কুলাউড়ায় সড়কের কাজে ধীরগতি, ভোগান্তিতে লক্ষাধিক মানুষ

জিয়াউল হক জিয়া, কুলাউড়া


জুলাই ২২, ২০২০
০৯:২৭ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ২২, ২০২০
০৯:২৭ অপরাহ্ন



কুলাউড়ায় সড়কের কাজে ধীরগতি, ভোগান্তিতে লক্ষাধিক মানুষ

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কুলাউড়া-পৃথিমপাশা ও রবিরবাজার-টিলাগাঁও সড়ক প্রশস্তকরণসহ উন্নয়ন কাজের ধীরগতিতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যাত্রীসাধারণ। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও সড়কের এক তৃতীয়াংশ কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি। এতে দক্ষিণাঞ্চলের ৪টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

প্রায় দেড় বছর থেকে রাস্তাটি খোদাই করে রাখায় বর্ষায় কর্দমাক্ত এবং শুষ্ক মৌসুমে ধুলোবালিতে একাকার হয়ে থাকে। আর রাস্তা ভাঙার অজুহাতে এ সড়কগুলোতে চলাচল করা যাত্রীদের কাছ থেকে পরিবহন চালকরা দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছেন। 

সওজ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কুলাউড়া উপজেলা সদরের নবীন চন্দ্র মডেল উচ্চবিদ্যালয় থেকে পৃথিমপাশা ইউনিয়নের রবিরবাজার হয়ে ঝিলেরপার বাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার এবং রবিরবাজার থেকে টিলাগাঁও বাজার পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক অনেকদিন থেকে উন্নয়নবঞ্চিত। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই সড়ক প্রশস্ত ও মজবুতকরণের উদ্যোগ নেয় সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। আর এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় ঢাকার ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজ পাওয়ার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন প্রায় ১২ কিলোমিটার রাস্তা ভেঙে কাজ বাস্তবায়ন শুরু করে। কিন্তু ইতোমধ্যে প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদ ১৮ মাস শেষ হলেও এখনও সড়কের এক তৃতীয়াংশ কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি তারা। 

সরেজমিনে দেখা যায়, ১৬ কিলোমিটার সড়কের মাত্র ৩ কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি রাস্তা ছোট-বড় গর্তে ভরপুর। এতে অনেক দুর্ভোগ নিয়ে লোকজন চলাচল করছেন। ২০ মিনিটের রাস্তা পার হতে সময় লাগছে এক থেকে দেড় ঘন্টা আর ২০ টাকার ভাড়া গুনতে হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকা। যার ফলে দুর্ভোগের পাশাপাশি আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ওই সড়কে চলাচলকারীরা। কাজ দ্রুত শেষ করার দাবিতে স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্মারকলিপিও দিয়েছিলেন। এরপরও কাজের গতি বাড়েনি।

এ সড়কে প্রতিদিন চলাচলকারী লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আতাউর রহমান ও আলী আমজদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আব্দুল কাদির জানান, ১০ কিলোমিটার সড়ক অতিক্রম করে প্রতিষ্ঠানে যেতে সময় লাগে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। একবার গেলে আর ফিরে আসতে মন চায় না। তবুও প্রাতিষ্ঠানিক কাজে প্রতিদিন যেতে হয়। মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজটি সম্পাদন করে এই দাবি জানান তারা। 

কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, 'সড়কের ৩ কিলোমিটার জায়গা পাকাকরণের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে চলছে পাথরের সংকট। এলসির মাধ্যমে পাথর সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে কাজ ধীরগতিতে হচ্ছে।'

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, 'করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন থাকার কারণে সড়কগুলোর কাজে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটছে। বর্তমানে বর্ষাকালীন বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় সড়কে বিটুমিনের কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। কাজের জন্য সবধরণের প্রস্তুতি রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে আশা করছি।'

কুলাউড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, 'জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে কাজের ধীরগতির বিষয়ে অবগত হয়েছি। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক স্যারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি কাজের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।'

 

জেএইচ/আরআর-০৮