গ্রাম্য সালিশ না মানায় তিন পরিবারকে সমাজচ্যুত

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি


জানুয়ারি ২৫, ২০২১
০৮:৫২ অপরাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ২৫, ২০২১
০৮:৫২ অপরাহ্ন



গ্রাম্য সালিশ না মানায় তিন পরিবারকে সমাজচ্যুত

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কোরবানপুর গ্রামে ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে গ্রাম্য সালিশ না মানায় ৩টি পরিবারকে সমাজচ্যুত করার অভিযোগ উঠেছে।

আজ সোমবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী কাজল আহমদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার ভাই আকমল হোসেন ও সমাজচ্যুত হওয়া অন্য একটি পরিবারের সদস্য জুবেল আহমদ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কাজল আহমদ বলেন, জায়গা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তার দাদার ভাই তোরাব আলীর নাতি পাখি মিয়ার সঙ্গে বিরোধ চলছিল। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সালিশকারী ও পঞ্চায়েত কমিটিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কাছে গেলে তারা উভয়পক্ষের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা জামানত নিয়ে সালিশের সময় দেন ২০২০ সালের ১৯ জুন। সালিশের দিন জায়গার কাগজপত্র নেন তিনি। সালিশে তিনি কাগজ অনুযায়ী ন্যায়বিচার দাবি করেন। রেকর্ডে এক শতাংশ জায়গার মালিক হলেও গ্রাম্য পঞ্চায়েতে সালিশকারীগণ তাদের জায়গা বুঝিয়ে দেননি। এটি নিয়ে ন্যায়বিচারের জন্য ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে স্বত্ব মামলা (মামলা নম্বর- ৯৭/২০২০ ইংরেজি) দায়ের করেন।

তিনি জানান, আদালতে মামলা করায় সালিশকারীগণ ক্ষিপ্ত হয়ে গত গত ৫ ডিসেম্বর মামলার বিবাদীর বাড়িতে বসে তার পরিবারকে কোরবানপুর গ্রাম থেকে সমাজচ্যুত করেন। সালিশকারীগণ এলাকার লোকদেরকে তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে না যাওয়ার জন্য কঠোরভাবে নির্দেশ দেন। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গেলে তাদের পরিণতিও তার মতো হবে বলে জানান তারা। সমাজচ্যুত করার পর মসজিদের ইমামের বেতন ও মক্তবের জন্য সাপ্তাহিক যে চাঁদা নেওয়া হতো, তাও নিতে নিষেধ করা হয়। এই নিষেধের ফলে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বকেয়া পাওনা কয়েক লাখ টাকা আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য তিনি অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এমনকি তার পরিবারের কেউ মারা গেলে বা অসুস্থ হলে কেউ বাড়িতে যাওয়ার ব্যাপারেও নিষেধ করা হয়।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, সমাজচ্যুত করার কারণে গত ১৪ ডিসেম্বর চরম দুর্ব্যবহার, স্থানীয় মসজিদে নামাজ আদায়ে বিভিন্ন ধরনের বাধা-বিপত্তি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লোকজন না আসা, এমনকি গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে না দেওয়াসহ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা পরিচালনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি, মৌলিক অধিকার হরণ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বিবাদী পাখি মিয়া, পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নজরুল মিয়া, সদস্য চেরাগ মিয়া, চুনু মিয়া, হান্নান মিয়া, কাদির মিয়ার নামোউল্লেখ করে সমাজচ্যুত করার কারণ জানতে চেয়ে একটি লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করেন তিনি। ওই লিগ্যাল নোটিশের কোনো সন্তোষজনক জবাব তারা দেননি। উপরন্তু তাদের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করায় আরও ক্ষিপ্ত হয়ে সালিশকারীগণ বিবাদী পাখির মিয়ার বাড়িতে আবারও বসে তাদেরকে ৫ বছরের জন্য চূড়ান্তভাবে সমাজচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেন।

কাজল আহমদ অভিযোগ করে বলেন, পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নজরুল মিয়া প্রভাবশালী লোক। তার বিরুদ্ধে এলাকায় কেউ কথা বলতে চায় না। তার বিরুদ্ধে কেউ গেলে তাদেরকেও সমাজচ্যুত করা হয়।

কাজল আহমদ আরও বলেন, সালিশে আমাদের জমাকৃত টাকা ও জায়গার কাগজপত্রসমূহ সালিসকারীগণ আমাদের এখনও বুঝিয়ে দেননি। এছাড়াও বর্তমানে আমাদের সন্তানরা মক্তবে গিয়ে কুরআন শিক্ষা নিতে পারছে না সমাজচ্যুৎ হওয়ার কারণে। তাদেরকে সমাজের অন্যান্য শিশুরা হেয় করে কথা বলছে। যার জন্য তারা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা শঙ্কিত।

এ বিষয়ে জানতে গ্রাম্য পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নজরুল মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, 'বর্তমানে আমি ব্যস্ত আছি। এ বিষয়ে কোনো কথা বলব না।' তবে পঞ্চায়েত কমিটির অপর সদস্য চুনু মিয়া সমাজচ্যুত করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

ভূকশিমইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, 'এই পঞ্চায়েত কমিটির মধ্যে সমস্যা আছে। তারা একেক সময় একেক পরিবারকে সমাজচ্যুত করে।'

কুলাউড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, 'বিষয়টি আমি অবগত নই। এরকম হয়ে থাকলে ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। সভ্য সমাজে এরকম সমাজচ্যুতের ঘটনা ঘটতে পারে না। আইন অনুযায়ী কাউকে সমাজচ্যুত করার কোনো বিধান নেই। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

 

এসএইচ/আরআর-০৬