হাওররক্ষা বাঁধ : অর্থ ছাড় হলেও কাজের খবর নেই

শামস শামীম, সুনামগঞ্জ


জানুয়ারি ২০, ২০২১
০৮:০২ অপরাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ২০, ২০২১
০৮:১১ অপরাহ্ন



হাওররক্ষা বাঁধ : অর্থ ছাড় হলেও কাজের খবর নেই

হাওরপাড়ের ৮৫ ভাগ জমিতে বোরো ধান লাগানো শেষ হয়ে গেলেও এখনও শুরু হয়নি ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ।

সুনামগঞ্জে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে ৭৮৭টি প্রকল্পের একটিতেও এখনও কাজ শুরু হয়নি। তবে কাজ শুরুর আগেই ২০১৭ সালের কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ী বরাদ্দের ২৫ ভাগ অর্থ গত ১৮ জানুয়ারি পাঠানো হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের একমাস পেরিয়ে গেলেও কাজ শুরু না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। যথাসময়ে বাঁধে মাটি না পড়লে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে তাদের অভিযোগ। তাই এসব বাঁধ প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে পারে না। এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ৮৫ ভাগ জমিতে বোরো ধান লাগানো শেষ হয়ে গেছে। তারা মাঠে কোথাও বাঁধ নির্মাণ কাজ লক্ষ্য করেননি বলে জানিয়েছেন।

সুনামগঞ্জ জেলায় হাওরের ফসলরক্ষায় নিয়োজিত কাবিটা মনিটরিং ও বাস্তবায়ন কমিটি সূত্রে জানা গেছে, গত অক্টোবর থেকে গণশুনানি করে কৃষকদের নিয়ে প্রকল্প গ্রহণ করার নির্দেশনা রয়েছে নীতিমালায়। কিন্তু নভেম্বরে প্রাক্কলণে বের হয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। তারা দায়সারা প্রাক্কলণ করে জেলায় ৬১২ কিলোমিটার বাঁধ মেরামত, সংস্কার ও পুনঃনির্মাণের আংশিক প্রতিবেদন দেয় ডিসেম্বরের শেষদিকে। চলতি জানুয়ারি মাসে পূর্ণ প্রতিবেদন প্রদান করে। এতে প্রাথমিক বরাদ্দ ধরা হয় ১২৭ কোটি টাকা। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি অর্থ নয়-ছয় করতে পাউবোর টেকনিক্যাল টিম ভালো ও অক্ষত বাঁধকেও নড়বড়ে দেখিয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়ায় এবার পিআইসির (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলীর নেতৃত্বে স্থানীয় কৃষক ও সুবিধাভোগীদের নিয়ে গণশুনানি করার নির্দেশনা থাকলেও সেখানেও পছন্দের লোকদের পূর্ব থেকে বলে রেখে একতরফা গণশুনানি করে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যার ফলে লাভজনক বাঁধের কাজে মধ্যস্বত্বভোগীরা টাকা খরচ করে ঢুকে পড়েছে। এসব নিয়ে বিভিন্ন উপজেলায় লিখিত অভিযোগও করেছেন প্রকৃত কৃষকরা। অভিযোগে দুর্নীতি, আর্থিক লেনদেনসহ অকৃষক ও মধ্যস্বত্তভোগীরাও প্রকল্পে ঢুকেছে বলে জানা গেছে। তাছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় স্থানীয় সংসদ সদস্যদের নাম ভাঙিয়ে তাদের ঘনিষ্টরাও পিআইসি বাণিজ্য করেছে বলে হাওর আন্দোলনের নেতৃবৃন্দসহ কৃষকরা অভিযোগ করেছেন। এখনও তাদের লোকজন পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রতিদিনই আরও প্রকল্প বৃদ্ধির জন্য ঘোরাঘুরি করছেন বলে কৃষক নেতাদের অভিযোগ।

পাউবো জানিয়েছে, নীতিমালা অনুসারে কাজের আগে ২৫ ভাগ অর্থ অগ্রিম দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা কমিটি উপজেলা কমিটির একাউন্টে ১২৭ কোটি টাকার মধ্যে ২৫ ভাগ অর্থ পাঠিয়ে দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ-খবর নিয়ে বাঁধের কাজ শুরুর কথা শোনা যায়নি। কবে কাজ শুরু হবে জানেন না কৃষকরা।

দেখার হাওরপাড়ের কৃষক আব্দুল আলিম বলেন, ‘আমরার আউরোর হকল জমিনো রুয়া রওয়া শেষ অইগেছে। কিন্তু অখনো বান্দের খবর নাই। খারা খাম পাইছে, কিলা খরব আমরা কুন্তা জানি না। বান্দের খাম পাওয়ার লাগি কিছু মানুষ ইলা সময়ে পাগল অইযায়। টাকা দিয়া বান্দর খামো ডুকতো চায়। অত লাভ ইতাত!’

একই হাওরের জানিগাঁও গ্রামের কৃষক স্বপন মিয়া বলেন, ‘অখনো বান্দ বান্দা অইছে না। অখন বান্দ বান্দা অইলে মাটি বইলনে। আমরা নিচিন্তা থাকলামনে। এখন আল্লার উপরে ভরসা কইরা রইছি। কোন সময়ে যে পাইন্যে নিব ঠিক নাই।’

হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেনরায় বলেন, ‘অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের কারণে এবার হাওরের পানি বিলম্বে নামছে। তারপরও এবার প্রকল্প বাড়ানো হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায়ই প্রকল্প গ্রহণে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। কৃষকরা লিখিত অভিযোগ করেছেন। আমরাও এর প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করেছি। শুনেছি বাঁধের অর্থ ছাড় হয়েছে। কিন্তু কোথাও কাজ শুরুর খবর পাইনি আমরা।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, ‘১৮ জানুয়ারি উপজেলা কমিটির একাউন্টে ১২৭ কোটি টাকা প্রাথমিক বরাদ্দের ২৫ ভাগ অর্থ আগাম ছাড় করা হয়েছে। পিআইসি অনুমোদনের পর কাজ শুরুর তৎপরতা শুরু হয়েছে। আশা করি ২৮ জানুয়ারির মধ্যেই হাওরের বাঁধের কাজ শেষ করতে পারব।’ প্রকল্প গ্রহণ, অনুমোদন ও প্রাক্কলণে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

 

এসএস/আরআর-০১