কিডনি দিচ্ছেন ছোট ভাই, তবু জীবন সংকটে বদরুল

এ জে লাভলু, বড়লেখা


জুলাই ২৫, ২০২০
০৮:৪৯ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ২৫, ২০২০
০৮:৪৯ অপরাহ্ন



কিডনি দিচ্ছেন ছোট ভাই, তবু জীবন সংকটে বদরুল

বদরুল ইসলাম

এতদিন ছিল অর্থ সংকট। এ কারণে দু'টি কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়া বদরুল ইসলামের নতুন কিডনি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হচ্ছিল না। এ অবস্থায় তার চিকিৎসার্থে পাশে দাঁড়ায় শিক্ষা ও সেবা ফাউন্ডেশন কাঠালতলী। হাত বাড়িয়ে দেন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি-সংগঠন। ফলে অল্প কয়েকদিনের মধ্যে চিকিৎসার জন্য প্রায় সাড়ে ৩৩ লাখ টাকা সংগ্রহ হয়। কথা ছিল ঈদের আগেই তার শরীরে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হবে। কিন্তু তা আর হচ্ছে না। কারণ বদরুলের শরীরে নিরবে বাসা বেঁধেছে প্রাণঘাতী আরেক রোগ হেপাটাইটিস-সি, যা যকৃৎকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

চিকিৎসকরা বলছেন, এই রোগ থেকে মুক্ত হতে হলে কমপক্ষে তিনমাস অপেক্ষা করতে হবে। তা না হলে বদরুলের কিডনি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব নয়। এছাড়া বিকল্প কোনো পথও নেই।

জানা গেছে, বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নের দক্ষিণ মুছেগুল গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক মিলাদ হোসেনের ছোট ভাই বদরুল হোসেন প্রায় ৮ বছর ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ছিলেন। সেখানে তিনি একটি দোকানে সেলসম্যান হিসেবে কাজ করতেন। ৫-৬ মাস আগে হঠাৎ বদরুলের শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। তিনি চিকিৎসকের কাছে যান। পরে চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে জানান তার দু'টি কিডনি একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। বিষয়টি জানতে পেরে বদরুলের কফিল (মালিক) তাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন।

চিকিৎসকরা বদরুলকে জানিয়েছেন, তাকে বাঁচতে হলে অন্তত একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন ২৫ লাখ টাকা। এ অবস্থায় নিজের কথা না ভেবে ভাইকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন বদরুলের ছোট ভাই ছয়ফুল হোসেন। তিনি তাকে নিজের একটি কিডনি দিতে রাজি হন। কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য ২৫ লাখ টাকা কোথায় পাবে বদরুলের পরিবার? অর্থের কথা ভাবতেই যেন তাদের চোখে-মুখে অন্ধকার নেমে আসে।

কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়ায় দেরি হওয়ায় শুরু হয় বদরুলের ডায়ালাইসিস। এতেও তার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আর তার চিকিৎসার পেছনে পরিবারের সহায়-সম্বল যা ছিল তা ব্যয় হয়ে গেছে। এতে অনেকটা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন তারা। এ অবস্থায় বদরুলের চিকিৎসার জন্য অনেকটা আলো হয়ে পাশে দাঁড়ায় শিক্ষা ও সেবা ফাউন্ডেশন কাঠালতলী। তারা তার চিকিৎসার জন্য তহবিল গঠন করে অর্থ সংগ্রহ শুরু করেন। পাশাপাশি চলে ফেসবুকে প্রচার। প্রায় দেড়মাসে তহবিলে জমা হয় সাড়ে ৩৩ লাখ টাকা।

এদিকে কথা ছিল টাকা সংগ্রহ হলে ঈদের আগেই তার কিডনি প্রতিস্থাপন করা হবে। টাকা সংগ্রহ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপন ঈদের আগে হচ্ছে

না। কারণ  বদরুলে শরীরে নিরবে বাসা বেঁধেছে প্রাণঘাতী হেপাটাইটিস-সি রোগ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শরীরে প্রাণঘাতী রোগ হেপাটাইটিস-সি শনাক্ত হয়েছে। এখন এই রোগ থেকে মুক্ত না হলে তার কিডনি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব নয়।

শিক্ষা ও সেবা ফাউন্ডেশন কাঠালতলী’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছয়ফুল হক বলেন, 'বদরুলের চিকিৎসার জন্য প্রথমে ২৫ লাখ টাকা প্রয়োজন ছিল। আমরা তার চিকিৎসার্থে তহবিল গঠন করেছিলাম। এতে দেশ-বিদেশের অনেক হৃদয়বান ব্যক্তি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে অল্প কয়েকদিনে সাড়ে ৩৩ লাখ টাকা তহিবেল জমা হয়েছে। বদরুলের ছোট ভাই তাকে একটি কিডনি দেবে। ঈদের আগে তার কিডনি প্রতিস্থাপনের কথা ছিল। ইতোমধ্যে আমরা দুই লাখ টাকা চিকিৎসকের কাছে অগ্রিম জমাও দিয়েছি। সব মিলিয়ে প্রায় ৫ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে জানিয়েছেন যে বদরুলের শরীরে হেপাটাইটিস-সি রোগ শনাক্ত হয়েছে। এ অবস্থায় কিডনি প্রতিস্থাপন করতে গেলে তার প্রাণহানি হতে পারে। যার কারণে কমপক্ষে আরও ৩ মাস অপেক্ষা করতে হবে।

 

এজে/আরআর-০৭