জগন্নাথপুরে করোনার প্রভাবে কমেছে প্রবাসীদের অংশগ্রহণ

আলী আহমদ, জগন্নাথপুর


জানুয়ারি ১৩, ২০২১
০৫:২১ অপরাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ১৩, ২০২১
০৫:২১ অপরাহ্ন



জগন্নাথপুরে করোনার প্রভাবে কমেছে প্রবাসীদের অংশগ্রহণ

সুনামগঞ্জের প্রবাসী অধ্যুষিত উপজেলা জগন্নাথপুরের পৌরসভা নির্বাচনে এবার প্রথমবারের মতো প্রবাসীদের অংশগ্রহণ কমেছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ও দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের কারণে প্রবাসীদের অংশগ্রহণ কমেছে এবং নির্বাচনী প্রচারে তাদের তেমন সরব উপস্থিতি নেই বলে জানা গেছে।

পৌরবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রবাসী অধ্যুষিত এ উপজেলায় স্থানীয় সরকারের নির্বাচন মানেই প্রবাসীদের অংশগ্রহণ। একটি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলায় এখনও ৯ জন জনপ্রতিনিধির ৮ জন যুক্তরাজ্য প্রবাসী।

পৌরবাসী জানান, ১৯৯৯ সালে জগন্নাথপুর পৌরসভার প্রতিষ্ঠাকাল থেকে পৌর নির্বাচনে প্রবাসীদের আধিক্য দেখা দেয়। মেয়র পদে প্রবাসী প্রার্থীর পাশাপাশি সবক'টি নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে কমপক্ষে অর্ধশতাধিক প্রবাসী দেশে এসে প্রচারে সরব থাকতেন। এবার বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রবাসীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। এছাড়া দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় প্রবাসী প্রার্থীর সংখ্যাও কমে গেছে। 

১৯৯৯ সালে জগন্নাথপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুল মুকিতকে পৌর প্রশাসক নিয়োগ করে পৌরসভার কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০০ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম পৌর নির্বাচনে তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুনুর রশীদ হিরন মিয়া পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। একমাস পর তিনি মৃত্যুবরণ করলে উপনির্বাচনে তার ছেলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী মিজানুর রশীদ ভূঁইয়া চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৫ সালের নির্বাচনে জিতে যুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুল মনাফ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১০ সালে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আক্তার হোসেন মেয়র নির্বাচিত হন এবং ২০১৫ সালে আবারও যুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুল মনাফ মেয়র নির্বাচিত হন।

গতবছরের ১১ জানুয়ারি আব্দুল মনাফ মৃত্যুবরণ করলে ১০ অক্টোবর মেয়র পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিন যুক্তরাজ্য প্রবাসী অংশ নেন এবং  যুক্তরাজ্য প্রবাসী মিজানুর রশীদ ভূঁইয়া মেয়র নির্বাচিত হন। দেড়মাসের ব্যবধানে মেয়াদপূর্তিতে আগামী ১৬ জানুয়ারি আবারও পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবার ৫ জন মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তন্মধ্যে দুইজন যুক্তরাজ্য প্রবাসী ও তিনজন প্রবাসী নন।

জগন্নাথপুর উপজেলা নাগরিক ফোরামের যুগ্ম-আহ্বায়ক রুমানুল হক রুমেন জানান, জগন্নাথপুর পৌরসভার নির্বাচনে প্রার্থীরা প্রবাসী বলে বলিয়ান থাকতেন। এবার সেই আধিক্য নেই। প্রবাসী প্রার্থীদের সমর্থনে তাদের আত্মীয়-স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরা দেশে এসে প্রচারে নামতেন। নির্বাচনী প্রচারে কালো টাকার খেলাও জমে উঠতো। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার প্রবাসীরা দেশে আসতে পারছেন না। নেই প্রবাস থেকে আনা টাকার খেলাও।

জগন্নাথপুর পৌর শহরের ইকড়ছই এলাকার বাসিন্দা শিক্ষক সাইফুল ইসলাম জানান, প্রবাসীরা পারিবারিক, সামাজিক ও মানবিক কাজে ভূমিকা রাখেন। তাই নির্বাচনে তাদের প্রভাব থাকে। নির্বাচনকে একটা উৎসব হিসেবে দেখে প্রবাসীরা দল বেঁধে দেশে আসতেন। এবার করোনার কারণে প্রবাসীরা নির্বাচনী প্রচারে নেই।

আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মিজানুর রশীদ ভূঁইয়া জানান, করোনা না হলে তার ভাই, বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন মিলিয়ে কমপক্ষে ১০-১৫ জন প্রবাস থেকে দেশে এসে প্রচারে নামতেন। যুক্তরাজ্যে করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতার কারণে কেউ আসতে পারেননি।

যুক্তরাজ্য প্রবাসী আমজদ আলী শফিক বলেন, 'আমার অনেক নিকটাত্মীয় ইচ্ছে থাকা স্বত্ত্বেও নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে প্রবাস থেকে দেশে আসতে পারছেন না।' 

হবিবপুর গ্রামের বাসিন্দা বিএনপি নেতা আব্দুল মতিন বলেন, 'জগন্নাথপুর পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করার ইচ্ছা নিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে এসেছিলাম। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে নির্বাচন থেকে বিরত রয়েছি।'

 

এএ/আরআর-০২