মুজিববর্ষের উপহার পেলেন সুনামগঞ্জের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি


ডিসেম্বর ২২, ২০২০
০৯:০৮ অপরাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ২২, ২০২০
০৯:০৮ অপরাহ্ন



মুজিববর্ষের উপহার পেলেন সুনামগঞ্জের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা

সুজিত কুমার দে, কামরুল হাসান, হাফিজুর রহমান সুমন, সুচি দাস, গৌরব দাস, সজিব কুমার দে, হামিম মেহেদী, শিরিনা আক্তার, হাফসা আক্তার ইভাসহ ১৫ জন মেধাবী শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজসহ দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর তারা যখন স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধে উত্তীর্ণ হয়েও ভর্তি হতে পারছিলেন না, তখন তাদের দূরবস্থার কথা শোনে এগিয়ে আসেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ। তিনি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের মতো অন্তত অর্ধশতাধিক মেধাবীকে নগদ টাকা দিয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ করে দেন। পরবর্তীতে তাদেরকে বইসহ পরিবারকেও সরকারিভাবে সহায়তা প্রদান করেন তিনি।

সদ্য সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসকের বদলির খবর পেয়ে আজ মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে তার কার্যালয়ে সপরিবারে ছুটে আসেন বিভিন্ন সময়ে সহায়তাপ্রাপ্ত মেধাবী শিক্ষার্থীরা। তারা অশ্রুসজল ও ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদকে সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা জানান। এ সময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ প্রত্যেককে মুজিববর্ষের উপহার লাল-সবুজ ছাতা, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং আসা-যাওয়ার নগদ সহায়তা দেন। এছাড়া দুই মেধাবী হতদরিদ্র শিক্ষার্থীকে দু'টি সেলাই মেশিন উপহার দেন তিনি। তিনি তাদের গ্রুপের নামকরণ করেন ‘বন্ধন-২০২০’। তাদেরকে একই বন্ধনে থেকে আগামীর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার নির্দেশনা দেন জেলা প্রশাসক।

শাবিপ্রবি'র মেধাবী শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমান সুমন বলেন, 'আমার লেখাপড়া থেমে গিয়েছিল। ডিসি স্যার ডেকে এনে ভর্তির টাকা দিয়েছিলেন। পরে আমার মাকে একটি সেলাই মেশিন ও ঘরের জন্য টিন বরাদ্দ দিয়েছিলেন।'

মেডিকেলের ছাত্রী সুচি দাস বলেন, 'আমার ও আমার ভাইয়ের উচ্চশিক্ষার পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জেলা প্রশাসক স্যার ভর্তির টাকা দিয়ে উচ্চশিক্ষার পথ সুগম করেছেন।'

শাবি শিক্ষার্থী হাফসা আক্তার ইভা জানান, ভর্তি নিয়ে তিনি টেনশনে ছিলেন। পরে জেলা প্রশাসক নগদ টাকা দিয়ে তাকে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দেন।

এভাবে প্রত্যেক শিক্ষার্থী তাদের সহায়তাপ্রাপ্তির কথা তুলে ধরেন। দুই পা নেই মেধাবী শিক্ষার্থী সুজিত কুমার দে’র। তিনিও বিভিন্ন সময়ে জেলা প্রশাসকের সহযোগিতা পেয়ে কৃতজ্ঞতা জানাতে এসেছিলেন। এ সময় তিনি জানান, তার উচ্চশিক্ষার খরচসহ নানা সময়ে সহযোগিতা করেছেন জেলা প্রশাসক। তার মায়ের মৃত্যুর পরও তিনি তাকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছিলেন। এভাবে উপস্থিত ১৫ জন শিক্ষার্থী আবেগাপ্লুত হয়ে তাদের সহায়তাপ্রাপ্তির কথা তোলে ধরেন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ মেধাবী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, 'জাতি গঠনে তোমাদেরকে একই ছাতার নিচে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। তোমরা কখনও জীবনযুদ্ধে হেরে যেও না। যতই কষ্ট হোক থেমে থেকো না। সরকার মেধাবীদের সহায়তা অব্যাহত রাখবে।'

এ সময় তিনি উপস্থিত ১৫ জন মেধাবীর হাতে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী অটোগ্রাফসহ প্রদান করেন। জাতির পিতার আত্মত্যাগের স্মারক এই গ্রন্থটি আরও ৯৯ জন শিক্ষার্থীকে পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তাছাড়া তাদের প্রত্যেককে লাল-সবুজ রঙের মুজিববর্ষের লগো সম্বলিত ছাতা উপহার দেন তিনি।

এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জসিম উদ্দিন, সাংবাদিক শামস শামীম, এ আর জুয়েল প্রমুখ।

 

এসএস/আরআর-১০