পরীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা

সৈয়দ হাবিবুর রহমান ডিউক, শায়েস্তাগঞ্জ


জুন ১৮, ২০২০
০২:৩৬ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ১৮, ২০২০
০২:৩৭ অপরাহ্ন



পরীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা

ফাইল ছবি

পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রামক করোনাভাইরাস। বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। পরিসংখ্যানে প্রতিদিন আরও নতুন সংখ্যা যোগ হচ্ছে। সবাই করোনার ভয়ে আজ অবরুদ্ধ। মহামারি আকারে বিশ্বব্যাপী তাণ্ডব চালাচ্ছে এই করোনাভাইরাস। এক ভাইরাসে সারাবিশ্ব আজ তটস্থ হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও আক্রান্ত পেরিয়েছে লাখের ঘর। স্বাভাবিক জীবনযাপনের রুটিনের পাশাপাশি করোনায় অগোছালো হয়ে গেছে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত সিলেবাস। অন্যান্য শিক্ষার্থীদের তো বটেই, এবারের পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার্থীদের ওপর তা প্রভাব ফেলেছে সবচেয়ে বেশি।

করোনার বিস্তার রোধে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত এবং প্রায় সব শিক্ষা কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হয়েছে বেশিরভাগ দেশে। কার্যত সারা পৃথিবীর শিক্ষাব্যবস্থাই এখন অনিশ্চয়তায় পড়েছে। কিন্তু করোনার এই সময়ে শিক্ষা নিয়ে তেমন কোনো পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে না। অনেকেই হয়তো ভাবছেন জীবন বাঁচানোর কার্যক্রম যেখানে পর্যাপ্ত নয়, সেখানে শিক্ষা নিয়ে কথা বলা কতটা স্বাভাবিক? কিন্তু আসল ব্যাপার হলো, শিক্ষা নিয়ে ভাবতে হবে জীবন বাঁচানোর জন্যই। শিক্ষাকে অবহেলা করে আমরা আগামীর করোনামুক্ত পৃথিবীতে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে পাবো না। সুতরাং শিক্ষা নিয়ে আমাদের সুষ্ঠু ও সময়োপযোগী পরিকল্পনা অত্যাবশ্যক।

সারাদেশের ন্যায় বিপাকে পড়েছেন শায়েস্তাগঞ্জের পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার্থীরা। পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে তাদের। গত ১ এপ্রিল পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও করোনার তাণ্ডবে এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাদের পরীক্ষা গ্রহণের তারিখ। যদিও শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পরীক্ষা শুরু হবে। তবে পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হতে পারে এ নিয়ে রয়েছে দুশ্চিন্তা।

শায়েস্তাগঞ্জের বেশ কিছু স্কুলে অনলাইনে নেওয়া হচ্ছে ক্লাস আর ক্লাস টেস্ট। কিন্তু পিএসসি ও জেএসসি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কিভাবে হবে- এ নিয়ে  শঙ্কায় রয়েছেন ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা। এখন জুন মাস চললেও এখনও ১ম সাময়িক পরীক্ষা নেওয়াও সম্ভব হয়নি।

শায়েস্তাগঞ্জের হাজী আফরাজ আলী স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী সৈয়দা ইসরাত জাহান নৌরিন বলে, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় কাটছে দিন। আমরা জেএসসি পরীক্ষার জন্য ইতোমধ্যে রেজিস্ট্রেশন করে ফেলেছি। কিন্তু আমাদের পুরো সিলেবাস কবে শেষ করব, কিভাবে পরীক্ষা হবে কেউ বলতে পারছেন না। আমরা অনলাইনে রেগুলার ক্লাস করছি। তবে পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি আমরা।

এদিকে করোনায় এই যখন পরিস্থিতি, তখন পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার্থী এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীদের ঘরে বসে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষকরা। তাছাড়া মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে মিলবে যেকোনো পরামর্শ- এমনটাই বলছেন তারা। 

