সিলেট ও সুনামগঞ্জে আজ আসছে করোনার প্রতিষেধক

নিজস্ব প্রতিবেদক


জানুয়ারি ৩১, ২০২১
০৩:০৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ৩১, ২০২১
০৩:০৩ অপরাহ্ন



সিলেট ও সুনামগঞ্জে আজ আসছে করোনার প্রতিষেধক
# মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে পৌঁছেছে

করোনাভাইরাস প্রতিরোধক ভ্যাকসিন আজ রবিবার সিলেটে আসছে। প্রথম ধাপে সিলেট জেলায় আসবে ২ লাখ ২৮ হাজার ডোজ টিকা। গত শুক্রবার মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে টিকা এসে পৌঁছেছে। সিলেটের সঙ্গে সুনামগঞ্জেও আজ পৌছাবে করোনার টিকা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান সিলেট মিররকে বলেন, ‘করোনার টিকা শনিবার সিলেটে আসার কথা ছিল। কিন্তু সিলেটে দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ না থাকায় শনিবার সিলেটে টিকা না পাঠাতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। কারণ ভ্যাকসিন কোল্ড চেইনে সংরক্ষণ করতে হয়।’ 

আজ রবিবার সিলেটে টিকা আসার কথা বলে তিনি জানান। শুক্রবার মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় করোনার টিকা পৌঁছেছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় প্রথম ধাপে ১৯ কার্টন টিকা আসবে। প্রতি কার্টনে ১ হাজার ২০০ ভায়াল (শিশি) টিকা থাকবে। প্রতি ভায়ালে ১০ ডোজ টিকা থাকবে। সেক্ষেত্রে জেলায় প্রথম ধাপে ২ লাখ ২৮ হাজার ডোজ টিকা আসছে। জরুরি প্রয়োজনে এর মধ্য থেকে কিছু ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করা হতে পারে।

এই বিষয়ে ডা. আনিসুর রহমান বলেন, ‘প্রথম ধাপে সিলেট জেলায় ১৯ কার্টন টিকা আসার কথা। প্রত্যেক কার্টনে ১ হাজার ২০০ ভায়াল থাকবে। প্রতি ভায়ালে থাকবে ১০ ডোজ টিকা।’

জানা গেছে, করোনার ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সিলেট জেলা কমিটি ও সিলেট সিটি করপোরেশনের দুইটি পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইপিআই প্রকল্পের টিকা যে রেফ্রিজারেটরে রয়েছে সেখানেই করোনার ভ্যাকসিন সংরক্ষণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নগর এলাকায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চারটি ও সদর হাসপাতাল ও সুবিধাজনক স্থানে আটটি কেন্দ্রের মাধ্যমে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এছাড়া পুলিশ লাইনস হাসপাতালে একটি ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ে দুইটি টিকাদান কেন্দ্র থাকবে। প্রতিটি টিকাদান কেন্দ্রে থাকবেন দুইজন স্বাস্থ্যকর্মী ও চারজন স্বেচ্ছাসেবক। টিকাদান পরবর্তী পর্যবেক্ষণের জন্য সাত সদস্যের মেডিকেল টিম থাকবে। প্রতিটি কেন্দ্রে  দৈনিক ১০০ থেকে ১৫০ জনকে টিকা দেওয়া হবে।

সিলেট জেলায় টিকা প্রয়োগকারীদের এখনও প্রশিক্ষণ শুরু হয়নি বলে জানিয়েছেন সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল। তিনি সিলেট মিররকে বলেন, ‘রবিবার টিকা আসার কথা। তবে তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। এখনও সরকারিভাবে প্রশিক্ষণের কোনো নির্দেশনাও আসেনি। নির্দেশনা আসার পর প্রশিক্ষণ শুরু হবে।’

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘টিকা পরবর্তী কোনো পাশ্র্বর্প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ কমিটির বিভাগীয় প্রশিক্ষণও শেষ হয়েছে।’ যারা টিকা প্রয়োগ করবেন এ সপ্তাহের মধ্যেই তাদের প্রশিক্ষণ শেষ করতে হবে।

