ত্রাণ তৎপরতা : বিতরণকারীর নিরাপত্তা

মাসুমা আক্তার


মে ১৯, ২০২০
০৪:০১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ১৯, ২০২০
০৪:০১ পূর্বাহ্ন



ত্রাণ তৎপরতা : বিতরণকারীর নিরাপত্তা

দেশে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। এই বৃদ্ধির জন্য আমরা সাধারণ মানুষকে দোষারোপ করছি। এটি অমূলক নয়। কিন্তু কেবল সাধারণ মানুষ নয়, যারা মানুষকে নিরাপদে রাখার দায়িত্বে আছেন তাদের অনেক ভুল সিদ্ধান্তের কারণেও করোনাভাইরাসের বিস্তার বাড়ছে। বিশেষ করে প্রশাসনের দূরদর্শিতার অভাব ষ্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে।

উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদে ত্রাণের জন্য প্রতিদিন মানুষ আসছে। সেখানে যারা কাজ করেন, তারা অনিরাপদভাবেই ত্রাণ বিতরণের কাজ করছেন। আরও দেখা যায়, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এক সঙ্গে নিয়ে আসা হচ্ছে। ছোট একটি কক্ষে ৩০-৪০ জন বিতরণ কাজে সংশ্লিষ্টদের রাখা হচ্ছে। দেখা যায়, যারা সরকারি আদেশে বাধ্য হয়ে এসেছেন, তাদের ব্যক্তিগত ইকুপমেন্ট নেই বললেই চলে। 

প্রতিদিন ত্রাণ নিতে শত শত মানুষ ইউনিয়ন পরিষদে আসে। তাদের অনেকে পায়, অনেকে পায় না। বিফল মনোরথ নিয়ে তাদেরকে ফিরে যেতে হয়। কিন্তু সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো, যারা প্রকৃত অভাবী তারা কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ত্রাণ বা আর্থিক সহযোগিতা পাচ্ছে না। অনেক জনপ্রতিনিধি নিজেদের লোক, যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো, তাদেরকেই তারা হত-দরিদ্রদের তালিকায় রাখছেন। এতে প্রকৃত অসহায় মানুষগুলো বাদ পড়ছে। এদিকে সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তা যাচাইয়ের জন্য বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের লোকদের দ্বারা তা যাচাইয়ের জন্য দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাতে অনেক হেরফের হওয়ার সুযোগ থাকছে।

এখন কথা হলো, সরকার তো অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবার চেষ্টা করছে। কিন্তু যাদের হাতে বণ্টনের দায়িত্ব তারা মানুষকে নির্লজ্জের মতো ঠকালে, সেই পুরনো অভ্যাসেরই পুনরাবৃত্তি ছাড়া আর কিছু নয়। এক্ষত্রে বলতে চাই, যারা প্রশাসনে আছেন তাদের উচিত যাচাই-বাছাইয়ের কাজ সঠিকভাবে করা। রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তাদের উচিত, ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো।

তবে এই পাশে দাঁড়ানোর কাজ যাদের দিয়ে করানো হচ্ছে, তাদেরকে বিপদে ফেলে নয়, বরং নিরাপদে রেখে করতে হবে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা গেছে, দেশের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষকদেরও ত্রাণের যাচাই-বাছাইয়ের কাজ দেওয়া হয়েছে। এটি ভালো উদ্যোগ। তবে মনে রাখতে হবে, এই পদে শতকরা ৮০ ভাগ নারী। কিন্তু তারা যেভাবে নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে ছুটে বেড়াচ্ছেন, তাতে বিপদের আশঙ্কা করছি। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের তত্ত্ববধানে এইসব নারী শিক্ষকদের দায়িত্ব দেওয়া হলেও বিভিন্ন উপজেলায় তাদের সুরক্ষা বা নিরাপত্তার কথা ভাবা হচ্ছে না। সারা দেশের ন্যায় সিলেটেও আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। তাই সকলের নিরাপত্তা বিধান দায়িত্ব প্রদানকারীদের একান্ত কর্তব্য।

লেখক : শিক্ষক