শায়েস্তাগঞ্জে শিল্পায়ন : বেড়েছে কর্মসংস্থান, কমেছে দারিদ্র

সৈয়দ হাবিবুর রহমান ডিউক, শায়েস্তাগঞ্জ


নভেম্বর ২৩, ২০২০
০৮:৩০ অপরাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ২৫, ২০২০
০৫:০৬ অপরাহ্ন



শায়েস্তাগঞ্জে শিল্পায়ন : বেড়েছে কর্মসংস্থান, কমেছে দারিদ্র

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা এখন শিল্পনগরী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, স্কয়ার ডেনিমস লিমিটেড, তাফরিদ কটন মিলস, সিপি বাংলাদেশ লিমিটেডের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার অলিপুরে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশেই প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে ওঠায় সারাদেশের সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ রাখতে পারছে প্রতিষ্ঠানগুলো। বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় এর সুফল পাচ্ছেন শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলাসহ হবিগঞ্জবাসী। পুরো উপজেলায় কমেছে বেকারত্ব সমস্যা, স্বাবলম্বী হয়েছেন হাজারো মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অলিপুরে গড়ে ওঠা প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ বিগত ৬ বছরে হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে প্রায় ২২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করেছে। এখানকার উৎপাদিত পণ্য বর্তমানে বিশ্বের ১৪১টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের মতে, এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত লোকবলের ৮০ ভাগই স্থানীয়। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি শায়েস্তাগঞ্জ এলাকায় উন্নত শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণেও কাজ করছে গ্রুপটি। কারখানা সংলগ্ন স্থানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন একটি বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে।

দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ ২০১৪ সালে হবিগঞ্জের ওলিপুরে ২২০ একর এলাকাজুড়ে হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গড়ে তোলে। এ কারখানায় বর্তমানে ফ্রুট ড্রিংক, বেভারেজ, ক্যান্ডি, লিকুইড গ্লুকোজ, বিস্কুট, কনফেকশনারি, ক্যাবল, ফ্যান, মেলামাইন, বাইসাইকেল, এমএস ও জিআই পাইপ, টয়লেট্রিজসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী উৎপাদিত হচ্ছে।

অন্যদিকে, শায়েস্তাগঞ্জের অলিপুরে স্কয়ার গ্রুপের স্কয়ার ডেনিম কারখানাটিতে বর্তমানে এইচঅ্যান্ডএম, নেক্সট, সিঅ্যান্ডএ, স্পিরিটসহ বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের জন্য ডেনিম কাপড় প্রস্তুত করা হচ্ছে। মূলত বিদেশি ক্রেতারা ডেনিম কাপড় পছন্দ করে দেয়। পরে সেই কাপড় বাংলাদেশি পোশাক কারখানায় এসে জিনস প্যান্ট, জ্যাকেট ইত্যাদি তৈরি হয়ে রপ্তানি হয় বিভিন্ন দেশে। সুতার মূল্য সংযোজন বাড়াতেই ২০১৩ সালে ডেনিম কাপড় উৎপাদনের কারখানাটি নির্মাণ শুরু হয়। ২৯৪ বিঘা জমির উপর নির্মিত এই স্কয়ার ডেনিম কারখানা। কারখানা চত্বরেই ৭০ শতাংশ শ্রমিকের জন্য আছে বিনামূল্যে আবাসন ব্যবস্থা। এখন পর্যন্ত কারখানাটিতে স্কয়ার বিনিয়োগ করেছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।

এসব প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ পেয়ে অশিক্ষিত নারী-পুরুষরাও এখন চাকরিজীবী হয়ে উঠছেন। একসময়ের প্রত্যন্ত অঞ্চল এখন ধীরে ধীরে হয়ে উঠছে শিল্পনগরী। শিল্পায়নের সুবাদে এ এলাকার মানুষ চাকরি ছাড়া নানারকম ব্যবসা-বাণিজ্য করেও স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। মালামাল পৌঁছানো, ঠিকাদারী, ওয়েস্টেজ, কাঁচামাল, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সিসহ হরেকরকম ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারছেন স্থানীয়রা। শায়েস্তাগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলে চাকরিরত লোকজন মনোরম পরিবেশে সপরিবারে থাকার জন্য বাসা ভাড়া করে থাকছেন। সেজন্য গ্রামাঞ্চলের মানুষদেরও এখন আয়ের বেশ একটা অংশ আসছে বাড়ি ভাড়া থেকে।

এদিকে কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকায় এলাকার তরুণরা কাজে থাকায় বেকারত্ব যেমন কমেছে, তেমনি তরুণরা বিপথগামীতা থেকে ফিরে আসছে। চুরি, ছিনতাই, মাদক গ্রহণ থেকে তরুণরা বিরত রয়েছে।

অন্যদিকে কয়েক হাজার একর ফসলি জমিতে ইন্ডাস্ট্রি গড়ে ওঠায় কমেছে কৃষির উৎপাদন। কৃষিকাজে সাধারণ মানুষদের অনীহা দেখা যাচ্ছে। কৃষিকাজে বিনিয়োগ না করে মানুষ অন্যখাতে বিনিয়োগ করছেন। জায়গা-জমি বিক্রি করে মানুষ ব্যাংকে নির্দিষ্ট মেয়াদে টাকা রেখে এর লভ্যাংশ নিচ্ছেন। এছাড়া শিল্পায়নের বিকাশ হওয়ায় জমির দাম বেড়েছে শতক পিছু পাঁচ থেকে সাতগুণ। যারা জমি কিনে বিনিয়োগ করেছেন, তারা অনেক লাভবান হয়েছেন। শিল্পায়নের ছোঁয়ায় এলাকায় বেড়েছে কোটিপতিদের সংখ্যা। কেউ জমি বিক্রি করে, কেউ জমি কেনা-বেচার দালালি করে, আবার কেউ কোম্পানিতে ব্যবসা-বাণিজ্য করে লাখপতি থেকে হয়ে গেছেন কোটিপতি। এসব ইন্ড্রাষ্ট্রি দেশের অর্থনীতিতে রাখছে বিরাট ভূমিকা।

এই শিল্পায়ন নিয়ে কথা হয় হবিগঞ্জের সাংসদ মো. আবু জাহিরের সঙ্গে। তিনি সিলেট মিররকে বলেন, 'আমি অসংখ্যবার প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর হবিগঞ্জে বিনিয়োগ করার জন্য জাতীয় সংসদে আহ্বান জানিয়েছি। হবিগঞ্জে প্রচুর পরিমাণে গ্যাস ও বিদুৎ মজুদ রয়েছে, যা ইন্ডাস্ট্রি করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এছাড়া হবিগঞ্জে কৃষি জমির দাম কম- এসব বিষয় আমি সংসদে তুলে ধরার ফলে বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানিগুলো হবিগঞ্জে তাদের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। এতে করে শিল্পায়নের সুফল পাচ্ছে সারাদেশের মানুষ। স্থানীয়রা যেমন চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য করে স্বাবলম্বী হয়েছে, তেমনি অন্য জেলার মানুষেরাও এর সুফল পাচ্ছে। এসব কারখানা দেশের অর্থনীতিতে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান।'

 

এসডি/আরআর-১০