অনিরাপদ উন্নয়নকাজে ঝুঁকিতে নগরবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক


ডিসেম্বর ১৩, ২০২০
০৬:০০ পূর্বাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ১৩, ২০২০
০৬:০০ পূর্বাহ্ন



অনিরাপদ উন্নয়নকাজে ঝুঁকিতে নগরবাসী

কয়েকটি খুঁটিতে লাল কাপড় বেঁধে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে স্থানটি। ঘেরাও করে রাখা স্থানটিতে নির্মিতব্য অরক্ষিত উন্মুক্ত নালা। উভয়দিকে নালার অংশবিশেষ নির্মাণ করে মাঝখানে কয়েক গজ কাজ না করে ফেলে রাখা হয়েছে। কিছুদূর পর পরই এমন দৃশ্য দেখা গেছে নগরের আম্বরখানা এলাকায়। গত বৃহস্পতিবার সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্মিতব্য নালায় পড়ে কবি ও ছড়াকার আবদুল বাসিত মোহাম্মদের মারা যাওয়ার পরপরই নালা নির্মাণকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে এভাবেই লাল নিশানা সাঁটিয়ে সতর্কতা জারি করা হয়। 

শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর) আম্বরখানা এলাকা ছাড়াও নগরের ২৭টি ওয়ার্ডের অন্তত ৮টি এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সেসব এলাকায় কোনো ধরনের নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণ না করেই নালা-নর্দমার নির্মাণকাজ চলছে। নির্মাণাধীন নালার স্থানে স্থানে খোঁড়াখুঁড়ি করে ফেলে রাখা বিশাল বিশাল গর্ত রয়েছে। এসব গর্তের কোথাও পানি জমে আছে, কোথাও লোহার রড বেরিয়ে রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এসব নির্মাণাধীন নালা-নর্দমার পাশ দিয়েই হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। সামান্য অসাবধান হলেই নালায় পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে চলাচলরত পথচারীরা জানিয়েছেন। 

আম্বরখানা এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন, বেশ কয়েক মাস ধরেই আম্বরখানা এলাকায় সিটি করপোরেশনের উন্নয়নকাজ চলছে। এর অংশ হিসেবে ফুটপাত আর রাস্তা খুঁড়ে ফেলে রাখা হয়েছে অনেকটা বিপজ্জনকভাবে। কোথাও দেওয়া হয়নি কোনো বেষ্টনী। এর ফলে পথচারীরা রাতের অন্ধকারে হাঁটতে গিয়ে অনেক সময় খুঁড়ে রাখা গর্তে পড়ে আহত হচ্ছেন। এ ধরনের অনিরাপদ উন্নয়নকাজে ঝুঁকিতে রয়েছেন স্থানীয়রা। এটি সিটি করপোরেশনের খামখেয়ালিপনা আর দায়িত্বহীনতার প্রকাশ। জনস্বার্থে দ্রুত এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। 

নগরের কুমারপাড়া-শাহী ঈদগাহ রোড এলাকায় গতকাল বিকেলে দেখা গেছে, কয়েকজন শ্রমিক নালা নির্মাণের জন্য মাটি খুঁড়ছেন। মাটি খুঁড়ে তাঁরা মূল রাস্তার এক অংশে ফেলে রাখছেন। 

তবে খোঁড়া অংশে কোনো বেষ্টনী দেওয়া হয়নি। ফলে সন্ধ্যার পর অন্ধকার নেমে এলে ওই খোঁড়াখুঁড়ির অংশে পথচারীদের পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কুমারপাড়া এলাকার বাসিন্দা নাদিম আহমেদ বলেন, ‘কেবল কুমারপাড়া এলাকাই নয়, নগরের আরও কিছু এলাকায় এভাবে অনিরাপদভাবে খোঁড়াখুঁড়ি করে উন্নয়নকাজ করা হচ্ছে। এছাড়াও অনেক এলাকায় কাজও চলছে ধীরগতিতে। ফলে নাগরিক দুর্ভোগ ক্রমশ বাড়ছে। নগরবাসীর নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ চলাচলের স্বার্থে নালা নির্মাণের স্থানে দৃষ্টি আকর্ষক নিশানা কিংবা অস্থায়ী বেষ্টনী দেওয়া উচিত।’

জিন্দাবাজার এলাকায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে সপ্তাহ দুয়েক আগে ফেলে রাখা হয়েছে। মদিনামার্কেট ও সুবিদবাজার এলাকার মূল সড়কে দুটি সুগভীর গর্ত তৈরি করে ফেলে রাখতে দেখা গেছে। একইভাবে শাহী ঈদগাহ, ইলেকট্রিক সাপ্লাই, নাইওরপুল, মজুমদারি, চৌদিদেখি ও দরগাগেট এলাকায়ও নালা প্রশস্তকরণ কাজের ফাঁকে ফাঁকে কিছু কিছু অংশ নির্মাণ করা হয়নি। এতে পথচারীরা নালার উপর পাকা ফুটপাত ধরে হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ গর্তে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন বলে একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন। মজুমদারি এলাকার আফতাব আহমদ নামের ত্রিশোর্ধ্ব এক যুবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মজুমদারি এলাকায় নালা প্রশস্তকরণ এবং নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে এক বছর আগে। অথচ স্থানে স্থানে ফাঁকা অংশ রয়ে গেছে। সেগুলো খুবই বিপজ্জনক। অনেকে এসব ফাঁকা স্থানে পড়ে হাত-পা ভাঙছেন, গুরুতর আহত হচ্ছেন। কোনো ধরনের বেষ্টনী না দিয়ে সম্পূর্ণ অনিরাপদভাবে নালা-নর্দমার নির্মাণকাজ চলার ফলে নগরবাসীকে সারাক্ষণ আশঙ্কা নিয়ে পথ চলতে হচ্ছে। কবি আবদুল বাসিত মোহাম্মদের মৃত্যুর বিষয়টি এই অপরিকল্পিত ও অনিরাপদ উন্নয়নের কারণেই হয়েছে। এর দায় কোনোভাবেই সিটি করপোরেশন এড়াতে পারে না।’

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা সূত্রে জানা গেছে, সিলেট নগরে ৯৭০ কিলোমিটার নালা-নর্দমার মধ্যে মাত্র ৩০০ কিলোমিটার পাকা রয়েছে। এর বাইরে ৬৭০ কিলোমিটারই উন্মুক্ত। বর্তমানে ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৮০ কিলোমিটার নালা-নর্দমা বর্ধিতকরণ, নির্মাণ এবং পুনঃনির্মাণ করা হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট মিররকে বলেন, ‘অরক্ষিত ও অনিরাপদভাবে কোনো উন্নয়নকাজ করা যাবে না, এ বিষয়ে সকল ঠিকাদারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যারা এর অমান্য করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উন্নয়নই শেষ কথা নয়, নগরবাসীর নিরাপত্তাই সবার আগে বড়, সেটা মাথায় রেখেই ঠিকাদারদের কাজ করতে হবে।’

বিএ-০১