তেলের বাজারে আগুনের উত্তাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক


ডিসেম্বর ০৫, ২০২০
০২:০২ অপরাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ০৫, ২০২০
০২:০২ অপরাহ্ন



তেলের বাজারে আগুনের উত্তাপ
# বাজারে বোতলজাত তেলের সংকট

‘তিন মাস আগে প্যাকেটজাত তেল প্রতি লিটার কেনা যেত ৭৮ টাকা দিয়ে। এখন এই তেলের দাম ১০৫ টাকা। বোতলজাত তেল প্রতিলিটার বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকায়। কিন্তু সেটাও এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সরবরাহ না করায় বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে। বাড়ছে দামও। তেলের বাজারে যেন এখন আগুনের উত্তাপ বইছে।’

সিলেট নগরের ‘চমক বাজার’ ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের স্বত্বাধিকারী ফাহিম আহমদ তেলের বাজার সম্পর্কে এভাবেই সিলেট মিররের কাছে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। কিন্তু কী কারণে তেলের সরবরাহ বন্ধ হলো তার কোনো কারণ তিনি জানাতে পারেননি।

গতকাল শুক্রবার সিলেট নগরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, একই চিত্র। যাদের কাছে কোম্পানির সরবরাহ বেশি ছিল তাদের কাছে এখনও কিছু তেল মজুদ রয়েছে। তবে সেটাও দুই একদিনের বেশি চলার মতো নয়। তারা জানান, কোম্পানি থেকে তেল সরবরাহ না করায় ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে নগরের আম্বরখানা এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, ‘এখন পণ্যের দাম ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। মোড়কে নতুন করে মূল্য লেখা হবে। এ জন্য তেল সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। কিন্তু বিষয়টি গ্রাহকদের কোনোভাবে বোঝানো সম্ভব হচ্ছে না।’

তেলের মতো চালের বাজারও রয়েছে ক্রমাগত বৃদ্ধির চক্রে। গত সপ্তাহে বস্তাপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে চালের দাম। এই সপ্তাহেও বেড়েছে দাম। হালিমা খাতুন নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘গত মাসে মিনিকেট চালের বস্তা ২ হাজার ৩০০ টাকায় কিনলেও এই মাসে তা ২ হাজার ৬০০ টাকায় কিনতে হয়েছে।  

নিত্যদিনের পণ্য তেল ও চালের বাজারে যখন আগুনের উত্তাপ, সবজির বাজারে তখন ক্রেতাদের শুধুই স্বস্তির নিঃশ^াস। টমেটো ছাড়া সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। গত সপ্তাহে দাম কমে যে টমেটো নেমে এসেছিল ৯০ টাকা কেজিতে; সপ্তাহ পার হতেই আবারও ১০ টাকা বেড়ে তিন অংকের ঘরে পৌঁছেছে। তবে বাকি সবজিতে দাম গত সপ্তাহের চেয়ে কিছুটা কমেছে। কয়েকটির আবার দাম অপরিবর্তিতও রয়েছে।

গত সপ্তাহে ৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া সবজিগুলোর অধিকাংশের দাম কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। বেগুনের দামও ১০ টাকা কমে নেমে এসেছে ৪০ টাকায়, ফুলকপি ৩০ টাকা, সিম ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, লেবু ৩০ টাকা হালি ও লাউ ৬০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। তবে সবজি বিক্রেতাদের অনেকে জানান, কেজিতে ৩০ টাকা দাম কমেছে শালগমের। গত সপ্তাহে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও এখন শালগমের দাম নেমে এসেছে ৪০ টাকায়। 

নগরের আম্বরখানা এলাকার সবজি বিক্রেতা আলিম উদ্দিন বলেন, ‘শীতকালে বাজারে মৌসুমী সবজির সরবরাহ বেড়েছে। তাই দাম কমে আসছে। মাসের শেষের দিকে সবজির দাম আরও কমে আসতে পারে। কারণ সবজির সরবরাহ আরও বাড়বে।’

এগুলোর দাম কম হলেও সিলেটের বিখ্যাত ‘সাতকড়া’ বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। নগরের বাজারে এখন তা বিক্রি হচ্ছে হালিপ্রতি ১৫০ টাকা করে। সিলেটে ভ্রমণে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন আহমেদ ফেরার পথে সিলেটের সাতকড়া দেখে কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কদমতলির একটি ভ্রাম্যমাণ বাজারে গিয়ে দাম শুনে তিনি অবাক হয়ে যান। তিনি বলেন, ‘পর্যটন এলাকায় দাম একটু বেশি থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু স্থানীয় কোনো বিখ্যাত পণ্যের দাম এত বেশি! আসলেই অবাক করার মতো বিষয়।

ব্যবসায়ীরা জানান, এখন তো সাতকড়ার মৌসুম নয়। তাই দাম চড়া। এখন পাইকারি বাজারেও দাম বেশি। তাই খুচরায় বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে কয়েকদিন পর সাতকড়ার মৌসুম শুরু হয়ে যাবে। তখন দাম কমে আসবে।’ মৌসুমের সাতকড়া ৫০ টাকার কমেও হালিপ্রতি বিক্রি হয় বলে তিনি জানান।

সিলেটে মাংসের বাজার অপরিবর্তিত রয়েছে। গত সপ্তাহের দামেই কেজি প্রতি গরুর মাংস ৫৫০ টাকা, খাসি ৮০০  টাকা এবং ব্রয়লার মুরগি ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নিত্যপণ্য আলু কেজিতে ৪৬ টাকা, পেঁয়াজ পাকিস্তানি ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, মশুরের ডাল ৬৫ টাকা ও চিনি ৬২ টাকা কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে।  

আরসি-০৬