করোনায় শিশুদের টিকা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত, উৎকণ্ঠায় অভিভাবকরা

সিলেট মিরর ডেস্ক


মে ২৯, ২০২০
০৩:৩৭ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ২৯, ২০২০
০৩:৩৭ পূর্বাহ্ন



করোনায় শিশুদের টিকা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত, উৎকণ্ঠায় অভিভাবকরা

বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে সাধারণ ছুটির কারণে অভিভাবকরা থাকছেন ঘরেই। ফলে অনেক শিশুর টিকা দেওয়ার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন অভিভাবকরা। শিশুদের টিকা দেওয়া কর্মসূচি বন্ধ থাকায় বিভিন্ন রকমের সংক্রমণের আশঙ্কা করছেন তারা। বিশেষ করে হাম-রুবেলার মতো গুরুত্বপূর্ণ টিকাদান বন্ধ থাকায় বেশি উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে টিকা সরবরাহ নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে যেসব এলাকা লকডাউন করা হয়েছে, সেসব স্থানে টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ রাখা হয়েছে। ঈদের পরে এ কার্যক্রম চালানোর বিষয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

এদিকে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ২৪টি দেশে হাম ও রুবেলার টিকাদান কার্যক্রম দেরিতে পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। এ ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা ছিল, যেসব দেশে হামের উপদ্রব নেই, সেসব দেশ করোনা মহামারির সময় এই টিকা সাময়িকভাবে বন্ধ থাকতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে পাহাড়ি এলাকায় এ বছর হাম-রুবেলার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। 

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ইপিআইয়ের আওতায় সারাদেশে মা ও শিশুকে ১০টি সংক্রামক রোগের নিয়মিত টিকা দেওয়া হয়। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বন্ধ থাকলেও অন্যান্যদিন গড়ে প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার কেন্দ্রে এ কর্মসূচি চলে। সিটি করপোরেশন, বিভিন্ন হাসপাতাল এবং উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালের স্থায়ী কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হয়। সিটি করপোরেশনের বাইরে সারাদেশে এক লাখ ২০ হাজার টিকাদান কেন্দ্র রয়েছে। কেন্দ্রগুলো অস্থায়ী এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যক্তিবিশেষের বাসাবাড়িতে অবস্থিত।

কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ওইসব বাড়ির লোকজনের বহিরাগতদের সমাগমে বিব্রত বোধ করা এবং করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় কেন্দ্রগুলো বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া ১৮ মার্চ থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে ৯ মাস থেকে ১০ বছরের নিচের প্রায় তিন কোটি ৪০ লাখ শিশুকে এক ডোজ করে ‘এমআর টিকা’ দেওয়ার ক্যাম্পেইন পরিচালিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে হাম ও রুবেলাসহ সব ধরনের টিকাদান কর্মসূচিই স্থগিত করা হয়। আবার উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকাদান কর্মসূচি চালু থাকলেও সাধারণ ছুটির কারণে পরিবহন বন্ধ থাকায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক মানুষই সন্তানকে নিয়ে যেতে পারছেন না কেন্দ্রে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধের প্রাথমিক সক্ষমতা গড়ে ওঠে টিকার মাধ্যমে। টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল। স¤প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) কারণে দেশে মা ও শিশুমৃত্যুর হার কমানোর পাশাপাশি পঙ্গুত্ব রোধ করা সম্ভব হয়েছে। তবে বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে এ প্রক্রিয়া কিছুটা বাধাগ্রস্ত হলেও খুব দ্রæতই এই সমস্যার সমাধান করা দরকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে, ইউনিসেফ জানিয়েছে, দেশে ২০১৯ সালের মার্চের তুলনায় ২০২০ সালের মার্চে শিশুদের টিকা নেওয়ার হার ২৫ শতাংশ কমেছে। আর মহামারির সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ কমে যাওয়ার ফলে যে ১০টি দেশে সবচেয়ে বেশি শিশুমৃত্যু ঘটার ঝুঁকি রয়েছে সেগুলো হলো, বাংলাদেশ, ব্রাজিল, কঙ্গো, ইথিওপিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, উগান্ডা ও তাঞ্জানিয়া। কোভিড-১৯ মহামারীর চাপে বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দুর্বল হতে থাকায় এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য সেবা বিঘিœত হওয়ায় আগামী ছয় মাসে প্রতিদিন অতিরিক্ত ৬,০০০ শিশু মারা যেতে পারে বলেও জানিয়েছে ইউনিসেফ।

জেএসএস-০২/বিএ-১৩