ওসমানীনগরে যত্রতত্র সিলিন্ডারের দোকান, দুর্ঘটনার শঙ্কা

উজ্জ্বল ধর, ওসমানীনগর


সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২০
০১:১৪ পূর্বাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২০
০১:১৪ পূর্বাহ্ন



ওসমানীনগরে যত্রতত্র সিলিন্ডারের দোকান, দুর্ঘটনার শঙ্কা

সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) চাহিদা। সাধারণ মানুষের চাহিদার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে উপজেলার যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে এই বিস্ফোরক পদার্থ। সরকারি বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা না করেই মহাসড়ক সংলগ্ন এলাকাসহ উপজেলার হাট-বাজারের পানের দোকান থেকে শুরু করে জুতার দোকান পর্যন্ত সবখানে বিক্রি হচ্ছে সিলিন্ডার ভর্তি গ্যাস। এতে সামান্য অসাবধানতায় ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কয়েকমাস পূর্বে ওসমানীনগরে যত্রতত্র সিলিন্ডার বিক্রি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাজপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু উপজেলার গোয়ালাবাজার ও তাজপুরে অনুমতিবিহীন প্রায় অর্ধশতাধিক এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রেতাদের মধ্যে জরিমানা করা হয় শুধুমাত্র দু'টি প্রতিষ্ঠানকে। তারপর দীর্ঘদিন এ ব্যাপারে কোনো অভিযান নেই। ফলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ওই অভিযানকে ‘লোক দেখানো’ বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

জানা গেছে, উপজেলার গোয়ালাবাজার, তাজপুর, ময়নাবাজার, দয়ামীর, কুরুয়া, বুরুঙ্গা, বেগমপুর, ঊনিশ মাইলসহ বিভিন্ন বাজারে দুই শতাধিক এলপিজি সিলিন্ডারের দোকান রয়েছে। তবে হাতেগোনা দুই-একটি দোকানের বিস্ফোরণ অধিদপ্তরের অনুমতি থাকলেও বাকি দোকানগুলোর কোনো অনুমোদন নেই। এক্ষেত্রে সাড়ে ১২ কেজির একটি সিলিন্ডারের দাম আদায় করা হচ্ছে ৮শ থেকে ১১শ টাকা বা বিক্রেতাদের ইচ্ছামতো। সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর ডিলাররা বিস্ফোরক অধিদপ্তরের সনদ নিলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা মজুদ আইন অনুসরণ করছেন না। এ বিষয়ে স্থানীয়রা শঙ্কিত হলেও প্রশাসন নির্বিকার।

১৮৮৪ ও ২০০৪ সালের বিস্ফোরক আইনে লাইসেন্স ছাড়া এলপিজি গ্যাস বিক্রি ও মজুদ নিষিদ্ধ। আট বা তার বেশি সিলিন্ডার মজুদের ক্ষেত্রে লাইসেন্স ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিধান থাকলেও এসব দোকানে নেই ন্যুনতম অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। এসব অবৈধ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের খবরদারি না থাকায় একের পর এক প্রকাশ্যেই গড়ে উঠছে সিলিন্ডার বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান।

তাজপুর এলাকার এক সিলিন্ডার বিক্রেতা জানান, সরকারি নিয়মনীতির বিষয়ে তাদের জানা নেই। সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধি ও ডিলারদের উৎসাহে বাড়তি কিছু টাকা পাওয়ার জন্য তারা অন্য ব্যবসার পাশাপাশি সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করছেন।

যত্রতত্র এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রির বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে সিলেট ডিভিশনাল এলপিজি গ্যাস এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হামিদ বলেন, ‘বিষয়টি আমাদেরও ভাবিয়ে তুলছে। এর জন্য প্রশাসনের নিরবতা ও লোভী বিক্রেতারা দায়ী। এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে আমরা ইতোমধ্যে সাংগঠনিক বৈঠক করেছি।’

বেশি দামে সিলিন্ডার বিক্রির বিষয়ে তিনি জানান, সিলিন্ডারের গায়ে নির্ধারিত মূল্য না থাকার সুযোগে কোম্পানিগুলোই বেশি লাভবান হচ্ছে। এখানে খুচরা বিক্রেতাদের মুনাফা খুবই সামান্য।

ওসমানীনগরের তাজপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা নেই। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে খোঁজ নিয়ে শিগগির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে ওসমানীনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘আমি এ উপজেলায় যোগদানের পর পরই যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করার পর তা নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আবারও অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

 

ইউডি/আরআর-০৫