সুরক্ষা ছাড়াই সেবা দিচ্ছে সুনামগঞ্জের ২৫৬ কমিউনিটি ক্লিনিক

শামস শামীম, সুনামগঞ্জ


মার্চ ৩১, ২০২০
১০:৩২ অপরাহ্ন


আপডেট : মার্চ ৩১, ২০২০
১০:৩২ অপরাহ্ন



সুরক্ষা ছাড়াই সেবা দিচ্ছে সুনামগঞ্জের ২৫৬ কমিউনিটি ক্লিনিক
করোনার ঝুঁকিতে ক্লিনিকের কর্মীরা

করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময়ে সুনামগঞ্জে ২৫৬টি কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীরা সরকার প্রদত্ত কোনো সুরক্ষা ছাড়াই ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিচ্ছেন। গ্রাম এলাকায় ক্লিনিকের অবস্থান হওয়ায় অসচেতন মানুষজন প্রতিদিনই ভিড় করছেন ক্লিনিকে। তাছাড়া সরকারিভাবে ক্লিনিকের কর্মীরা মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সুরক্ষা দ্রব্যাদি এখনও পাননি। এ নিয়ে কর্মীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৮৮টি ইউনিয়নে ২৫৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। ক্লিনিকে সর্দি, কাশি, জ্বরসহ ছোটখাটো রোগ নিয়ে সপ্তাহে ৬ দিন ভিড় করেন রোগীরা। ক্লিনিকে বর্তমানে সরকার ৩২ প্রজাতির ওষুধ বিনামূল্যে দিয়ে থাকে। কমিউনিটি ক্লিনিকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে রোগী কমলেও কমিউনিটি ক্লিনিকে আসা-যাওয়ার সহজলভ্যতা ও গ্রাম এলাকায় অবস্থানের কারণে রোগীর সংখ্যা তেমন কমেনি। এখনও প্রতিদিন গ্রামীণ রোগীরা ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসছেন দলে দলে। তারা মাস্ক বা গ্লাভস ব্যবহার না করে হুট করেই ক্লিনিকে ঢুকে স্বাস্থ্যকর্মীদের টেবিলে চলে আসেন তারা। ক্লিনিকের কর্মীরাও তাদেরকে বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।

কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীরা জানান, গ্রাম এলাকায় বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীরা এসেছেন। তারা তেমনভাবে হোম কোয়ারেন্টিন মানছেন না। তাদের স্বজনরাই নিজ গ্রাম বা পাড়ায় ক্লিনিকের অবস্থানের কারণে চিকিৎসা নিতে আসছেন। এতে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি রয়েছে। তাছাড়া এখন পর্যন্ত ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সরকারিভাবে মাস্ক, স্যানিটাইজার বা সুরক্ষা দ্রব্যাদি দেওয়া হয়নি। কর্মীরা অনেকে নিজ উদ্যোগে মাস্ক বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে সেবা দিচ্ছেন। তবে প্রত্যন্ত এলাকায় ক্লিনিকের অবস্থার কারণে তাদের অনেকেই মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা গ্লাভসও সংগ্রহ করতে পারেননি বলে জানা গেছে। যার ফলে তাদেরকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময়ে ঝুঁকি নিয়েই সেবা দিতে হচ্ছে।

সরেজমিনে সদর উপজেলার মাইজবাড়ি, গুদারগাঁও ও মনোহরপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটিতেই ১৫ থেকে ২০ জন রোগী রয়েছেন। তারা সরাসরি ক্লিনিকের কর্মীর কক্ষে গিয়ে ভিড় করে বসে আছেন। তাদের কারোরই মুখে মাস্ক নেই। পাশাপাশি গল্প করে এসেছেন, আবার ক্লিনিকে এসেও বসে বসে গল্প করছেন। কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীরা তাদেরকে নিরাপদ দূরত্বে থেকে সেবা নেওয়ার অনুরোধ জানালেও তারা কেউ তা মানছেন না।

বেলা ১১টায় মাইজবাড়ি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, ওই ক্লিনিকে কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার মাহবুব আলম সেবা দিচ্ছেন। তার কক্ষে তখন ১০-১২ জন রোগী পাশাপাশি বসে আছেন। তিনি তাদেরকে ভিড় না করে একজন একজন করে আসার অনুরোধ জানালেও তারা কেউ তা মানছেন না।

সেবা নিতে আসা মাইজবাড়ি গ্রামের আমিরুন নেসা বলেন, ক্লিনিকটি আমাদের বাড়ির কাছে। তাই ছোটখাটো রোগ হলেই হাসপাতালে ছুটে আসি। আমার মতো সবারই একই অবস্থা। আজ পেটে ব্যথা নিয়ে ওষুধ নিতে এসেছি।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কথা শুনেছি। আমরা গ্রামের মানুষ অতশত বুঝি না। আমরা আগের মতোই চলাফেরা করি।

মাইজবাড়ি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার মাহবুব আলম রাজন বলেন, এখনও প্রতিদিন ২০-৩০ জন রোগী আসেন। তাছাড়া প্রতিটি গ্রামেই প্রবাসীরা দেশে এসেছেন। তাদের অসচেতন স্বজনরাই কোনো প্রতিরক্ষা ছাড়া এসে হুট করে কক্ষে ঢুকে যাচ্ছেন। ভিড় না করার অনুরোধ জানালেও তারা কেউ মানেন না।

তিনি বলেন, গ্রামের অসচেতন মানুষদের নিয়ে আমাদের কাজ। তাই আমাদের সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া জরুরি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা কিছুই পাইনি। সেবার পাশাপাশি আমরা তৃণমূলে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রচার চালাচ্ছি।

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. শামসুদ্দিন বলেন, আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা দিয়েছি। তাছাড়া প্রতি উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীদের সুরক্ষার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। তবে কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীরা এখনও ঝুঁকিতে আছেন।