পৃথিবী আগের মতো হোক

নজরুল ইসলাম


জুন ০৬, ২০২০
০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ০৬, ২০২০
০৫:৩৭ পূর্বাহ্ন



পৃথিবী আগের মতো হোক

বেশিরভাগ বেসরকারি হাসপাতালে ICU আছে। কিন্তু আমাদের রোগী ICU এর অভাবে মারা যাচ্ছে। আমরা ICU কাজে লাগাতে পারছি না। আমি বলবো চিকিৎসক/চিকিৎসাকর্মী সেরাটাই দিয়ে যাচ্ছেন। নীতিনির্ধারকেরা আরও দূরদর্শী হলে ভালো হতো। চট্টগ্রামের মতো শহরে বিভাগের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার মায়ের চিকিৎসার সুযোগ না মিলা আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দূরাবস্থার বড় প্রমাণ। তিন মাস গেল এখনো আমরা বেসরকারিভাবে করোনার চিকিৎসার সুযোগ তৈরি করতে পারলাম না। বিশ্বে করোনা শনাক্তের ৬ মাস অতিবাহিত হতে যাচ্ছে এই আমাদের প্রস্তুতি? এখন শুনতে পাচ্ছি দেশ জানুয়ারি মাসে যে কাজ করার কথা ছিল সেটা আমরা জুন মাসে করার পরিকল্পনা করছি।

করোনার শুরুর দিকে লিখেছিলাম, যে সব হাসপাতালে ন্যূনতম ৫ টি বেড নিয়ে করোনার জন্য স্পেশালাইজড ইউনিট স্থাপন করার পরিকল্পনা নেওয়া উচিত। অনেক বিজ্ঞজনেরা বলেছিলেন এটা হলে করোনা ছড়াবে বেশি। এখন নিশ্চয়ই তাঁরা আমার সঙ্গে একমত হবেন।

আমরা আরও দেখলাম দেশের সবচাইতে বড় শিল্পপতি ভেন্টিলেটর পাচ্ছেন না। তাই এক ভাইয়ের ভেন্টিলেটর খুলে অন্য ভাইকে পরানো হলো যদিও সেই ভাইকে বাঁচানো যায়নি। আমরা শুধু ব্যাবসার চিন্তা করেছি। জীবন বাঁচাতে নিজের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির কথা ভাবিনি। আমাদের শিল্পপতিদের মনে ছিল আমরা আবার দেশে চিকিৎসা নেব নাকি? আমাদের সিঙ্গাপুর আছে। মধ্যবিত্তের আছে ইন্ডিয়া! করোনা আমাদের এসব ভ্রান্তি, স্বার্থপরতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।

আমরা সারা বছর ধর্মীয় বক্তাদের পিছনে কাড়িকাড়ি টাকা ব্যয় করি। অজস্র ঘন্টা সময় ব্যয় করে ধর্মীয় বক্তব্য শুনি। আমরা এতদিন ভাবতাম তারা আলেম (জ্ঞানী মানুষ)। কিন্তু দেখলাম ধর্মীয় বক্তারা ধর্মের নামে কুসংস্কার এবং মনগড়া বত্তব্য দিতেও সমান পারদর্শী। যদিও ঢালাওভাবে সবাই না। তবে এদের সংখ্যা কিন্তু কমও না। তাদের অন্ধ অনুসারীও ব্যাপক।

আমরা আরেক দল দেখলাম করোনার সুযোগ নিয়ে ধর্মের বিরুদ্ধেও বেশ ঘৃণা ছড়াচ্ছেন তারা কথায় কথায় বলেন, আপনাদের মসজিদ/মন্দির,গীর্জা করোনা থেকে মুক্তি দিতে পারলোনা! বিজ্ঞানের কাছেই যেতে হচ্ছে ! কী জঘন্য ধ্যান ধারণা! মুক্তমনার নামে ধর্মের প্রতি কেন এতো ঘৃণা? আমি কোনভাবেই কারও ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে ঘৃণা ছড়ানোকে ভালো কাজ মনে করি না। হ্যাঁ ধর্মের নামে কোন অধর্ম যদি সমাজের ক্ষতি করে সেটার বিরুদ্ধে অবশ্যই সজাগ থাকতে হবে। সবাই এক হয়ে সেটার বিষদাঁত ভেঙ্গে দিতে হবে।

আমরা যাঁরা ধর্ম বিশ্বাস করি তাঁরা এটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। যিনি আমাদের সৃষ্টি করতে পেরেছেন তিনি চাইলে করোনাও দূর করতে পারেন। আমার মতো অনেক বিশ্বাসী হয়তো রোজ আশা করে ঘুমাতে যান সকালে উঠে শুনবো আজ পৃথিবী করোনা মুক্ত আমরা আমাদের মুক্ত পৃথিবীতে মনের টানে ঘুরে বেড়াতে পারছি। জীবনের প্রয়োজনে বিনা ভয়ে সব জায়গায় যেতে পারছি। বুক ভরে খোলা মাঠে বসে শ্বাস নিতে পারছি। পৃথিবী আগের মতো হোক এই প্রত্যাশা। 

লেখক : সমাজকর্মী