বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ
জানুয়ারি ১৪, ২০২১
১১:৫৬ অপরাহ্ন
আপডেট : জানুয়ারি ১৫, ২০২১
০১:২৪ পূর্বাহ্ন
ভাঙনে বেহাল বিশ্বম্ভরপুরের ফতেপুর ও তাহিরপুরের আনোয়ারপুর সড়ক
'আব্দুজ জহুর সেতুর মুখ থেকে চালবন্দ পয়েন্ট পর্যন্ত রাস্তাটি খুব বেশি খারাপ। তিন উপজেলার মানুষ এ রাস্তায় চলাচল করেন। তাই এ রাস্তাটি অধিকতর জনগুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে দ্রুত সড়কের কাজ করা দরকার।' কথাগুলো বলছিলেন বিশ্বম্ভরপুর দীগেন্দ্র বর্মণ সরকারি কলেজের প্রভাষক মো. মসিউর রহমান।
শুধু মসিউর রহমানই নন, সড়কে অস্বস্তির কথা জানিয়ে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিশেন্দু রঞ্জন গোস্বামী বলেন, 'সাচনা-সুনামগঞ্জ যোগাযোগের অন্যতম রাস্তাটির অবস্থা শোচনীয়। এ সড়ক দিয়ে রোগী দূরের কথা, ভালো মানুষ গেলেই রোগী হয়ে যায়। দ্বিগুণ সময়ক্ষেপণের সঙ্গে কষ্ট তো আছেই। যত দ্রুত সম্ভব এ সড়কের কাজ করা দরকার।'
সুনামগঞ্জের বেশ কয়েকটি জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক যান চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। গেল চার দফা বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এসব সড়কের। জেলা শহরের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপন করা বিশ্বম্ভরপুর-সুনামগঞ্জ, সাচনা-সুনামগঞ্জ ও দিরাই-শাল্লার ৩টি প্রধান সড়ক ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা সদরের সঙ্গে সম্পৃক্ত অধিকাংশ সড়কে মারাত্মক খানাখন্দ ও ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।
জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুরের অধিকাংশ সড়কের মূল অংশ ভেঙে বের হয়ে এসেছে মাটি। দিরাই-শাল্লার সড়কে আছে ভয়ঙ্কর ভাঙন। এতে যাত্রী ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। ছোটখাটো দুর্ঘটনার পাশাপাশি এসব সড়কে চলাচল করতে গিয়ে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আবার ভাঙাচোরা রাস্তায় কেউ জরুরি রোগী নিয়ে শহরে ছুটতে অনীহা প্রকাশ করছেন। চলাচলে অতিষ্ঠ চালক-যাত্রী উভয়েই এই রাস্তাগুলো দ্রুত মেরামতসহ টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন।
ভাঙনে বেহাল সড়কে চলাচল করতে গিয়ে দেখা যায়, জামালগঞ্জের সাচনা বাজার থেকে আব্দুজ জহুর সেতুর মুখ পর্যন্ত পুরো সড়কের অবস্থা একেবারে নাজুক। সড়কটির প্রায় ৮০ ভাগই ভেঙে গেছে। ৪০ মিনিটের রাস্তায় যাত্রীদের দ্বিগুণ সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। এছাড়া জরাজীর্ণ ওই সড়কের নিয়ামতপুর অংশ থেকে ফতেপুর এবং ফতেপুর-পুরান বারুঙ্কা হয়ে তাহিরপুর উপজেলার আনোয়ারপুর পর্যন্ত সড়কটিও বেহাল দশায় পতিত হয়েছে। সড়কের মাঝখানে বড় বড় ভাঙন ছাড়াও শনি হাওর তীরবর্তী অংশ ভেঙে আবাদী জমিতে রূপ নিয়েছে।
এদিকে, আব্দুজ জহুর সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও মধ্যনগরমুখী সড়কের চালবন্দ পয়েন্ট পর্যন্ত রাস্তাটি দুর্ভোগের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। সড়কের গালা দেওয়া মূল আস্তরণ সরে গিয়ে লক্কড়-ঝক্কড় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এসব সড়ক দিয়ে জীবন বাজি রেখে প্রতিনিয়ত চলাচল করছেন লাখো মানুষ।