সাদা পোশাক সাদা মন

কুমকুম আবির


মে ১২, ২০২০
০৯:১৭ অপরাহ্ন


আপডেট : মে ১২, ২০২০
১০:০৪ অপরাহ্ন



সাদা পোশাক সাদা মন
আন্তর্জাতিক নার্সেস দিবস

এ বছর এমন এক সময় আন্তর্জাতিক নার্সেস দিবস পালিত হতে যাচ্ছে, যখন মানুষ চিকিৎসক আর সেবিকাদের সেবার ওপর ভীষণভাবে নির্ভর করছেন। মানব সেবায় অনন্য দায়িত্ব পালনকারী নার্সদের স্বীকৃতি ও সম্মান প্রদর্শনের দিন হলো ‘আন্তজাতিক নার্সেস দিবস’। প্রতি বছর মে মাসের ১২ তারিখে আন্তর্জাতিক নার্সিং দিবস পালিত হয়। ১৯৬৫ সাল থেকে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

বাংলাদেশেও এই দিবসটি ১৯৭৪ সাল থেকে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে পালিত হচ্ছে। আধুনিক নার্সিং এর প্রবর্তক মহীয়সী সেবিকা ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের সেবা কর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে তাঁর জন্মদিন ১২ মে আন্তজাতিক নার্স দিবস হিসাবে পালন করা হয়। 

তিনি ১৮২০ সালের ১২ মে ইতালীর ফ্লোরেন্স শহরে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। নাইটিংগেলকে আধুনিক নার্সিংয়ের প্রবর্তক বলা হয়। ২০২০ সালে এই মহীয়সী নারীর দুশো বছর পূর্ণ হলো। শুভ জন্মদিন।

নার্সিং একটা সেবামূলক পেশা। বিশ্বের হাজারোও পেশার ভিড়ে এই পেশাটি এখন দিনে দিনে জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে । বিশ্বের প্রতিটি দেশেই নার্সের চাহিদা রয়েছে।

‘নার্স মানেই মনে সাদা, পোশাকে সাদা আচরণ ও কর্মে সাদা ’। সবকিছুতেই যেন সাদার সমাহার । শান্তির প্রতীক এই সাদাকে তাঁরা মনে, মননে ধারণ করে জীবন / যৌবনকে উৎসর্গ করেন সাদার ভুবনে।’

সেবাই তাঁদের মূল ধর্ম, সেবাই তাঁদের ব্রত । রাত নেই, দিন নেই সংসার, পরিবার, সন্তানের অপত্য ¯েœহ তাঁদের সেবাধর্মী মনের কাছে অবহেলিত ও তুচ্ছ। অনেক সময় সন্তানের প্রাপ্য ভালবাসা টুকু দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন সাদা পোষাকের নারীরা। এখন কথা হলো, নার্সরা কি প্রাপ্য সম্মান ও সম্মানী পাচ্ছেন ?

নার্সিং পেশার পথটা প্রথমে কঠিন ছিল। এ পেশার গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। ভালো শিক্ষার্থীরা আসতে চাইত না। সমাজের মানুষ বিশেষ করে, ধর্মান্ধরা নার্সিং পেশাকে ভালো চোখে দেখত না। বরং এই মহৎ পেশার মহত্বকে কটু বাক্যবাণে তাঁরা জর্জরিত করত। এমনকি সুযোগ পেলে নানা অপপ্রচারও চালাতো। কিন্তু মহৎপ্রাণ কিছু মানুষ মানুষের সেবাকে জীবনের ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন। তাদের একান্ত প্রচেষ্টায় আজ নার্সিং পেশা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেছে। শুধু তাই নয় মানুষের আস্থাও অর্জন করেছে। 

বর্তমান করোনা কালীন সময়ে একজন চিকিৎসকের পাশাপাশি একজন নার্স যে কত কাক্সিক্ষত মানুষ তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

আসলে মানুষের সেবার মতো মহৎ উদ্দেশ্য আর কিছুতে হতে পারে না। তাই নার্সিং পেশা সকল প্রতিক‚লতা ও প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে, মানুষের সেবায় এগিয়ে চলেছে। এখন সমাজে নার্সিং পেশার কাজের গুণগত মানও বেড়েছে। তাই বলা যায়, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই পেশা এখন অনন্য একটি পেশায় পরিণত হয়েছে। এখন আর সেবিকাদের কেউ আড় চোখে দেখে না।

তবু আমাদের দেশে পেশাগত উৎকর্ষতার বদলে এই পেশার জড়িতরা নানা সময়ে বঞ্চনার শিকার হন। অবশ্য যাঁরা সরকারি চাকরি করছেন, তাঁরা অনেকটা ভালো অবস্থানে আছেন। কিন্তু যাঁরা বেসরকারি হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, তাদের আর্থিক বিষয়সহ নানা সমস্যায় পড়তে হয় প্রায়শই। বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, ব্যক্তি মালিকাধীন ক্লিনিক-হাসপাতালগুলি তাদের মর্জি অনুয়াযী নার্সদের বেতন-ভাতাদি প্রদান করে থাকেন। এ দেশের রোগীরা বেশি সেবা পাওয়ার আশায় ক্লিনিক কিংবা হাসপাতালে ভর্তি হন। অসুস্থ ব্যক্তির ওষুধের পাশাপাশি সেবাও অতি জরুরি। কিন্তু উন্নত বা মানসম্মত সেবা তখনেই ক্লিনিক মালিক দিতে পারবেন, যখন সেবা দানকারী প্রতিটি ব্যক্তিকে পরিশ্রমের সঠিক ও বাস্তব সম্মত মূল্য দিতে সক্ষম হবেন। এক্ষেত্রে, ক্লিনিক-হাসপাতালের মালিকদের উচিত নার্সদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা।

আমাদের দেশে অনেকগুলি সেবা খাত আছে । তারমধ্যে স্বাস্থ্য হচ্ছে অন্যতম। আমাদের চিকিৎসা খাতের প্রতি প্রথমে দেশের মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। বর্তমানে আমাদের দেশের বহু মানুষ চিকিৎসা সেবা নেওয়ার জন্য বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন । কারন একটাই ; এ দেশে মানসম্মত চিকিৎসা ও সেবা পাচ্ছেন না । কিন্তু চিকিৎসা শাস্ত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে তা বলা নিতান্তই ভাল হবে। এখানে শুধু অবিশ্বাসের সুর আর সঠিক সেবা না পাওয়ার অভিযোগ। এই ফাঁকে বিদেশে চিকিৎসার নামে চলে যাচ্ছে দেশের প্রচুর অর্থ।

বর্তমানে গোটা বিশ্ব এক বড় ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক ও সেবিকা পদে বড় একটি নিয়োগ দিয়েছেন। এটি আনন্দের কথা। পাশাপাশি বলব, নার্সদের যোগ্য সম্মান ও সম্মানী দেওয়াও আমাদের উচিত।

বিশ্ব নার্সেস দিবসে সেবার কাজে নিয়োজিত সকলের প্রতি ভালোবাসা।

 

লেখক : উদ্যোক্তা

 

এসএনএস-০১/এএফ-০৮