দূষণে বিপন্ন সুরমা

সিলেট মিরর ডেস্ক


জানুয়ারি ২৯, ২০২১
১০:৪১ অপরাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ২৯, ২০২১
১০:৪১ অপরাহ্ন



দূষণে বিপন্ন সুরমা

নানা ধরণের দূষণ আর দখলে অনেক আগে থেকেই ধুঁকছে সিলেটে সুরমা নদী। কলকারখানার বর্জ্য, ময়লা আবর্জনা ফেলে দূষণের প্রবণতা আগে থেকেই এখানে। এরমধ্যে সম্প্র্রতি বছরগুলোতে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে পলিথিন ও প্লাস্টিকের আগ্রাসন। সুরমা নদীকে যেন গিলে ফেলছে প্লাস্টিক আর পলিথিন। ভয়াবহতা বিবেচনায় পুরো পৃথিবী যখন প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার শূন্যে নামিয়ে আনতে মরিয়া সিলেটে সুরমা নদীর তীর তখন ব্যবহৃত পলিথিন আর প্লাস্টিকে মোড়ে যাচ্ছে। সিলেট সিটি করপোরেশন, বিভিন্ন সামাজিক ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বিভিন্ন সময়ে সিলেট নগরে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালালেও এ বিষয়ে নেই কোন উদ্যোগ। 

সিলেটে সুরমা নদী দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে দূষণের শিকার। কল কারখানার বর্জ্য নদীতে ফেলার বিষয়টি তো আছেই, নগরের নালা ও ড্রেনের ময়লা পানিও এসে পড়ছে সুরমায়। সুপারি পচানোর জন্য নদীকে ব্যবহার, মাছের শুটকি শুকাতে নদীর তীর ব্যবহার, দোকানপাট, বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা, সবজি ব্যবসায়ীদের পচা সবজিসহ নানা ময়লা আবর্জনা নদীতে ফেলার অভ্যাস এখানে দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে নগরের উপশহর, মেন্দিবাগ, তোপখানা, চাঁদনীঘাট, ভার্থখলা, টেকনিক্যাল রোড, শেখঘাট, কলাপাড়া, কাজিরবাজার এলাকায় গড়ে উঠা কারখানার ময়লা ফেলার অবধারিত স্থান নদী। বিভিন্ন এলাকায় টয়লেটের পাইপে সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। বর্ষার মৌসুমে নদীতে স্রোত থাকার কারণে এর বিরূপ প্রভাব বেশি টের পাওয়া না গেলেও শুষ্ক মৌসুমে নদীর স্রোত না থাকায় এসব বর্জ্যরে দুর্গন্ধ বিষাক্ত করে তুলে পরিবেশ। তখন সেখানে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়ে। 

এসব দূষণকে ছাপিয়ে এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে পলিথিন আর প্লাস্টিকের আধিক্য। বিশেষ করে নগর এলাকায় নদীর তীরে এ দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। গত সোমবার সিলেট নগরের শেখঘাট এলাকা থেকে কালিঘাট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় সুরমা নদীর তীর ঘুরে দেখা গেছে প্লাস্টিকের আগ্রাসনের ভয়াল চিত্র। নগরের কাজিরবাজার এলাকায় নদী তীরে গেলেই ভোটকা গন্ধ মুহূর্তে নাড়িভুড়ি মুচড়ে দেয়। যতদূর চোখ যায় তীর ও ঢাল বেয়ে নদীর পানি পর্যন্ত পুরো অংশতেই পলিথিন আর প্লাস্টিকের আধিক্যে মাটি চোখে পড়ে না খুব একটা। কোথাও কোথাও এক দেড় ফুট পুরু হয়ে আছে পলিথিনের স্তুপ। ব্যবহৃত পলিথিনের নানা ধরণের শপিং ব্যাগ, বিভিন্ন প্যাকেটজাত দ্রব্যের মোড়ক, প্লাস্টিকের কনটেইনার, কোমল পানিয়ের বোতল, চিপস-চানাচুরসহ নানা খাবারের প্যাকেট, ফলমূলের প্লাস্টিকের ট্রে, প্লাস্টিকের চালের বস্তা, এনার্জি ড্রিংকের বোতল, ক্লিনিক্যাল বর্জ্য, কি নেই সেখানে। কোনো কোনো জায়গায় মাটিতে চাপা পড়া পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতলের অংশবিশেষ বের হয়ে আছে। আবর্জনার স্তুপ আর দুর্গন্ধে আপনার মনে হতেই পারে ভুল করে বুঝি সিলেট সিটি করপোরেশনের ময়লার ভাগাড়ে ঢুকে পড়েছেন। শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় এখন নদী শুকিয়ে স্থানে স্থানে চর জেগে আছে। সেসব চরও পলিথিনের আগ্রাসন থেকে মুক্ত নয়। কোথাও কোথাও নদীর পানিতে ভাসছে পলিথিন, প্লাস্টিক পণ্য ও পলিথিন। 

শুধু কাজির বাজার এলাকার নদী তীরই নয় শেখঘাট, পূর্ব কাজিরবাজার, ঐতিহ্যবাহী কালিঘাট এলাকার সুরমা নদীর তীর ঘুরেও একই দৃশ্য দেখা গেছে। 

সিলেটের পরিবেশবাদী সংগঠন ভ‚মি সন্তান বাংলাদেশের সভাপতি আশরাফুল কবির বলেন, ‘আমরা নানাভাবে কর্মসূচি দিয়ে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করি। কিন্তু স্থানীয় কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে উদাসীনতা রয়েছে।’ সুরমা নদীকে দূষণ থেকে বাঁচাতে যৌথ উদ্যোগ দরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, নদী কমিশনসহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে যৌথভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা আন্দোলন করি। প্রকল্প হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় না।’

এএন/বিএ-১১