শায়েস্তাগঞ্জে জরাজীর্ণ হযরত শাহজালালের (রহ.) বিশ্রামাগার

সৈয়দ হাবিবুর রহমান ডিউক, শায়েস্তাগঞ্জ


জুন ০৭, ২০২০
০১:১৮ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ০৭, ২০২০
০১:১৮ পূর্বাহ্ন



শায়েস্তাগঞ্জে জরাজীর্ণ হযরত শাহজালালের (রহ.) বিশ্রামাগার

৩৬০ আউলিয়ার পূণ্যভূমি সিলেট। সিলেটের বিভিন্ন স্থানে শায়িত আছেন ওলি-আউলিয়াগণ। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, উপমহাদেশের  শ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক  পুরুষ হযরত শাহজালাল ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে সিলেটে আগমন করেন। তিনি ৭০৩ হিজরী মোতাবেক ১৩০৩ ইংরেজি সালে ৩২ বছর বয়সে ইসলাম ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে অধুনা বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে এসেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। সিলেট বিজয়ের পর হযরত শাহজালালের (রহ.) সঙ্গী ও অনুসারীদের মধ্যে অনেক পীর-দরবেশ এবং তাদের পরে তাদের বংশধরগণ সিলেটসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বসবাস করেন।

জানা যায়, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নুরপুর ইউনিয়নের সুরাবই ফকির বাড়ির পাশে জিতু মিয়া ফকিরের জায়গায় হযরত শাহজালাল (রহ.) ও তাঁর সফরসঙ্গীরা নৌকায় করে এসে যাত্রাবিরতী করে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। কথিত আছে, হযরত শাহজালাল (রহ.) একটি গাছের গোড়ায় বসেছিলেন। সেই গাছের গোড়া থেকে একটি গাছ বড় হয়ে ওঠে। তাঁর কোনো একজন সঙ্গী একটি ইটের উপর বসেছিলেন। প্রতিবছর সেখানে গায়েবীভাবে একটি করে ইট বাড়তে বাড়তে অনেকগুলো ইট জমা হয়ে আছে। এছাড়া তাঁর সঙ্গীদের কেউ কেউ চুল কেটেছিলেন, যার চিহ্ন কয়েকশ বছর ছিল। এই বিশ্রামগারটিই বর্তমানে সুরাবই খানে বাড়ি বা দরগা বাড়ি নামে পরিচিত।

সুরাবই গ্রামের আলেয়া বেগম জানান, হযরত শাহজালালের (রহ.) স্মৃতি ধরে রাখার জন্য প্রতিবছর পৌষ মাসের ১৩ তারিখে এখানে ওরসের আয়োজন করা হয়। অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী ওরসে এসে শামিল হন। তিনি স্বাধীনতার পর থেকে এ প্রথা দেখে বড় হয়েছেন।

কথিত আছে, এই দরগায় ভেজা কাপড়ে এসে ইট উল্টে দিলে মনের নেক বাসনা পূর্ণ হয়। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ বিভিন্ন মানত করার জন্য এখানে আসেন। অনেকেই গাছের গোড়ায় মোমবাতি জ্বালিয়ে দোয়া চেয়ে যান।

বেশ কয়েকবছর ধরে ওরসের আয়োজন করা ফকির বাড়ির বাবুল মিয়া জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যায় তারা এখানে মোমবাতি জ্বালান। এই দরগা অনেক গরম জায়গা। এখানে এসে কেউ বেয়াদবি করলে তার ফল ভালো হয় না। একবার সুরাবই গ্রামের ধনাই মিয়া দরগার গাছ কেটে ফেলেছিলেন। সেই থেকে ধনাই আজও মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে আছেন।

বাবুল মিয়া আরও জানান, এই দরগায় এক লোক গুপ্তধন পেয়েছিল। সে স্বপ্নে দেখে ওই গুপ্তধন জায়গামতো রেখে আসতে হবে। ওই লোক যথাসময়ে রেখে আসেনি বলে পরে সে মারা গিয়েছিল।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শাহজালালের স্মৃতিবিজরিত এই দরগাটিতে প্রবেশের জন্য কোনো ফটক নেই। বিশ্রামাগারটি মাটি দিয়ে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, এই বিশ্রামাগারটি কোনো সরকারি সহায়তায় পাকাকরণ করে রাখলে ভক্ত-আশেকানদের ওরস তথা ভালোভাবে ইবাদত-বন্দেগি করার সুযোগ হতো।

এ বিষয়ে  নুরপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রবীণ আওয়ামা লীগ নেতা সৈয়দ গাজিউর রহমান বলেন, আমরা ছোটবেলা শুনেছি এই দরগা বাড়ির কথা। এই স্থানটি ধরে রাখার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন। আমি এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আবর্ষণ করছি।

নুরপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবুবক্কর ছিদ্দিক বলেন, এটা অনেক আগের ইতিহাস। এ বিষয়ে আমি জানি। যদি সরকারিভাবে কোনো সুযোগ থাকে, এই বিশ্রামাগারটি পাকাকরণ করে দেব।

শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ তালুকদার ইকবাল বলেন, আমি এ বিষয়ে অবগত নই। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে খোঁজ নিয়ে দেখব।

 

এসডি/আরআর-০৬