দুর্যোগ মোকাবিলায় বাজেট

রেজাউল ইসলাম


জুন ১৭, ২০২০
০১:২১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ১৭, ২০২০
০১:২১ পূর্বাহ্ন



দুর্যোগ মোকাবিলায় বাজেট

গত ১১ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২০-২১ অর্থবছরের তার ‘দ্বিতীয় বাজেট’ পেশ করলেন। সময়ের প্রেক্ষাপটে বাজেট একটি অর্থবছরকে ঘিরে আবর্তিত হলেও বাজেট অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতকে একসঙ্গে ধারণ করে অতীতের মূল্যায়ন, বর্তমানের অবস্থান এবং ভবিষ্যতের ভাবনাকে তুলে ধরে। সে কারণে বাজেট বিশেষ গুরুত্ব পায় অর্থনীতির গতি-প্রকৃতির পথপরিক্রমায়। 

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে যেসব বাজেট দিয়েছিলেন সেগুলো বাংলাদেশের উন্নয়ন অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন সাধন করেছিল।

একথা ঠিক, গত ১১ বছরে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, কৃষিসহ যাবতীয় উন্নয়ন কর্মকা-ে বিনিয়োগের গতি কখনই মন্থর হয়নি। বরং সরকার অবিশ্বাস্য মেগা প্রকল্প হাতে নিয়ে বেশ সাফল্যের সঙ্গেই সেগুলো একে একে সমাপ্তির পথে নিয়ে এসেছে। 

তবে এখানে দুর্বলতার দিকগুলোও এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়। তা হলো যথাসময়ে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন না হওয়া। নিখুঁঁতভাবে প্রকল্প মনিটরিংয়ের অভাব। এতে প্রকল্প ব্যয়ের খরচও বেড়ে যায়। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে প্রবেশ করার গৌরব অর্জন করেছিল। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে সেই গৌরব এখন ম্লান হয়ে আছে। শেষ পর্যন্ত দেশের অর্থনীতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে কেউ জানে না। 

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির এক গবেষণা অনুযায়ী দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতিবছর ২২ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। কিন্তু কাজ পায় মাত্র ৭ লাখ। আর বাকি সব কোনো না কোনোভাবে বেকার থাকে। শিল্প যে ধরনের শিক্ষা ও দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী খুঁঁজছে, তা মিলছে না। বেকারত্বের একটা বড় কারণ শিল্পের চাহিদার সঙ্গে পড়াশোনা ও দক্ষতার মিল না থাকা। ফলে দেখা যাচ্ছে যত বেশি শিক্ষা গ্রহণ করছে, বেকারত্ব তত বাড়ছে। তাছাড়া এই মুহূর্তে দেশে যে ভয়াবহ বেকার সমস্যা দেখা দেবে তা মোকাবিলাই হচ্ছে সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

ব্যাংক ও পুঁঁজিবাজার শিল্পায়নে অর্থ জোগানের প্রধান দুটি খাত হলেও তা বড় ধরনের সমস্যায় রয়েছে। সুশাসনের অভাবে এখানে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। এ অবস্থার উত্তরণ জরুরি। 

এ ক্ষেত্রে পেশকৃত বাজেটে সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্যাংক ও আর্থিক খাতে সবার আগে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। প্রচলিত আইন-কানুন সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রয়োগ করতে হবে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যারা ফেরত দেয় না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে এ দুটি খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে না। আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকারকে এ দুটি খাতকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে। তবে এর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে শতভাগ স্বাধীনতা দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এই স্বাধীনতা শক্তভাবে প্রয়োগ করতে গেলে নানা দিক থেকে চাপ আসতেই পারে। সেগুলোও দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।

জোর করে ভ্যাট আর আয়কর চাপিয়ে দিয়ে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের উন্নতি হবে না। সবক্ষেত্রে করহার যৌক্তিক করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মানুষের সামর্থ্য আছে কিনা, সেটি দেখতে হবে। করহার না বাড়িয়ে করজাল বাড়াতে হবে। রাজস্ব আয় বাড়ানো এবং ঘাটতি মেটানো এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতি বছরই আয়ের চেয়ে খরচ বাড়ছে। এবারও বাড়বে। এ ঘাটতি পূরণে নিতে হচ্ছে উচ্চ সুদে বিদেশি ঋণ, যা সরকারের সুদের বোঝাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। ব্যয়ের সঙ্গে মিল রেখে রাজস্ব আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। 

সংসদে সরকারি ও বিরোধী দলের ব্যাপক আলোচনার মাধ্যমে একটি জনবান্ধব বাজেট প্রণীত হোক, করোনাকালিন এই দুর্যোগে এ প্রত্যাশা আমাদের।

লেখক : ফ্রি-ল্যান্স সাংবাদিক