সুনামগঞ্জে বড়দিনে খ্রিস্টান পল্লীগুলোতে নেই উৎসবের আমেজ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি


ডিসেম্বর ২৪, ২০২০
০৩:৫৪ অপরাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ২৪, ২০২০
০৩:৫৭ অপরাহ্ন



সুনামগঞ্জে বড়দিনে খ্রিস্টান পল্লীগুলোতে নেই উৎসবের আমেজ

সুনামগঞ্জ সীমান্তের খিস্টানপল্লী গুলোতে বড়দিন উপলক্ষে এবার মহামারি করোনার কারণে উৎসবের আমেজ নেই। 

বিশেষ করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বি হওয়ায় অন্যান্য বছর জাঁকজমক অনুষ্ঠান থাকে। 

কিন্তু এবছর উৎসবপর্বের আচারাদি কমিয়ে কেবল ঘরোয়া প্রার্থনা ও যিশুখ্রিস্টের জন্মদিনে অনাড়ম্বরভাবে তারা কেক কেটে দিবসটি উদযাপন করবেন। 

তারা গীর্জাগুলোতে ২৫ ডিসেম্বর সকালে করোনামুক্তি ও দেশের উন্নতির জন্য বিশেষ প্রার্থনা করবেন।

সুনামগঞ্জ জেলা পরিসংখ্যান অফিস সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের ৬ উপজেলার দুর্গম, পাহাড়ি খানাখন্দ, টিলা ও ঝোপঝাড়ে এখনো বসবাস করে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক (আদিবাসী) জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ হাজার মানুষ। 

এদের মধ্যে গারোদের সংখ্যাই বেশি। তাছাড়া কিছু খাসিয়াও রয়েছে। তারা খ্রিস্টান ধর্ম পালন করেন। 

২০১১ সালের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী জেলায় প্রায় ১ হাজার ৪৬৪ টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি পরিবার খ্রিস্টান ধর্ম পালন করেন। 

তারা প্রতি বছর যিশুখ্রিস্টে জন্মদিন বড়দিন উপলক্ষে উৎসবে মাতেন। প্রতিটি পরিবার এ উপলক্ষে মিলনমেলায় রূপ নেয়। 

বিশেষ আলোকসজ্জা, ক্রিসমাস টি ও সান্তাক্লজের মাধ্যমে সাজানো হয়। তোরণ নির্মাণ করা হয় বিভিন্ন এলাকায়। ২৫ ডিসেম্বরের প্রথম প্রহরেই কীর্তন ও সঙ্গীতের মাধ্যমে উৎসবে মাতেন তারা। 

সকালে থাকে খাবার পর্ব সবাই মিলে মিশে নির্ধারিত বাড়িতে ভোজগ্রহণ করেন। কিন্তু এ বছর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কমিয়ে আনা হয়েছে। 

রাতে কেবল ঘরোয়াভাবে কীর্তন পরিবেশন হবে এবং ২৫ ডিসেম্বর সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ঘরোয়া আয়োজনে খানাপিনা হবে। 

জানা গেছে অন্যান্য বছর নারায়ণতলা, তাহিরপুর সীমান্তের কড়ইগড়া, চানপুর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার গামাইতলা, দোয়ারাবাজার সীমান্তের ঝুমগাওয়ে বড়দিন উপলক্ষে উৎসবে সাজে। আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয় বসতবাড়িতে। 

কিন্তু এবছর উৎসবের ছটা নেই এই পল্লীগুলোতে।

এদিকে খ্রিস্টান সম্প্রদায় যাতে নির্বিঘ্নে তাদের উৎসব পালন করে এ উপলক্ষে প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। গীর্জাগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

ধর্মপাশার বাসিন্দা উন্নয়নকর্মী ইলিমেন্ট হাজং বলেন, ‘শুধু উন্নয়ন-অবকঠামো-সহায়তা থেকে আমরা বঞ্চিতই নয়। আমরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কাছে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়নে অংশিদারিত্ব ও মতামত প্রদানের জন্য যে দাবি জানিয়ে আসছি তারও সুযোগ দেওয়া হয়না আমাদের। আমাদের এলাকার বাঙ্গালি অধ্যুষিত জনপদে যে পরিমাণ অবকাঠামো উন্নয়ন, সহায়তা প্রদান করা হয় তার বিন্দু পরিমাণও আমরা পাইনা। আমরা যুগযুগ ধরে এভাবে রাষ্ট্রের নাগরিক হয়েও বঞ্চিত হচ্ছি।’

সিলেট প্রেসবিটারিয়ান সিনট এর সাধারণ সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ জেলার বিশিষ্ট খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতা শঙ্কর মারাক বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে সারা বিশ্বের জীবধারা এখন থমকে আছে। তাই আমাদের উৎসবও এবার কমিয়ে আনা হয়েছে। আমরা ঘরোয়াভাবে উৎসব পালন করব। করোনা মহামারি থেকে মানবজাতির মুক্তি কামনা করব।’

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল আহাদ বলেন, ‘বড়দিন উপলক্ষে আমরা খিস্ট্রান সম্প্রদায়ের সকল নাগরিকদের শুভেচ্ছা জানাই। তারা যাতে নির্বিগ্নে তাদের আচারাদি পালন করতে পারেন আমরা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বলে দিয়েছি।’

 

এস এস/বি এন-০৪