ওসমানীনগরে নির্মাণসামগ্রীর দখলে সড়ক, বাড়ছে দুর্ঘটনা

উজ্জ্বল ধর, ওসমানীনগর


আগস্ট ১৬, ২০২০
০৬:১৬ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ১৬, ২০২০
০৬:১৬ অপরাহ্ন



ওসমানীনগরে নির্মাণসামগ্রীর দখলে সড়ক, বাড়ছে দুর্ঘটনা

সিলেটের ওসমানীনগরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উপর সঠিক নজরদারি না থাকায় লকডাউন পরবর্তী সময়ে দুর্ঘটনার হার ক্রমেই বাড়ছে। চালকদের অসাবধানতা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশার অবাধ চলাচল ও মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ দখল করে নির্মাণসামগ্রী রাখায় দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে অনেকের ধারণা।

জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ২৭ কিলোমিটার অংশ রয়েছে ওসমানীনগর উপজেলার মধ্যে মহাসড়কের এ অংশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের বৃহৎ দায়িত্বে রয়েছে শেরপুর হাইওয়ে থানার পুলিশ। কিন্তু তাদের সঠিক তদারকির অভাবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মহাসড়কের পাশে ফেলে রাখা হয়েছে বালি-পাথর-ইটসহ বিভিন্ন প্রকার নির্মাণসামগ্রী, হাট-বাজার এলাকায় গড়ে উঠেছে ভাসমান দোকান। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে উপজেলার সর্বত্র মহাসড়কজুড়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অটোরিকশাচালক জানান, তারা হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে ‘আপস’ করেই মহাসড়কে যাত্রী পরিবহন করছেন। মাঝে মাঝে হাইওয়ে থানার পুলিশ অভিযান পরিচালনা করলেও তা শুধুই লোক দেখানো।

মহাসড়কের ওসমানীনগর অংশ ঘুরে দেখা যায়, গোয়ালাবাজার, তাজপুর, দয়ামীর, সাদিপুর, কুরুয়াসহ বিভিন্ন জনাকীর্ণ এলাকায় মহাসড়কের উভয়পাশে স্তুপ করে রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী। বাজার এলাকাগুলোর ফুটপাত ও মহাসড়কের পাশ দখল করে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী দোকানপাট। বাজারের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত রয়েছে অটোরিকশা, রিকশা, ট্রাক ও মাইক্রোবাসের অবৈধ স্ট্যান্ড।

সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ওসমানীনগর অংশে গত ১৮ দিনে ছোট-বড় ৬টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নারী ও শিশুসহ নিহত হয়েছেন ১৩ জন, আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০ জন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার সাদিপুর (ভাঙ্গা) নামক স্থানে মামুন পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ৬ নিহত হয়েছেন। মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন আরও ২ জন। এর আগে গত ৩১ জুলাই সকালে ওসমানীনগরের সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের বরায়া চানপুর নামক স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৫ জনসহ ৬ জন নিহত হন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসেব অনুযায়ী, ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় এটিই দেশের সর্বাধিক মৃত্যু। ওই দুর্ঘটনা এক সঙ্গে কেড়ে নিয়েছে পুরো পরিবার। এছাড়া গত ২৭ জুলাই দুপুরে উপজেলার সাদিপুর সেতুর উপর শেরপুরগামী একটি কাভার্ড ভ্যানের চাপায় সুহেল মিয়া (১২) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়। সোহেল স্থানীয় ইব্রাহিমপুর গ্রামের সুজন মিয়ার ছেলে।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাতে সাদিপুরে সড়ক দুর্ঘটনার পর পরই মহাসড়ক দখল করে রাখা নির্মাণসামগ্রী অপসারণে উদ্যোগী হয়েছে ওসমানীনগর থানার পুলিশ। উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে সড়ক থেকে নির্মাণসামগ্রী সরাতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেছেন ওসমানীনগর থানার ওসি। তার অনুরোধে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ব্রাহ্মণগ্রাম এলাকায় বাড়ি নির্মাণের জন্য মহাসড়কের পাশে রাখা পাথর অপসারণ করা হয়। গত শুক্রবার সকালে নাটকিলা এলাকা থেকে সরানো হয় স্তুপকৃত বালি। এছাড়া অন্যান্য এলাকায়ও মহাসড়কের পাশে থাকা ব্যক্তি মালিকানাধীন নির্মাণসামগ্রী অপসারণের জন্য ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে অনুরোধ করা হয়েছে ওসমানীনগর থানা পুলিশের পক্ষ থেকে।

ওসমানীনগরে ঘন ঘন দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি প্রসঙ্গে কথা বলতে শেরপুর হাইওয়ে থানার পুলিশের ইনচার্জ লিয়াকত আলীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকরতা (ওসি) শ্যামল বণিক বলেন, 'ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ওসমানীনগর অংশের হাট-বাজারসহ রাস্তার উভয়পাশে বালু, পাথরসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী রেখে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। মহাসড়কের দায়িত্ব হাইওয়ে পুলিশের উপর ন্যাস্ত। তারপরও মানবিক কারণে ওসমানীনগর থানার পুলিশের পক্ষ থেকে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।'

 

ইউডি/আরআর-০১