চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নারীর জরায়ু কেটে ফেলার অভিযোগ

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি


আগস্ট ২৫, ২০২০
০৭:১৭ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ২৫, ২০২০
০৭:১৭ অপরাহ্ন



চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নারীর জরায়ু কেটে ফেলার অভিযোগ

হবিগঞ্জে টিউমার অপারেশন করতে গিয়ে এক নারীর জরায়ু কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আরশেদ আলী নামের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। বর্তমানে ওই নারী জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন।

সোমবার (২৪ আগস্ট) রাতে হবিগঞ্জ শহরের টাউন হল রোডে অবস্থিত সেন্ট্রাল হসপিটাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটেছে। পরে রোগীর স্বজনরা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এসে বিক্ষোভ করেন। খবর পেয়ে সদর থানার এসআই আব্দুর রহিমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করেন।

এ ঘটনায় রোগীর স্বজনরা সেন্ট্রাল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ডা. আরশেদ আলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের নিকট দাবি জানিয়েছেন।

জানা যায়, বানিয়াচং উপজেলার মক্রমপুর গ্রামের নোয়াজিশ মিয়ার স্ত্রী খদর চাঁন জরায়ু টিউমারে আক্রান্ত হন। গত ১ সপ্তাহ আগে তিনি হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি হন। গত রবিবার সকালে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের গাইনি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. আরশেদ আলী তাকে অপারেশনের জন্য শহরের টাউন হল রোডে অবস্থিত সেন্ট্রাল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে অপারেশনের পরামর্শ দেন। তার পরামর্শে ওই নারীকে সেন্ট্রাল হসপিটালে ভর্তি করেন স্বজনরা। রোববার বিকেলের দিকে ডা. আরশেদ আলী সেন্ট্রাল হসপিটালে ওই নারীর জরায়ু টিউমারের অপারেশন করেন। কিন্তু অপারেশন শেষে ওই নারীকে ওয়ার্ডে স্থানান্তর করার কয়েক ঘন্টা অতিবাহিত হলেও জরায়ুতে লাগানো ক্যাথেটার দিয়ে প্রস্রাব আসা বন্ধ থাকে। রাত প্রায় ১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও এক ফোঁটা প্রসাবও বের হয়নি। এতে ওই নারীর পেট ফুলে ওঠে। একপর্যায়ে রাত ১টার দিকে ডা. আরশেদ আলীকে খবর দিলে তিনি হাসপাতালে গিয়ে ওই নারীর চিকিৎসা করেন। কিন্তু এরপরও বিষয়টি সমাধান না হওয়ায় সোমবার ভোরে তাকে সিলেট প্রেরণ করা হয়।

এদিকে মুমূর্ষু অবস্থায় ওই নারীকে সিলেটে পাঠালেও রোগীর সঙ্গে দেওয়া ছাড়পত্রে সিল দেয়নি সেন্ট্রাল হসপিটাল কর্তৃপক্ষ। যার ফলে সিলেটের কোনো হাসপাতাল ওই রোগীকে ভর্তি করেনি। এতে রোগীর অবস্থা আরও শঙ্কটাপন্ন হয়ে ওঠে। সারাদিন সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেও রোগীকে ভর্তি করতে না পারায় সোমবার রাত ৯টার দিকে আবারও রোগী নিয়ে হবিগঞ্জ ফিরে আসেন স্বজনরা। পরে তারা সেন্ট্রাল হসপিটালে এসে বিক্ষোভ করলে হবিগঞ্জ সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করে। একপর্যায়ে ছাড়পত্রে সিল নিয়ে আবারও তারা রোগীকে নিয়ে সিলেট চলে যান স্বজনরা।

এ ব্যাপারে রোগীর ভাগ্নে মহিবুল ইসলাম শাহীন বলেন, 'ডা. আরশেদ আলী ও সেন্ট্রাল হসপিটাল কর্তৃপক্ষের ভুলের কারণে মৃত্যুর মুখে পড়েছে আমাদের রোগী। ডা. আরশেদ আলী অপারেশনের সময় রোগীর জরায়ু কেটে দিয়েছেন। যার ফলে রোগী এখন মৃত্যু পথযাত্রী।'

এ ব্যাপারে সেন্ট্রাল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার অসীম দেব বলেন, 'রোগীকে রিলিজ দেওয়ার সময় আমি ছিলাম না। তবে এখন আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ওই নারীকে সিলেটে নিয়ে যাচ্ছি এবং রোগীর সুস্থতায় যা করার প্রয়োজন তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করবে।'

তবে চিকিৎসক আরশেদ আলী বলছেন, 'নারীর জরায়ু কেটে ফেলা হয়নি। আর আমরা ওই নারীর চিকিৎসা একটি এনজিও'র মাধ্যমে করেছি। এখানে টাকা-পয়সার কোনো হিসেব আসেনি। অপারেশনের পর নারীর অবস্থা একটু খারাপ হওয়ায় আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেটে প্রেরণ করেছি।'

 

এসআর/আরআর-০১