নবীগঞ্জে প্রতিপক্ষের হামলায় বৃদ্ধ নিহত, আহত অর্ধশতাধিক

নবীগঞ্জ প্রতিনিধি


জুলাই ১৬, ২০২০
০৯:৪৯ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ১৬, ২০২০
১০:৫১ অপরাহ্ন



নবীগঞ্জে প্রতিপক্ষের হামলায় বৃদ্ধ নিহত, আহত অর্ধশতাধিক

প্রতিপক্ষের হামলায় ভাংচুর করা বাড়ি।

হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার বাউশা ইউনিয়নের বাশডর দেবপাড়া গ্রামে প্রতিপক্ষের হামলায় জাহির আলী (৭৫) নামের এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। এ সময় নারী ও শিশুসহ আহত হয়েছেন অন্তত অর্ধশতাধিক লোক। সংঘর্ষের আগে ও পরে উভয়পক্ষের ৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ। 

আজ বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) সকালে বিজনা নদীর জলমহাল নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের এ ঘটনা ঘটে।

আহতদের মধ্যে ৫ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যান্য আহতদের নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ও প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ সময় হামলাকারীরা অন্তত ২০টি বাড়িঘরে হামলা ভাংচুর ও লুটপাট করে প্রায় ৮/১০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিসাধন করেছে বলে জানান আহতরা।

এদিকে হামলার ঘটনার খবর পেয়ে হবিগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্লাহ নবীগঞ্জ-বাহুবলের সার্কেল এএসপি মো. পারভেজ আলম চৌধুরী ও ওসি মো. আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনার পর থেকে গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের বাশডর (দেবপাড়া) গ্রামে বিজনা নদীর জলমহাল নিয়ে ওই গ্রামের বর্তমান ইউপি মেম্বার রাজা মিয়া, সাবেক মেম্বার মনর মিয়া ও কাচন মিয়া গংদের সঙ্গে একই গ্রামের শফিক মিয়া ও রয়মান মিয়া গংদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষ হয়েছে। এ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা চলে আসছে। সম্প্রতি নবীগঞ্জ-বাহুবল এর সার্কেল এএসপি পারভেজ আলম চৌধুরীর মধ্যস্থতায় নবীগঞ্জ থানায় ও তার কার্যালয়ে একাধিকবার উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে মীমাংসা করে দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমান ইউপি মেম্বার রাজা মিয়া, কাচন মিয়া ও সাবেক মেম্বার মনর মিয়া গংরা সালিশের সময় রায় মানলেও এলাকায় গিয়ে তা অমান্য করে পুর্বের ন্যায় তাদের অবস্থানে ফিরে যান।

বুধবার সকালে কাচন মিয়ার বাড়ির সামনে দিয়ে অটোরিকশা স্ট্যান্ডে যাওয়ার পথে শফিক মিয়ার পক্ষের লতিফ মিয়া ও তার স্ত্রীকে মারধর করে রাজা মেম্বারের পক্ষের লোকজন। এ খবর শফিক মিয়া গংদের লোকজনের মধ্যে জানাজানি হলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয় এবং রাতেই দাঙ্গা-হাঙ্গামা এড়াতে উভয়পক্ষের ৫ জনকে আটক থানার নিয়ে যায়। 

গতকালের ঘটনার জের ধরে আজ বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) সকালে বর্তমান ইউপি সদস্য রাজা মিয়া, কাচন মিয়া ও সাবেক ইউপি সদস্য মনর মিয়ার লোকজন পূর্বপরিকল্পিতভাবে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে শফিক মিয়ার পক্ষের লোকজনের বাড়িঘরে এলোপাতাড়িভাবে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। হামলাকারীদের পিকলের আঘাতে ঘটনাস্থলেই জাহির আলী নামের এক বৃদ্ধ মারা যান। সংঘর্ষের পর আরও ২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। 

এ ঘটনায় গুরুতর আহতরা হলেন- হাফিজুন্নেছা (৩৫), ছুরুক মিয়া (৩৩), কুরুস মিয়া (৩০), জুসনা বেগম (৪০), ফয়জুর রহমান (৪০), ইছমত মিয়া (৩৫), মকবুল হোসেন (১৭), আকবর মিয়া (৩০), মস্তফা মিয়া (১৫), আবু তাহের (২৮), বিরাম উদ্দিন (৫০), রফি মিয়া (৩০), জলি বেগম (১৮), তোফাজ্জল মিয়া (২৮), আছিয়া বেগম (২৯), সুফান মিয়া (৪০), শহিদ মিয়া (৪৫), আকবর মিয়া (২৬), মিছবাহ উদ্দিন (৩০), মানিক মিয়া (৪০), সালাম মিয়া (৫০), সামসুল হক (৪৫) ও সজল মিয়া (৩০)।

নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজিজুর রহমান জানান, গ্রামের জলমহাল, মসজিদসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দু'টি পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। নবীগঞ্জ-বাহুবল এর সার্কেল এএসপি পারভেজ আলম চৌধুরীর মধ্যস্থতায় নবীগঞ্জ থানায় ও তার কার্যালয়ে একাধিকবার নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিমকে নিয়ে একাধিকবার বিরোধপূর্ণ বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরও এই হামলার ঘটনা সংঘটিত হলো। আমরা খবর পেয়ে গতকাল রাতেই উভয়পক্ষের কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে আসি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। দায়ীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।

 

এএম/আরআর-০৮