দক্ষিণ সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
জানুয়ারি ১৪, ২০২১
১০:৫৯ অপরাহ্ন
আপডেট : জানুয়ারি ১৫, ২০২১
০১:১৪ পূর্বাহ্ন
জয়নুদ্দিন
সুনামগঞ্জ জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাক ইউনিয়নে ধামাই বিল জলমহালকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় ১ নিহত এবং ৮ জন আহত হয়েছেন। পৃথক হামলার ঘটনা ঘটেছে আজ বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) ভোর ৬টায় ও সকাল সাড়ে ৮টায়।
এ ঘটনায় আহতদের উদ্ধার করে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে এবং পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনা করে ১০ জনকে আটক করেছে। নিহত ব্যক্তির নাম জয়নুদ্দিন। তিনি তেরহাল গ্রামের মৃত মছদ্দর আলীর ছেলে এবং স্থানীয় তেরহাল আদর্শ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্য।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শিমুলবাক ইউনিয়নের ধামাই বিল জলমহাল দখলকে কেন্দ্র করে তেরহাল আদর্শ মৎস্যজীঈ সমবায় সমিতি ও তেরহাল মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির লোকজনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। তেরহাল আদর্শ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি হাবিবুর রহমান ধামাই বিল জলমহালে দ্বিতীয় বছরে মাছ ধরার সময় প্রতিপক্ষ তেরহাল মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি আলতাব আলীসহ তার সমিতির লোকজন বাধা দেন। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৬টায় তেরহাল মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি আলতাব আলী ও হেলন মিয়াসহ ৪০/৫০ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ধামাই বিলের খলাঘরে অতর্কিতভাবে হামলা চালান। হামলায় তেরহাল আদর্শ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্য তেরহাল গ্রামের মাহমদ আলীর ছেলে মোশারফ মিয়া (৪০), মৃত আব্দুল বারির ছেলে নাজির আহমদ (২৪), সাহেব আলীর ছেলে আশরাফ আলী (৩০), আজিজুর রহমানের ছেলে লিটন মিয়া (৩৭) ও জুয়েল মিয়া (৩৫), আরজ আলীর ছেলে অজুদ মিয়া (২৮), আব্দুল আজিজের ছেলে লিমন মিয়া (২২) ও তালেব আলীর ছেলে দিলোয়ার হোসেন (২৩) আহত হন। তাদেরকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
আহতদের সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় জয়নুদ্দিন মুক্তাখাই গ্রামের মৃত জুনাব আলীর ছেলে নজরুল ইসলামের সঙ্গে তার মোটরসাইকেলযোগে তেরহাল পয়েন্ট থেকে নোয়াখালী বাজারে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের উদ্দেশে রওয়ানা হন। তারা তেরহাল গ্রামের সৌদি প্রবাসী আবেদন আলীর বাড়ির সামনে পৌঁছালে পূর্ব থেকে ওত পেতে থাকা তেরহাল মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্য তেরহাল গ্রামের সুরুজ আলীর ছেলে সৈয়দ আহমদ, ফয়সল আহমদ, নজির আহমদ, বাবুল মিয়া ও আজাদ মিয়া, সাবাজ আলীর ছেলে সেলিম মিয়া, মৃত মনফর আলীর ছেলে আলী হোসেন, মৃত আব্দুল হান্নানের ছেলে সেজলু হক, তাহির আলমের ছেলে আজির উদ্দিন, জাহির উদ্দিন, আব্দুল হেকিমের ছেলে ফয়জুল হক, মৃত ঠাকুরধন মিয়ার ছেলে আপ্তাই মিয়া, আপ্তাই মিয়ার ছেলে ইরশাদ আলী, সুরত মিয়া, হোসেন আহমদ, শহিদ মিয়া ও জাকিরিন এবং শহিদ মিয়ার ছেলে বোরহান মিয়া দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জয়নুদ্দিনকে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন এবং মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করেন। এতে জয়নুদ্দিন মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিক গুরুতর আহত অবস্থায় জয়নুদ্দিনকে উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার ওসি কাজী মোক্তাদির হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তেরহাল মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্য ও তেরহাল গ্রামের বাসিন্দা সাবাজ আলী ছেলে সেলিম মিয়া (২৮), মৃত মনফর আলীর ছেলে আলী হোসেন (৩২) ও আরশাদ আলী (৪৮), মৃত আব্দুল হান্নানের ছেলে মো. সেজলু হক (২৩), তাহির আলমের ছেলে মো. আজির উদ্দিন (৫৫) ও জাহির উদ্দিন (৫০), মৃত আব্দুল হানিফের ছেলে আবু সালেহ (২৪), মৃত এরশাদ আলীর ছেলে আব্দুর রউফ (৫৫), আব্দুল হেকিমের ছেলে ফয়জুল হক (১৯) ও মৃত আক্রম আলীর ছেলে ধন মিয়াকে(৫০) আটক করেছে। পরে আটককৃতদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
এ ঘটনার পর পরই সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হায়াতুন-নবী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।’
এসটি/বিএন-০৭/আরআর-০৫