো বলে জানা তারা।

 

এদিকে, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে কমলগঞ্জ উপজেলার চা-বাগানসমূহে থাকা সব দেশীয় মদের পাট্টা (দোকান) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। কমলগঞ্জ উপজেলাভ নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ নির্দেশনা দেন। এ আদেশ আমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়। তাছাড়া করোনাভাইরাস যাতে চা-বাগান এলাকায় সংক্রমিত না হয়, সেজন্য বাগান এলাকায় বহিরাগত মানুষের আনাগোনা বন্ধের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

 

চা শ্রমিক সন্তানদের সংগঠন জাগরণ যুব ফোরামের সভাপতি মোহন রবিদাস বলেন, মরণব্যাধী করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার সারাদেশে কিছুদিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে। অথচ চা শ্রমিকদের এ ছুটির বাইরে রাখা হয়েছে। এটা চা শ্রমিকদের প্রতি সরকার ও চা কোম্পানিগুলোর অবহেলা। অবিলম্বে সকল চা-বাগানসমূহে মজুরিসহ ছুটি দেওয়া হোক। পুলিশি অভিযান চালিয়ে চা-বাগানগুলোতে খোলা মদের পাট্টা বন্ধ করা হোক। চা-বাগানে বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকাতে পুলিশি চেকপোস্ট বসানো হোক ও করোনাভাইরাসের হাত থেকে নিরীহ চা শ্রমিকদের রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান তিনি।

 

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রামভজন কৈরি বলেন, নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সারাদেশের মত চা শ্রমিকদেরও এই সরকারি ছুটির অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে ইতোমধ্যেই শ্রম মন্ত্রণালয় ও চা-বাগান মালিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশের চা সংসদের কাছে লিখিত আবেদন পাঠানো হয়েছে।

 

অপরদিকে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ছুটি স্বাস্থ্য সচেতনতায় গুরুত্বপূর্ণ দাবি করে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ৫টি চা-বাগানের চা শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে নিজ নিজ ঘরে অবস্থান নিয়ে স্বেচ্ছায় ছুটি ভোগ শুরু করেছেন।

 

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-ধলই ভ্যালির (অঞ্চলের) কার্যকরী কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাশ পাইনকা, শমশেরনগর চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রীকান্ত কানু গোপাল ও শ্রমিক নেতা সীতারাম বীন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত সরকারি ছুটি ভোগ করতেই এই কর্মবিরতি। এই কর্মবিরতিই সরকারি ছুটি ভোগ করছেন চা শ্রমিকরা। শুক্রবার (২৭ মার্চ) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত শমশেরনগর, কানিহাটি, দেওছড়া, বাঘিছড়া ও ডবলছড়া চা-বাগানের চা শ্রমিকরা সরকারি ছুটি ভোগ করবেন।