বিশ্বনাথে এক স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে জিম্মি অসহায় মানুষ

বিশ্বনাথ প্রতিনিধি


সেপ্টেম্বর ২১, ২০২০
১২:৪১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ২১, ২০২০
১২:৪১ পূর্বাহ্ন



বিশ্বনাথে এক স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে জিম্মি অসহায় মানুষ

সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র যেন তার প্রাইভেট চেম্বার। ইচ্ছেমতো যাওয়া-আসা করেন তিনি। এখানে দুস্থ রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার বিধান থাকলেও নিয়মিত নেওয়া হয় টাকা। রোগীদের কাছে বিক্রি করেন বিনামূল্যের সরকারি ওষুধও। টাকা না দিলে অসহায় রোগীদের বকাঝকা করে তাড়িয়ে দেন তিনি। 

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কেন্দ্রের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (FWV) নীলিমা রানী দাসের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। নানা অনিয়ম-অভিযোগ উঠলেও প্রায় ২৫ বছর ধরে একই জায়গায় বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি। স্থানীয়দের অভিযোগ, সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করেই এ বাণিজ্য করছেন তিনি।

অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে দশঘর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা ও ওষুধ না পেয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বারান্দায় মলিন মুখে ঘোরাফেরা করছেন রোগীরা। কথা হয় তাদের সঙ্গে। তারা সকলেই নীলিমা রানী দাসের বিরুদ্ধে টাকা গ্রহণ ও রোগীদের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগ করেন।

নিজের অসুস্থ কিশোরী মেয়েকে নিয়ে আসা নোয়াগাঁও গ্রামের আছিয়া বেগম বলেন, 'নীলিমা রানী দাস আমাদের মা-মেয়েকে মাত্র ১০টি ট্যাবলেট দেন। আমি বিপি (রক্তচাপ) পরীক্ষা করতে চাইলে দাবি করেন ৩০০ টাকা। কিছুদিন পূর্বে টাকা দিয়েই বিপি পরীক্ষা করিয়েছি ও ওষুধ নিয়েছি। আজ টাকা দিতে না পারায় চিকিৎসা পাইনি।'

শাড়ইল গ্রামের মুহিবুর রহমান বলেন, 'অসুস্থতার জন্য পূর্বে সেবন করা এক পাতা ওষুধ চাইলে তিনি (নীলিমা রানী দাস) দুর্ব্যবহার করে আমাকে তাড়িয়ে দেন।'

এ সময় অভিযোগকারীদের নীলিমা রানী দাসের মুখোমুখি করা হলে তিনি উত্তেজিত হয়ে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে শুরু করেন। দম্ভোক্তি করে তিনি রোগীদের বলেন, 'লিখলে কি আর আমার ২৫ বছরের চাকরি চলে যাবে? সাংবাদিককে বলে কী লাভ?'

পরে অবশ্য শান্ত হয়ে রোগীদের অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে ক্ষমাও চান তিনি। একপর্যায়ে সাংবাদিকদের নানা কৌশলে প্রভাবিত করার চেষ্টাও করেন নীলিমা। তিনি বলেন, 'ভাই আর যাই করেন, দয়া করে টাকা নেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যাবেন।' এ বিষয়ে রিপোর্ট না করতে মোবাইল ফোনে অনুনয়-বিনয় করেন তার স্বামীও।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষিকা দিপা বেগম বলেন, 'গেল ১৩ সেপ্টেম্বর আমি চিকিৎসা নিতে গিয়ে তাকে (নীলিমা রানী দাস) পাইনি। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করে ফোন করলে তিনি জানান আসতে আরও দেরি হবে। এ সময় ফোনে সমস্যার কথা জানালে তিনি ৫০০ টাকা নিয়ে পরেরদিন সাক্ষাৎ করতে বলেন।'

নোয়াগাঁও গ্রামের আবদুল করিম বলেন, 'তার (নীলিমা রানী দাস) স্বেচ্ছাচারিতার কারণে আমরা খুব অসহায় হয়ে পড়েছি। প্রতিবাদ করলে তিনি বলেন তার হাত অনেক লম্বা। কেউ কিছুই করতে পারবে না তার।'

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে স্বাস্থ্যকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, 'বিনামূল্যের ওষুধ, পরিবার পরিকল্পনার সরঞ্জাম, নারীদের বিশেষ রোগের চিকিৎসাসহ সকল কাজেই তাকে টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে গরিব রোগীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা তার কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার।'

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফারুক আহমদ বলেন, 'বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।'

আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বর্ণালী পাল বলেন, 'অভিযোগ সত্য হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

এ বিষয়ে কথা হলে সিলেট জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ডা. জেসমিন বলেন, 'এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তদন্ত করে দেখতে হবে।'

 

এমএ/আরআর-০৬