পুরো দক্ষিণ সুরমাই যেন বাস টার্মিনাল!

নিজস্ব প্রতিবেদক


নভেম্বর ১৬, ২০২১
১২:৫৯ পূর্বাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ১৬, ২০২১
০৪:৪২ অপরাহ্ন



পুরো দক্ষিণ সুরমাই যেন বাস টার্মিনাল!
কাজে ধীর গতি, জনদুর্ভোগ

সিলেটে একটি আধুনিক বাস টার্মিনাল নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। সে অনুযায়ী উদ্যোগও নেয় সিলেট সিটি করপোরেশন। দু’বছর আগে ২০১৯ সালে টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এক বছরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলে সেটা সম্ভব হয়নি। আর সেই থেকে টার্মিনালের বাসগুলো দখল করে নেয় দক্ষিণ সুরমার সড়কগুলো। বাসের ভিড়ে কোনটি সড়ক আর কোনটি টার্মিনাল তা ঠাহর করা যায় না। শত শত বাসের ভিড়ে হারিয়ে গেছে সিলেট রেল স্টেশনের প্রবেশ পথও। আর যানজট তো লেগেই থাকে সারাদিন। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় এ পথে চলাচলকারী হাজার হাজার মানুষকে।  

জানা যায়, ২০১৯ সালে সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ভেঙে নতুন টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০২০ সালের জুন মাসে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। নগর সংস্থার মতে, করোনার কারণে দীর্ঘদিন কাজ করা সম্ভব হয়নি। আগামী বছর মাঝামাঝি সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। টার্মিনালটি নির্মাণ কাজ শেষ হলে এটি আন্তর্জাতিক মানের একটি টার্মিনাল হবে বলে সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়। কিন্তু এর আগে গত দু বছর ধরে সড়ক দখল করে টার্মিনালের কাজ চালানোয় মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। 

সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে দক্ষিণ সুরমার সবগুলো সড়কই ছোট ছোট টার্মিনালে রূপ নিয়েছে। কদমতলী থেকে শুরু রেলস্টেশনের সামন হয়ে ভার্থখলা পর্যন্ত সড়কের দুপাশই বাসগুলোর দখলে থাকে সারাদিন। প্রতিদিন শত শত গাড়ি এই সড়ক দিয়েই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলাচল করে। কিন্তু টার্মিনাল না থাকায় সড়কে দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠানামা করে বাসগুলো। সড়কের দুপাশে ঢাকা-সিলেট রুটের বিভিন্ন ধরণের অভিজাত ও সাধারণ বাসের পাশাপাশি কোচ, মিনিবাসসহ নানা আকারের বাসের সারি। এমনকি সিলেট রেল স্টেশনের সামনের জায়গায়ও গড়ে উঠেছে ছোটোখাটো টার্মিনাল। এতে করে রেলের যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মাঝে মাঝে তৎপর হয়ে বাসগুলো বের করে প্রবেশ পথে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড দিলে কয়েকদিন দখলমুক্ত থাকে। আবারও ব্যারিকেড সরিয়ে বাস ঢুকিয়ে রাখেন চালকরা। 

দক্ষিণ সুরমার ভার্থখলার নছিবা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর বাবা রফিকুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘স্কুলে আসতে এই সড়ক ব্যবহার না করে উপায় নেই। কিন্তু এদিকে আসা আর জেনে শুনে বিষ পান একই কথা। কারণ যত্রতত্র বাস রাখার কারণে গত তিন বছরে কখনই এ সড়ক যানজট ছাড়া দেখিনি। আসা মানে যানজটে আটকা পড়া। তাছাড়া বাসের কারণে সড়কটাও ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। মেয়েকে আগে মা নিয়ে আসতেন। এখন এই বিপদজনক পথে তাদের পাঠাতে ভয় লাগে। তাই নিজের ব্যস্ততার মাঝেও মেয়েকে নিয়ে আমিই আসি।’

ব্যবসায়ী এখলাস আহমদ তন্ময় অভিযোগ করে বলেন, ‘সিলেটেই বড় হয়েছি। রাস্তাঘাট অনেকটা মুখস্ত। তারপরও আজকে রেলওয়ে স্টেশন খুঁজতে দশ মিনিট লেগে গেছে। একে যানজট তার উপর রেলওয়ে স্টেশনের সামনের পুরো রাস্তা ঢেকে গেছে বড় বড় বাসের আড়ালে। গেইট কোনদিকে টের পাওয়া যায় না। আামর এ অবস্থা হলে যারা বাইরে থেকে আসেন তাদের কথা একবার চিন্তা করে দেখেন।’

যত্রতত্র বাস দাঁড় করানোর কারণে যাত্রীরা যে চরম দুর্ভোগ পোহান বিষয়টি স্বীকার করে সিলেট জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হাজী ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘বাসের কারণে কিনব্রিজ থেকে টার্মিনাল পর্যন্ত সড়কে সারাদিন জ্যাম তাকে এটা ঠিক। কিন্তু আমরা নিরুপায় হয়ে বাসসহ যানবাহন রাস্তায় রাখি।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘টার্মিনালে বাস রাখতে না পারলেও গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে কিন্তু ঠিকই সিটি করপোরেশন নিয়মিত লিজের টাকা নিচ্ছে। বাস টার্মিনালের কাজের জন্য গাড়ি রাস্তায় রাখতে হচ্ছে। কিন্তু কাজটি দ্রুত শেষ করার কোনো তাগাদা সিসিকের নেই। গত ৭-৮ মাস ধরে টার্মিনালের কাজ বন্ধ। ফলে মানুষের পাশাপাশি আমাদেরও দুর্ভোগ দীর্ঘায়িত হচ্ছে।’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি সিলেটের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল কবির পলাশ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানের বাস টার্মিনাল হচ্ছে এটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু তার জন্য সাধারণ মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ২০২০ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ধীর গতির কারণে কবে কাজ শেষ হবে আর কবে সাধারণ মানুষ এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে কে জানে।’

টার্মিনালের কাজ শুরুর সময় বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না করায় চালকদের অনেকটা বাধ্য হয়ে রাস্তার পাশে বাস রাখতে হচ্ছে বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে আমরাও বিষয়টি বুঝতে পারি। যতটা সম্ভবত দ্রুত আমরা কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি।’

কবে নাগাদ কাজ শেষ হতে পারে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়ে গেছে। আগামী জুনের মধ্যে পুরো কাজ সম্পন্ন হবে বলে আমরা আশাবাদী।’

বাস টার্মিনাল নির্মাণে ৬৫ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি দেশের আধুনিক বাস টার্মিনাল হতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিকমানের বাস টার্মিনালের সব সুবিধা এখানে থাকবে।’

নির্মাণ কাজের ধীর গতি এবং গত সাত-আট মাস থেকে কাজ বন্ধ থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কাজ বন্ধ রাখা হয়নি। চলছে। তবে টার্মিনালের ছাদের জন সিসকো শিট আমদানি করা হচ্ছে। এগুলো চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এসে পৌঁছাবে। এগুলো এলেই আবার পুরোদমে কাজ শুরু হবে।’

আরসি-০২