নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি

ধ্রুব জ্যোতি দে


মে ১৪, ২০২০
০৩:৩৮ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ১৪, ২০২০
০৩:৩৮ পূর্বাহ্ন



নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি

 

বিশ্ব কাঁপছে করোনাভাইরাসে। এর জের হিসেবে সারাদেশে লকডাউন চলছে। বলতে গেলে সবাই ঘরবন্দি। 

তবে দুঃখের বিষয় এই লকডাউনের মধ্যেও মানুষ অনিয়মের মধ্যে চলছে । কেউ শুনছে না ইচ্ছে করে। আবার কেউ বাধ্য হয়ে শুনতে পারছে না। গার্মেন্টস মালিকদেরও চলছে ‘লকডাউন-খেলা’। তারা শ্রমিকদের কথা ভাবছেন না মোটেই। এই অনিয়মের কারণে দেশ কোথায় যাবে ভেবেই পাচ্ছি না। 

এখন সব ধরনের শিল্পচর্চা বন্ধ রয়েছে। সবার কথা হচ্ছে, আগে আমাদেরকে বাঁচতে হবে। মূলত এখন বাঁচতে পারি কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন। আমি সত্যিকার অর্থে একটি মনের কথা বলতে চাই। সেটি হলো, আগে দেখব সৃষ্টিকর্তা আমাকে নতুন পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রাখেন কি না। যদি সেই পৃথিবীতে থাকবার সুযোগ পাই তবে নাটকের মধ্যে হোক আর অন্য কোনো মাধ্যমে হোক, প্রতিবাদে হোক চিৎকারে হোক, মানুষকে মানুষ হতে বলব প্রথমে। আর এটিই হবে-আমার সত্যিকার নাটক চর্চা। আসলে আমরা মঞ্চে যা করি, সবই তো মানুষকে উপলক্ষ করে।

নিজের চোখে দেখা, এ সময়ে খেটে খাওয়া মানুষগুলো সবচেয়ে কষ্টে আছে। খেটে খাওয়া মানুষগুলো যাদের অধীনে, তারা এখন দূরে থাকলে চলবে না। তাদের উচিত অধীনস্তদের পরিবারের দায়িত্ব নেওয়া। মোট কথা যার অধীনে যে আছে তাঁকেই সেই দায়িত্ব নিতে হবে। যেমন-গৃহকর্মী, ড্রাইভার, ক্লিনার, দারোয়ান এরকম আরও যারা আছেন। আমাদের উচিত আত্মীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধবদের পাশে দাঁড়ানো। সেটা নিজেকে নিঃশেষ করে করতে হবে এমনও নয়। আমরা বাড়তি বিলাসের যে অপচয় করি, সেই অর্থেই তাদের সাহায্য করা যাবে। আমার মনে হয়, মানবসেবাই মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে।

এছাড়া এই সময়ে আমাদের সচেতন হতে হবে সবার আগে। করোনা ভাইরাসের এই কালে সচেতন না হয়ে উপায় নেই। লকডাউনের কারণে মঞ্চ বন্ধ। মঞ্চের কর্মীরা মানুষের দোরগোড়ায় খাদ্য নিয়ে ছুটছে। আমরা মনে করি, আমরা মানুষের জন্য কাজ করি। তাই অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে আমরা নাটক-থিয়েটারের কাজ ফেলে ত্রাণ বিতরণে সময় দিচ্ছি। সিলেটে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এই সংকটময় মুহূর্তে নিঃস্বার্থভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। আর বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার, বাংলাদেশ পথ নাটক পরিষদ এই সব সংগঠনগুলো তো সবসময়ই একটি পজেটিভ ভ‚মিকা পালন করে যাচ্ছেন । নাটক, নৃত্য, সংগীত আবৃত্তি, সবগুলো সংগঠন তাদের মত করে অবশ্যই বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে আছে। তবে আমি কখনোই বিশ্বাস করিনা ছবি তুলে ত্রাণ দিলেই তাকে সাহায্য করা বলে।

অনুরোধ থাকবে অসচ্ছল সংস্কৃতিকর্মী, শিল্পীসহ যারা এই সময়ে নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ, তাদের পাশে থাকতে হবে।

সবশেষে বলতে চাই, করোনা পরবর্তী সময়ে শুধু অর্থনৈতিক নয় আরও অনেক ক্রাইসিস দেশে দেখা যাবে। আমি বিশ্বাস করি, সংস্কৃতিকর্মীদের   শুধু মঞ্চে নয়, বাস্তব জীবনের জীবন্ত মানুষের পাশেও থাকতে হবে। মোট কথা, দুঃখী মানুষের ও দেশমাতার সেবায় কাজ করতে হবে। যখন যেভাবে প্রয়োজন, সেভাবেই হাত বাড়াতে হবে। 

আমরা শিল্পীরা একাত্তরে যেমন যুদ্ধ করেছি, এবারও সেভাবেই যুদ্ধে নামব। আমরা ভয় জয় করবো অবশ্যই। নাটক আমাদের মনের শক্তি, দেহের শক্তি। সার্বিক সুন্দর হয়ে ওঠার ইচ্ছাশক্তিও বটে। সব ভালো হোক, সুন্দর হোক। স্বচ্ছ সুন্দর নিষ্পাপ একটি পৃথিবীর আশায় আগামীর স্বপ্ন দেখি। 

লেখক : মঞ্চশিল্পী