হাম নিয়ে অশনি সঙ্কেত

সিলেট মিরর ডেস্ক


এপ্রিল ৩০, ২০২০
০৪:৫৭ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ৩০, ২০২০
০৭:২০ অপরাহ্ন



হাম নিয়ে অশনি সঙ্কেত

বাংলাদেশসহ বেশ কিছু দেশে ব্যাপকভাবে শিশুরা হামে আক্রান্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ। কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেই ইউনিসেফ গতকাল বুধবার (২৯ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শিশুরা যদি তাদের জীবনরক্ষাকারী ভ্যাকসিন না পায়, তাহলে দক্ষিণ এশিয়াকে স্বাস্থ্যখাতে আরেকটি জরুরি অবস্থার মুখোমুখি হতে হবে।

বাংলাদেশের শিশুরা ৯ থেকে ১৫ মাসের মধ্যে হামের প্রথম ডোজ টিকা এমআর-১ এবং ১৮ মাস বয়সে দ্বিতীয় ডোজ টিকা পেয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় বাংলাদেশ ২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে ১১ এপ্রিল মেয়াদে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনার প্রস্তুতি নিয়েছিল। কোভিড-১৯ এর কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। এই কর্মসূচির দশ বছর বয়স পর্যন্ত ৩ কোটি ৪০ লাখ শিশুকে হামের টিকা দেওয়ার কথা ছিল।

হাম ভাইরাসজনিত রোগ। চিকিৎসকেরা বলছেন, এ রোগে আক্রান্ত শিশুর প্রচণ্ড জ্বর থাকে এবং এই জ্বর চার থেকে সাতদিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। শিশুর নাক ও চোখ দিয়ে পানি পড়ে, চোখ লাল হয়ে যায়। গালে সাদা ছোপছাপ দেখা যায়। এরপর মুখমন্ডল ও গলার ওপর থেকে র‌্যাশ বের হয় এবং হাতে পায়ে ছড়ায়। সবচেয়ে সংক্রামক ব্যাধির একটি হাম। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ায় এবং দুই ঘণ্টা পর্যন্ত ভাইরাস টিকে থাকে। শরীরে র‌্যাশ বের হওয়ার চারদিন আগে থেকে পরবর্তী চারদিন পর্যন্ত রোগটি বেশি ছড়ায়।

বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ হাম। ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, হাম পরবর্তী শারীরিক জটিলতায় শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। মারাত্মক ছোঁয়াচে এই রোগের কারণে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একরকম নষ্ট হয়ে যায়, শিশু মস্তিষ্কে সংক্রমণ (এনকেফেলাইটিস), নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও যক্ষ্মায় ভুগে মারা যেতে পারে।

সামগ্রিক কর্মসূচিতেই অচলাবস্থা : শুধু যে এই কর্মসূচিটিই বাতিল হয়েছ, তা নয়। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিও (ইপিআই) হোঁচট খেয়েছে কোভিড-১৯ এর কারণে। ইপিআই কর্মসূচির আওতায় শিশুরা জন্মের প্রথম দিন যক্ষ্মারোধী বিসিজি টিকা পায়, এরপর দুইবছর বয়সের মধ্যে বাকি টিকাগুলো পেয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে মুখে খাবার পোলিও, ধনুষ্টঙ্কার, ডিপথেরিয়া, হুপিংকফ, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হেপাটাইটিস বি, এক ধরনের নিউমোনিয়া, হাম ও রুবেলার প্রতিষেধক। এই টিকার আওতাভুক্ত শিশু ৩৭ লাখ।

বর্তমান পরিস্থিতি: বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ইপিআই কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, ২৫ মার্চ থেকে লকডাউন শুরু করার পর থেকেই অভিভাবকদের আতঙ্ক, লকডাউনের কারণে গৃহবন্দী হয়ে থাকা, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের ব্যস্ততা ও যোগাযোগের অসুবিধার কারণে টিকাদান কর্মসূচি ব্যাহত হচ্ছে। ন্যাশনাল পোলিও ও মিজলস ল্যাব দেশে হাম পরীক্ষার একমাত্র ল্যাব। সেটিতে এখন কোভিড-১৯ এর নমুনা পরীক্ষা চলছে।

এ ছাড়া শিশু ও সেবাদানকারীদের সুরক্ষার জন্য লক ডাউন এলাকায় টিকা কার্যক্রম চালাতে নিষেধ করা হয়েছে। যেসব জায়গায় লক ডাউন নেই, সেসব জায়গায় চলতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু অভিভাবকেরাই আসছেন না।

মহামারির কারণে এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে, এমন আশঙ্কার কথা করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পরপরই ঘোষণা করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ডব্লিউএইচও বলছে, মহামারির সময় যখন স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, তখন টিকা বা অন্য উপায়ে প্রতিরোধযোগ্য রোগে মৃত্যুহার বেড়ে যায়। ২০১৪-১৫ সালে যখন ইবোলার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, তখন হাম, ম্যালেরিয়া, এইচআইভি এইডস ও যক্ষ্মায় মৃত্যুর সংখ্যা ইবোলাকে ছাড়িয়ে যায়।

সমস্যা আরও: বুধবার ইউনিসেফ যে বিবৃতি দিয়েছে, এতে টিকা সরবরাহ নিয়েও সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ভ্যাকসিনের মজুদ বিশ্বের বেশ কিছু অঞ্চলে বিপজ্জনক মাত্রায় কমে গেছে। যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা ও ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ভ্যাক্সিনের উৎপাদনও কমে গেছে।

ইপিআই কর্মসূচি ব্যবস্থাপক মওলা বক্স বলেন, বাংলাদেশে হাম ও রুবেলার টিকা আসে কোপেনহেগেন থেকে। ভাড়া করা বিমানে টিকা আনার চিন্তা করা হচ্ছে। এ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের সঙ্গে তাঁদের নিয়মিত কথা হচ্ছে।

 

এনপি-০২