এ বিষয়ে হাজী আফরাজ আলী স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল মো. রিপন আহমেদ জানান, দুশ্চিন্তা না করে এই মুহূর্তে পরীক্ষার্থীদের উচিৎ বইয়ে ডুবে থাকা। পড়াশোনায় মনোনিবেশ করলে করোনা আতঙ্ক থেকেও দূরে থাকতে পারবে তারা। তাছাড়া পরীক্ষা শুরুর আগে অনেক শিক্ষার্থী ঠিকমতো প্রস্তুতি নিতে পারে না। দুশ্চিন্তা না করে তারা পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারবে। তাছাড়া ভালো ফলাফলের জন্য এই সময়টাতে বার বার রিভিশন দিয়ে পড়াটাকে আরও সঠিকভাবে আয়ত্ব করে নিতে পারবে তারা।

এ বিষয়ে হাজী চান মিয়া একাডেমী এন্ড হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. নাজিম খান জানান, শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্তির মধ্যেই আছে। সব অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন না থাকায় অনলাইনে ক্লাস নেওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা পরীক্ষার্থীদের মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। এই দুর্যোগের সময় তারা যাতে বই ছেড়ে না দেয়, সে ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন তারা। পরীক্ষার্থীদের পড়ালেখায় কিছুটা ছন্দপতন হলেও ভেঙে না পড়ে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে। স্বাভাবিকভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। বইয়ের সঙ্গে লেগে থাকতে হবে সারাক্ষণ। এটাই পরামর্শ প্রতিষ্ঠান প্রধানদের।

মানসিকভাবে যেন কেউ ভেঙে না পড়ে, সেজন্য পড়ালেখার পাশাপাশি পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর পরামর্শও দিয়েছেন চিকিৎসকরা। মহামারি পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে ভবিষ্যদ্বানী করতে পারছেন না কেউ। তাই ভয় নয়, মহামারী ঠেকাতে হতে হবে সচেতন- এমন মত সংশ্লিষ্টদের।

শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, কার্যত শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা থেকে দূরে থাকছে অনেক ক্ষেত্রেই। সে ক্ষেত্রে সিলেবাস সীমিত করে তাদের অল্প দিন পাঠদানের পর পরীক্ষা আয়োজন করা যায়।

তবে কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তাঁদের কাছে কোনো সঠিক গাইডলাইন নেই। আর যদি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে, তাহলে ডিসেম্বরে একটি মাত্র মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরের শ্রেণিতে উন্নীত করার ব্যবস্থা নেওয়া যাবে হয়তো। কিন্তু করোনা যদি আরও বেশি সময় ধরে থাকে, তাহলে কী হবে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম? যেহেতু করোনা নামের এই ভাইরাস দীর্ঘদিন পৃথিবীতে থাকতে পারে- এমন আশঙ্কা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই সব ধরণের মূল্যায়ন কার্যক্রম কীভাবে হতে পারে, তা নিয়ে এখন থেকেই চিন্তা করতে হবে। সেই বিষয়গুলো শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পরিষ্কার করে জানাতে ও বোঝাতে হবে। 

এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আমিরুল ইসলাম জানান, সংসদ টেলিভিশনে নিয়ম করে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। আপাতত স্কুল খোলার আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের টিভির ক্লাসেই মনোযোগ দিতে হবে। আর দেশের যে অবস্থা কবে পরীক্ষা হবে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি।

এ বিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. রুহুল্লাহ বলেন, আমরা অনলাইনে সব স্কুলে ক্লাস নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। জেলার সকল প্রধান শিক্ষকদেরকে নিয়ে জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে ভার্চুয়াল সভা করে গাইডলাইন দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, যেসব অভিভাবকদের স্মার্ট ফোন নেই, তাদের সকলের অবগতির জন্য আমরা খুব শিগগির হবিগঞ্জের ক্যাবল টিভি এয়ারলিংকে ক্লাস চালু করব, যাতে সবার পাঠদান নিশ্চিত হয়। আর পরীক্ষা কবে হবে এ বিষয়ে সরকার থেকে কোনো নির্দেশনা এলে বলা যাবে।

 

এসডি/আরআর-০২