এদিকে, গত শুক্রবার মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় টিকা এসে পৌঁছেছে। হবিগঞ্জে সকাল সাড়ে এগারোটায় ঢাকা থেকে টিকা এসে পৌঁছে। হবিগঞ্জে প্রথম চালানে ৬ কার্টনে ৭২ হাজার ডোজ টিকা এসেছে। এক কার্টনে ১২০০ ভায়াল রয়েছে। এর মাধ্যমে ৭২ হাজার ডোজ টিকা দেওয়া যাবে। ইতোমধ্যে প্রথম ধাপে যারা টিকা পাবেন তাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। যারা টিকা প্রদান করবেন তাদের প্রশিক্ষণ আজ রবিবার থেকে শুরু হবে।

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, মৌলভীবাজারে এসে পৌঁছেছে প্রাণঘাতী করোনা ভ্যাকসিনের ৬০ হাজার ডোজ টিকা। গত শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে বেক্সিমকো ফার্মার প্রতিনিধিরা হিমনিয়ন্ত্রিত গাড়িতে করে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ইপিআই সেন্টারে যথাযথ নিয়ম মেনে ভ্যাকসিন রিসিভিং কমিটির কাছে ৫ কার্টন ভ্যাকসিন হস্তান্তর করেন। এতে মোট ৬ হাজার ভায়েলের মধ্যে ৬০ হাজার ডোজ টিকা রয়েছে বলে জানা গেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ জানান, শীঘ্রই ভ্যাকসিন প্রয়োগের কার্যক্রম শুরু হবে। সিভিল সার্জন সূত্রে জানা যায়, প্রথম দফায় শুধুমাত্র জেলা সদর হাসপাতাল এবং প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকা দেওয়া হবে। জেলা সদর হাসপাতালে ৮টি বুথ থাকবে এবং প্রতিটি উপজেলায় টিকাদানের জন্য ২টি করে বুথ থাকবে। ইতোমধ্যে টিকা প্রয়োগকারীদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে।

আমাদের সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার সেখানে করোনার ভ্যাকসিন এসে পৌঁছার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত আসেনি। আগামী রবিবার আসবে বলে সিলেট স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে।

বৈদ্যুতিক সমস্যার কারণে শুক্রবারের বদলে রবিবার ভ্যাক্সিন আসবে বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. শামসুদ্দিন। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার ভ্যাকসিন আসার কথা ছিল। কিন্তু সিলেট বিভাগে বৈদ্যুতিক সমস্যার কারণে রবিবার পাঠানো হবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।’

সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রাথমিকভাবে ৮ হাজার ৪০০টি ভ্যাক্সিন আসবে। ইতোমধ্যে সরকার নির্ধারিত প্রথম ধাপে যারা টিকা পাবেন তাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলা ইপিআই ভ্যাকসিন কেন্দ্রও ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুজন সিনিয়র স্বাস্থ্য কর্মীকে ভ্যাকসিন প্রয়োগেরও বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ভ্যাকসিন সংরক্ষণ ও প্রয়োগে স্বাস্থ্যবিভাগের কোনো সমস্যা নেই বলে সূত্র জানিয়েছে।

জাতীয় কোভিড-১৯ টিকাদান ও কর্মপরিকল্পনা অনুসারে প্রথম ধাপে টিকা পাওয়া ১৫ ক্যাটাগরির লোকেরা হলেন, সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী, বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, প্রতিরক্ষাকাজে নিয়োজিত বাহিনীর সদস্য, রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কর্মকর্তা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কর্মী, ধর্মীয় প্রতিনিধি, মরদেহ সৎকারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তি, জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি, নৌ-রেল-বিমানবন্দরে কর্মরত ব্যক্তি, মন্ত্রণালয় থেকে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সরকারি কার্যালয়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী।

এনএইচ/আরসি-০৩