ধর্মপাশা প্রতিনিধি
জানুয়ারি ১৩, ২০২১
০২:১৩ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জানুয়ারি ১৩, ২০২১
০২:১৩ পূর্বাহ্ন
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও স্থানীয় একটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রী (১৮) স্থানীয় তিন তরুণের উত্যক্তে অতিষ্ঠ হয়ে হারপিক পান করে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে। উক্ত্যক্তের ঘটনায় প্রতিকার ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে গতকাল সোমবার বিকেলে ওই ছাত্রীর মা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ইউএনও'র কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগ ও কলেজছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া ওই ছাত্রীকে দীর্ঘদিন ধরে কলেজে ও প্রাইভেট পড়ায় আসা-যাওয়ার পথে নানাভাবে উক্ত্যক্ত করে আসছিল উপজেলার সদর ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে অনিক (১৮), ধর্মপাশা গ্রামের আলী ইউনুসের ছেলে রিফাত (১৮) ও ধর্মপাশা নতুন পাড়া গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে তোরাগ (১৮)। মাসখানেক আগে উত্যক্তের শিকার ওই ছাত্রীর মা ঘটনাটি তার মেয়ের কাছ থেকে জানতে পেরে ওই তিন তরুণের সঙ্গে দেখা করে তার মেয়েকে বিরক্ত না করার জন্য বলেন। কিন্তু এতে ওই তিন তরুণ ছাত্রীটিকে আরও বেশি করে উত্যক্ত করতে শুরু করে। সর্বশেষ গত ২৮ ডিসেম্বর সকাল ৮টার দিকে ওই ছাত্রী কলেজের সামনের সড়কে গেলে তাকে একা পেয়ে ওই তিন তরুণ তার উদ্দেশে খারাপ ভাষায় কথা বলতে শুরু করে। ভয় পেয়ে ওই ছাত্রী চিৎকার দিলে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসেন এবং ওই তিন তরুণ দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এ অবস্থায় ভুক্তভোগী ছাত্রী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন।
নিজেকে সামলাতে না পেরে গত বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে নিজেদের বসতঘরের টয়লেটে থাকা হারপিক পান করেন তিনি। বিষয়টি বুঝতে পেরে পরিবারের সদস্যরা তাকে সঙ্গে সঙ্গে ধর্মপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে সাময়িক চিকিৎসা দিয়ে সেখানকার চিকিৎসক তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। ওইদিনই তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে দুইদিন ভর্তি থাকার পর চিকিৎসা শেষে গত রবিবার ওই ছাত্রীকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন তার পরিবারের সদস্যরা।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত অনিক, রিফাত ও তোরাগের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তোরাগের বাবা আব্দুল হামিদ বলেন, 'আমার ছেলে কোনো কলেজছাত্রীকে উত্যক্ত করার প্রশ্নই আসে না। তবে এ ঘটনায় অনিক নামে যে ছেলেটার নাম এসেছে সে আমার ছেলের বন্ধু। এ ঘটনার নেপথ্যে যে ঘটনাটি লুকিয়ে আছে, তা নিয়ে কোনো কথা বলা ঠিক হবে না। তবে আমি হলফ করে বলতে পারি অনিকের বন্ধু হওয়ায় আমার ছেলেকে এ ঘটনায় জড়ানো হয়েছে।'
ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা বলেন, 'এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে আমার স্ত্রী সোমবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ করার পর গ্রাম্য মাতব্বরেরা বিষয়টি সামাজিকভাবে মীমাংসা করার জন্য চেষ্টা করছেন।'
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনতাসির হাসান বলেন, 'কলেজছাত্রীকে উত্যক্ত করার অভিযোগটির বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত অভিযোগটি আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে থানার ওসির কাছে পাঠানো হয়েছে।'
ধর্মপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মুঠোফোনে বলেন, 'আমি দাপ্তরিক কাজে সুনামগঞ্জে আছি। এখনও অভিযোগটি আমার হাতে পৌঁছায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
যৌন হয়রানির ঘটনা গ্রাম্য সালিশে মীমাংসা করার কোনো বিধান আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'গ্রাম্য সালিশে এসব অপরাধ শেষ করা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। উত্যক্তের মতো ঘটনাগুলো গ্রাম্য সালিশে শেষ করার কোনো বিধান নেই।'
এসএ/আরআর-০৪