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, দিরাই-শাল্লা সড়কের অবস্থা ভয়ঙ্কর থেকে আরও বেশি ভয়ঙ্কর। ওই রাস্তার যাত্রীসাধারণ যানবাহনের বদলে হেঁটে চলাচল করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আহত ও অসুস্থ হওয়ার ভয়ে ওই এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই পায়ে হেঁটে গন্তব্যে ছুটছেন। এখানকার কেউ হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত শহরে নিয়ে আসা সম্ভব হয় না। যুগ যুগ ধরে তাদের সড়ক নির্মাণের দাবি কেবল প্রতিশ্রুতির বেড়াজালে বন্দি থেকেছে। কবে এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবেন শাল্লা উপজেলার মানুষ তাও বলা যাচ্ছে না।
যাতায়াতের ভোগান্তি কবে দূর হবে সেই প্রশ্ন রেখে শাল্লা আটগাঁও ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামের মসিউর রহমান জানিয়েছেন, শাল্লা থেকে আনন্দপুর পর্যন্ত নামমাত্র আবুরা সড়ক। এরপর থেকে দিরাই পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা একেবারে করুণ। এ সড়কে ১৫-২০ কিলোমিটার জায়গা আছে যেখানে চলাচল করতে আসা-যাওয়ায় ৪০০ টাকা ভাড়া গুণতে হয়। মোটরসাইকেল ছাড়া আর কোনো যানবাহন নেই সেখানে। জরুরি রোগী হলে তিন চাকার মালবাহী গাড়িতে শুইয়ে তারপর শহরে নিতে হয়।
দিরাইয়ের তাড়ল ইউনিয়নের ডাইয়ারগাঁও গ্রামের অজয় পুরকায়স্থ জানিয়েছেন, দিরাই থেকে তাদের বাড়ি যেতে রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। আর শাল্লা যাওয়ার রাস্তা আরও বেশি ভয়ঙ্কর। এই রাস্তায় মানুষ গাড়িতে চলতে চায় না। কারণ গাড়িতে করে গেলে কোমরসহ শরীরের অন্যান্য স্থানে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। তাই কষ্ট করে হলেও মানুষ হেঁটেই বাড়ি যায়। এসব রাস্তা জরুরিভিত্তিতে নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
মোটর শ্রমিক লীগের সুনামগঞ্জ জেলার সভাপতি ও মোটরসাইকেল চালক মো. শামসুল হুদা চৌধুরী রেলিম বলেন, 'রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। ওই রাস্তায় চলতে গিয়ে চালক ও যাত্রী সবারই মারাত্মক কষ্ট হয়। মাঝে মাঝে দুর্ঘটনাও ঘটছে। কেউ গর্ভবতী নারী নিয়ে শহরে যেতে চাইলে রাস্তায়ই বারোটা বেজে যায়। আমি স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে দাবি জানাই যেন দ্রুত ওই রাস্তাগুলোতে কাজ করা হয়।'
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, 'আপাতত যান চলাচলের উপযোগী করতে সুনামগঞ্জ-সাচনা ও বিশ্বম্ভরপুর সড়কসহ অন্যান্য খারাপ অংশগুলোর টেন্ডার হয়েছে। এছাড়া ওই সড়কে আমরা মেজর খাতে বড় ইস্টিমেটও দিয়েছি। এটা প্রক্রিয়াধীন আছে এবং টেন্ডারকৃত কাজ অচিরেই শুরু হবে।'
সুনামগঞ্জ-২ (সদর-বিশ্বম্ভরপুর) আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ জানিয়েছেন, ব্রিজের পশ্চিমপাড় থেকে চালবন্দ হয়ে তাহিরপুর পর্যন্ত এবং অপর প্রান্তের গৌরারং হয়ে সাচনা বাজার পর্যন্ত রাস্তাটির ব্যাপারে জেলা সওজ'র নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে বৈঠক করে একটা প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। এছাড়া দ্রুত সংস্কারের জন্য সপ্তাহ দুয়েক আগে তিনি যোগাযোগমন্ত্রী ও সচিব বরাবরে ডিও লেটার দিয়ে এসেছেন। এখানে দু'টি কাজের প্রস্তাব করা হয়েছে। একটা স্থায়ীভাবে সড়ক পুনঃসংস্কার এবং আরেকটা ইমার্জেন্সি মেইন্টেন্যান্সের জন্য। এতে তারা তৎপর আছেন এবং দ্রুত কাজের ব্যাপারে আশাবাদী বলে জানিয়েছেন তিনি।
বিআর/আরআর-০১