বাল্যবিবাহমুক্ত উপজেলায় বাল্যবিয়ে পড়াচ্ছেন কাজী!

ওসমানীনগর প্রতিনিধি


সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২০
০১:১৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২০
০৩:০৬ পূর্বাহ্ন



বাল্যবিবাহমুক্ত উপজেলায় বাল্যবিয়ে পড়াচ্ছেন কাজী!

শতভাগ বাল্যবিবাহমুক্ত উপজেলা সিলেটের ওসমানীনগরে বাল্যবিবাহ পড়ানোসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে দয়ামীর ইউনিয়নের নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার (তাজপুর ইউনিয়নের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) কাজী আব্দুল আহাদের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি তাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের মাসিক সভায় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা কাজীর এমন কর্মকাণ্ডের জন্য রেজুলেশন করার পর এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে তা উপজেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে।

জানা যায়, ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে ওসমানীনগরকে বাল্যবিবাহমুক্ত উপজেলা ঘোষণা করা হয়। এরপর আর উপজেলার কোথাও বাল্যবিবাহের খবর পাওয়া যায়নি। তবে সম্প্রতি বাল্যবিয়ে পড়িয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন তাজপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত কাজী আবদুল আহাদ। ওই কাজী তাজপুর মঙ্গলচন্ডী নিশিকান্ত সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী উত্তর মজলিসপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেনের অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে জহুরা খাতুনের বিয়ে পড়ানোসহ নানা অনিয়ম করছেন। টাকার বিনিময়ে তিনি আসল জন্মসনদ গায়েব করে সিলেট সিটি করপোরেশন থেকে জন্ম সনদ তৈরি করে এনে ওই স্কুলছাত্রীর বিয়ে পড়ান। গত ৩১ আগস্ট ইউনিয়ন পরিষদের মাসিক সভায় কাজীর বাল্যবিয়ে পড়ানোসহ বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে আলোচনা করেন চেয়ারম্যান ও সদস্যরা। তারা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে রেজুলেশন করে তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রেরণ করেন।

মঙ্গলচন্ডী নিশিকান্ত সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, জহুরা খাতুন ২০১৯ সালের জেএসসি পরীক্ষায় এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে। ভর্তির রেকর্ড অনুযায়ী তার জন্ম ২০০৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি।

শুধু জহুরা নয়, গত ১০ জুলাই ইউনিয়নের কাশিপাড়া গ্রামের আতাউর রহমানের অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে লাভলী বেগমের বিয়ে পড়ান কাজী আবদুল আহাদ। মেয়ের বয়স কম হওয়ায় তাৎক্ষণিক কাবিন রেজিস্ট্রি না করে শুধু ফি নিয়ে চলে যান তিনি। বয়স বাড়িয়ে জন্মসনদ আনার পর রেজিস্ট্রি করার কথা ছিল। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর গতকাল মঙ্গলবার কাবিন রেজিস্ট্রির জন্য নেওয়া দেড় হাজার টাকা ফেরত দিয়ে যান কাজীর সহকারী সেলিম আহমদ। 

এ ব্যাপারে লাভলী বেগমের স্বামী হায়দর আলী বলেন, ‘আমাদের বিয়ের জন্য জন্ম নিবন্ধন দেখালে কাজী বলেন বিয়ে হবে। তিনি আমাদের বিয়ে পড়িয়ে কাবিনের জন্য দেড় হাজার টাকা ফি নেন। আরও একজন নতুন জন্ম সনদের জন্য ১ হাজার টাকা নেন। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার কাজী দেড় হাজার টাকা ফেরত দিয়ে আমাদের এলাকা থেকে চলে যাওয়ার জন্য বলেন। আমরা এলাকা না ছাড়লে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে বলে জানান তিনি।’ 

এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত দয়ামীর ইউনিয়নের নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার (তাজপুর ইউনিয়নের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) কাজী আব্দুল আহাদ বলেন, ‘আমরা কোনো বাল্যবিবাহ পড়াইনি। আইন মেনে জন্ম নিবন্ধন দেখেই আমরা বিয়ে পড়িয়ে থাকি।’

ওসমানীনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘বাল্যবিয়ে সংক্রান্ত তাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের একটি রেজুলেশন পেয়েছি এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর সত্যতা পাওয়া গেলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ 

 

ইউডি/আরআর-০৯