করোনা সংকট কাটলে তিন সপ্তাহে এসএসসির ফল

সিলেট মিরর ডেস্ক


এপ্রিল ২১, ২০২০
০৫:১২ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ২১, ২০২০
০৫:৪৩ অপরাহ্ন



করোনা সংকট কাটলে তিন সপ্তাহে এসএসসির ফল

ছবি- সংগৃহিত

করোনাভাইরাস বিপর্যয় কেটে গেলে দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যেই এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ করা যাবে।

আজ মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) শিক্ষা বোর্ডেগুলো প্রস্তুতি সম্পর্কে অনলাইনে ভার্চুয়াল কনফারেন্স করবেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রস্তুতি প্রকাশ সম্পর্কে বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অধিকাংশ বোর্ডে ফল তৈরির তিন-চতুর্থাংশ কাজ সম্পন্ন করেছে। ব্যতিক্রম রয়েছে

বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। অন্য বোর্ডের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কয়েক জেলাভিত্তিক। এই দুই বোর্ডের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেশজুড়ে। ফলে তাদের প্রস্তুতি তুলনামূলক পিছিয়ে।

জানা গেছে, গত বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ফল প্রকাশ করা হয়েছিল ৬ মে। পরীক্ষা শুরু হয় ১ ফেব্রুয়ারি। এবার ফল প্রকাশের সম্ভাব্য দিন আগামী ৯ মে। এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ৩ ফেব্রুয়ারি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, করোনা বিপর্যয়ের মধ্যে আমরা (কর্মকর্তারা) দপ্তরে উপস্থিত না হলেও নিজেদের মধ্যে ভার্চুয়াল যোগাযোগ অব্যাহত আছে। মন্ত্রণালয়াধীন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিয়মিত ভার্চুয়াল যোগাযোগ হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সার্বক্ষণিক নানা বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। এটি আবার সংশ্লিষ্টদের বাস্তবায়নের জন্য জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশের জন্য কতটুকু প্রস্তুতি অগ্রগতি জানতে মঙ্গলবার (আজ) সকালে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের সচিব মুনশি শাহাবউদ্দিন অনলাইনে সব বোর্ড চেয়ারম্যানদের নিয়ে কনফারেন্স করবেন।

বোর্ড চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন, পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের একটি রীতি চালু হয়েছে। এই রীতি অনুযায়ী বিগত ১০ বছর জেএসসি ও সমমান, এসএসসি ও সমমান, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। দীর্ঘদিনের রীতি এবার ব্যত্যয় হওয়ার আশঙ্কা করছেন। করোনা সংক্রমণ এড়াতে সরকার সারাদেশে যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে। এ কারণে মাঠ পর্যায়ের পাঠানো শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র শিক্ষকরা মূল্যায়ন শেষ করে নম্বরপত্র (ওএমআরশিট) বোর্ডে পৌঁছাতে পারেননি। এই ওএমআর শিট স্ক্যান করে কম্পিউটারাইজড ডেটা তৈরিতে বোর্ডের কিছুদিন সময় লাগে।

এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল ছালাম গতকাল বিকালে জানান, যাতায়াতে ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় প্রধান পরীক্ষকদের ওএমআর শিট বোর্ডে জমা দিতে আসতে পারছেন না। এগুলো আসলে সর্বোচ্চ ২০ দিনের মধ্যেই ফল প্রস্তুত করা যাবে।

যশোর শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান ড. মোল্লা আমীর হোসেন জানান, তারা স্বউদ্যোগে জেলা পর্যায়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে উত্তরপত্র আনার উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু অন্য বোর্ডের ফল প্রস্তুত একই সময়ে না হওয়ায় তিনি নিজ উদ্যোগ থেকে সরে যান। তিনি মনে করেন, ৮-১০ দিন সময় লাগবে ফল প্রস্তুত করতে।

সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামাল আহমেদ জানান, এসএসসির ফল প্রকাশের প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করেছেন। বাকি কাজ সম্পন্ন করতে ৫ থেকে ৭ কর্মদিবস লাগবে।

বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস এবং দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবু বক্কও সিদ্দিক জানান, করোনার ছুটি না থাকলে ৮ থেকে ১০ কর্মদিবসে পূর্ণ ফল প্রস্তুত করা যাবে।

ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. গাজী হাসান কামাল জানান, এসএসসির ফল প্রকাশের প্রায় ৭০ ভাগ হয়েছে। বাকি কাজ শেষ করতে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগবে। এই বোর্ড থেকে এবার প্রথম ব্যাচ এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।

বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কায়সার আহমেদ জানান, দাখিলের ফল প্রকাশের প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৩০ শতাংশ কাজ শেষ করতে ২০ থেকে ৩০ দিন সময় লাগবে। সীমিত আকারেও যদি যানবাহান চলাচল শুরু করে, সারাদেশ থেকে ফলের ওএমআরশিট বোর্ডে জাম দিতে পারবেন প্রধান পরীক্ষকরা। এর পর বোর্ড ফল প্রস্তুত করতে প্রয়োজনে দুই শিফটে কাজ করবে।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মোরাদ হোসেন মোল্লা জানিয়েছেন, পরীক্ষকদের কাছে উত্তরপত্র আছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হলে এগুলো বোর্ডে এনে ফল প্রস্তুতি করতে বেশি সময় লাগবে না। তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দেশব্যাপী। সাধারণ বোর্ডের চেয়ে একটু বেশি সময় লাগবে শিক্ষকদের তথ্য পেতে।

এ বছর প্রায় সাড়ে ২০ লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নেয় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায়। মোট ৩ হাজার ৫১২টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় এই পরীক্ষা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে এবার মোট পরীক্ষার্থী ২০ লাখ ৪৭ হাজার ৭৭৯ জন।

পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল গত ১ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু সরস্বতী পূজার কারণে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন পিছিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। আর এ কারণে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও পিছিয়ে ৩ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষা শুরু হয়।

 

এএফ/০৩