নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ১৩, ২০২০
০৪:৪১ পূর্বাহ্ন
আপডেট : ডিসেম্বর ১৩, ২০২০
০৫:০৬ পূর্বাহ্ন
আহ্বায়ক কমিটি প্রশ্নে হঠাৎ করেই সিলেট জেলা বিএনপির দুটি পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। উভয়পক্ষই পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছে। একটি পক্ষ করেছে সংবাদ সম্মেলন, অন্য আরেকটি পক্ষ দিয়েছে বিবৃতি। এতে অস্থিরতা চলছে জেলা বিএনপিতে। তৃণমূলে এ নিয়ে নানা ধরনের জল্পনার পাশাপাশি মতবিরোধও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে জেলা বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বে। একই সঙ্গে দানা বাঁধছে সন্দেহ-অবিশ্বাস।
সিলেট জেলা বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একাধিক নেতা বলছেন, বেশ কিছুদিন ধরে বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি ঘিরে জেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে পক্ষে-বিপক্ষে নানা ধরনের আলোচনা চলছে। এ নিয়ে মতবিরোধ ও পাল্টাপাল্টি অবস্থান প্রকাশ পায় গত সোমবার। ওইদিন ২৫ সদস্য বিশিষ্ট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির ৯ জন সদস্য নগরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, এক বছরের বেশি সময়েও সম্মেলন করতে ব্যর্থ হওয়ায় বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দেওয়া প্রয়োজন। অন্যদিকে এ সংবাদ সম্মেলনটি ‘বিপথগামী’ নেতা-কর্মীদের অযৌক্তিক ও সংগঠনবিরোধী কাজ বলে দাবি করে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর বিএনপির সিলেট জেলা কমিটি ভেঙে কেন্দ্র থেকে ২৫ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। আহ্বায়ক করা হয় বিগত কমিটির সহসভাপতি কামরুল হুদা জায়গীরদারকে। এক বছরেরও বেশি সময় আগে গঠন করা ওই আহ্বায়ক কমিটি এখন পর্যন্ত সম্মেলন করে নতুন কমিটি গঠন করতে পারেনি। এ অবস্থায় তৃণমূলসহ নেতৃত্বস্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেকেই দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন।
আহ্বায়ক কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘জেলা বিএনপির আহ্বায়ক দলের কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্তদের নির্দেশনা না মেনে সাবেক সভাপতি-সম্পাদকের নির্দেশ বাস্তবায়ন করে দলের মধ্যে বিভাজন তৈরি করেছেন। এছাড়া দীর্ঘদিনেও দলের সম্মেলন আয়োজন করে নতুন কমিটি বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি গঠন করতে পারেনি। এটা সাংগঠনিক ব্যর্থতা। এ পরিস্থিতিতে বর্তমান কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করে একটি সুন্দর ও সুশৃঙ্খল কাউন্সিলর আয়োজনে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাসহ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। নতুবা সাংগঠনিকভাবে বিএনপি ক্রমশ পিছিয়ে পড়বে।’
এক বছরের বেশি সময়েও সম্মেলন করতে ব্যর্থ হওয়ায় সিলেট জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের দাবিতে গত সোমবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরের একটি রেস্তোরাঁয় বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির ৯ জন সদস্য সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আশিক উদ্দিন। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কাইয়ুম চৌধুরী, আবদুল মান্নান, এমরান আহমদ চৌধুরী, আহমেদুর রহমান চৌধুরী, নাজিম উদ্দিন লস্কর, ইশতিয়াক সিদ্দিকী, হাসান আহমদ পাটোয়ারী ও মাহবুবুল হক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সিলেটে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের এক বছর দুই মাস পার হলেও আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদারের সংগঠনবিরোধী সিদ্ধান্তে সাংগঠনিক কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। জেলা সম্মেলন করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ২১ সদস্যবিশিষ্ট উপজেলা ও পৌর কমিটি গঠন করা হয়েছে সম্পূর্ণ একপেশে পদ্ধতি অবলম্বন করে। কমিটি ঘোষণার পর বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতাদের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল সিলেটে এসে সবার সঙ্গে আলোচনা করে কমিটিগুলোর কার্যক্রম স্থগিত করেন। পরবর্তী সময়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রতিটি কমিটিতে বাদ পড়া ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে সমন্বয় করার নির্দেশনা দিলেও যে সমন্বয় কমিটি করা হয়েছে, সে কমিটির বিষয়েও জেলার আহ্বায়ক কমিটির অধিকাংশ সদস্য অবগত নন। এতে আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে জেলা সম্মেলন ও কাউন্সিল করে নতুন নেতৃত্ব বের করে আনার পথ চিরতরে বন্ধ হয়ে পড়েছে। তৃণমূল থেকে জেলা পর্যন্ত সাংগঠনিক অবস্থাও ভেঙে পড়েছে।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার গত সোমবার জেলা বিএনপির অপর অংশটির সংবাদ সম্মেলনের আগে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠিয়েছেন। এতে তিনি বলেন, ‘কথিত সংবাদ সম্মেলনের সঙ্গে সিলেট জেলা বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। নগরের একটি রেস্তোরাঁয় কতিপয় বিপথগামী নেতা-কর্মী জেলা বিএনপিতে বিভক্তি সৃষ্টি করতে সরকারের ইন্ধনে জেলা বিএনপির ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছেন। অথচ এ ব্যাপারে জেলা বিএনপি কোনো কিছু অবগত নয়। আহ্বায়ক ও আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া বিপথগামী নেতা-কর্মীর জেলা বিএনপির দলীয় ব্যানার ব্যবহারের ভিত্তি নেই।’ এ নিয়ে সাংবাদিক ও দলীয় নেতা-কর্মীদের বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
বিবৃতিতে কামরুল হুদা জায়গীরদার আরও বলেন, ‘জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে জেলার আওতাধীন সকল উপজেলা ও পৌর ইউনিট কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলা ও পৌর কমিটি তাদের আওতাধীন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের কাজ সম্পন্ন করেছে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি একটি সুন্দর ও অর্থবহ কাউন্সিল আয়োজনের লক্ষ্যে কাজ করছে। ত্যাগী ও সক্রিয় নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ণ করে তৃণমূল বিএনপি পুনর্গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দলের এই দুঃসময়ে আওয়ামী সরকারের ইন্ধনে কতিপয় নেতা-কর্মী জেলা বিএনপিতে ভাঙন সৃষ্টি করে দলীয় নেতা-কর্মীদের বিভ্রান্ত করার ষড়যন্ত্র করছে। এর ধারাবাহিকতায় তারা জেলা বিএনপির ব্যানারে নগরে আজ একটি সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। যা দলের গঠনতন্ত্র পরিপন্থী এবং দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ। এ সাংবাদিক সম্মেলনের ব্যাপারে জেলা বিএনপির কোনো নেতা-কর্মীর সম্পর্ক নেই। বিপথগামীদের ব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।’
এএন/বিএ-১১